bibidho-akale-otithi

অকালে অতিথি
রম্যরচনা
কল্যানী মিত্র ঘোষ

 

ক্যালেন্ডার, ঘড়ি, ডায়েরি, অ্যালার্ম সব কিছু থাকা এবং ব্যবহার করা সত্ত্বেও মানুষ কোনো জায়গায় পৌঁছতে ভুল করে অথবা দেরী করে। আমাদের পরিবারের কথাই ধরা যাক, আজ অবধি কোনো অনুষ্ঠানে আমরা নির্ধারিত সময়ে পৌঁছতে পারলাম না, কেমন যেন ঠিক বেরোনোর সময়েই পরিবারের প্রতিটি সদস্য গড়িমসি করতে থাকে আর‌ মিলিটারি বাবার আদর্শে বেড়ে ওঠা অসহায় আমি অস্থির হয়ে পায়চারি করতে থাকি।

আমরা থাকি আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে। বাঙালি যেখানেই যাক ঠিক একটা নিজেদের গোষ্ঠী গড়ে তুলবে আর তাতে বছরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুজো আচ্চা লেগেই থাকবে। এছাড়া এই প্রবাসী ভারতীয়রা তাদের বাড়িতে ও ভারতে ফেলে আসা নানাবিধ ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিখুঁত ভাবে পালন করে থাকে। লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, সরস্বতী পুজো, সত্যনারায়ণ পুজো, হোলি, দীপাবলি সব।

আমাদের বাড়িতে পুজো খুব একটা হয় না কিন্তু নিমন্ত্রণ পেলে সেটা সানন্দে রক্ষা করি এবং বলাই বাহুল্য পুজোর সঙ্গে পেট পুজোর আয়োজনও বেশ ঘটা করেই হয়। স্থানীয় একটি মন্দিরের সাহেবপুরোহিত এই সমস্ত ভারতীয়দের বাড়ি এসে সংস্কৃত মন্ত্রপাঠ সহ পুজো সুসম্পন্ন করেন। ওঁকে মূল্য ধরে দিলেই উনি যাবতীয় পুজোর সরঞ্জাম ও ঠাকুরের মূর্তিসহ এসে উপস্থিত হন। এছাড়া অন্য আরেকটি শিব বিষ্ণু মন্দিরের দক্ষিণ ভারতীয় পুরোহিতরাও বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুজো সম্পন্ন করেন। এই রকম একটি অনুষ্ঠানে আমি গেছি, পরিবারটি তেলেগু সম্প্রদায়ভুক্ত, তাদের গৃহপ্রবেশ উপলক্ষে নারায়ণ পুজোর আয়োজন করেছে। ঠাকুরমশাই নারায়ণ শিলাসহ ঠিক সময়ে এসে উপস্থিত হলেন। পুজো শুরু করার আগে উনি গৃহস্বামীকে প্রশ্ন করেন, হিন্দিতে, “আচ্ছা বলুন তো এই যে আমরা সংকল্প করবো বলি, এর অর্থ কী?”

তিনি মাথা চুলকে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন, ইতিমধ্যে কয়েকজন অতিথি এসে গেছেন (আমিও তাদের মধ্যে একজন) তাঁদের সামনে এই পড়া ধরার জন্য তিনি মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না। এদিক ওদিক তাকিয়ে বোকা বোকা মুখ করে হাসতে লাগলেন। পুরোহিত বিজয়ীর মতো হেসে এ বিষয়ে জ্ঞান বিতরণ করতে শুরু করলেন।

পুজোর জন্য সময় ঠিক করা হয়েছিল দুপুর বারোটা, প্রথমে হোম হবে তারপর পুজো, আরতি, অঞ্জলী এবং শেষে ঘট বিসর্জন। গৃহস্বামী জানেন আমন্ত্রিত সকলেই ভারতীয় এবং তাঁদের ঘড়ি অন্য নিয়মে চলে তাই তিনি ইমেইলে সকলকে এগারোটার সময় আসতে বলেছিলেন। আমি ও অন্য দুটি পরিবার যাঁরা ঘড়িকে মর্যাদা দিয়ে থাকি তাঁরা শুধু উপস্থিত। পুজো চলতে থাকল, বেলা দেড়টা নাগাদ অঞ্জলী দেওয়ার সময় এক এক করে নিমন্ত্রিত সকলে এসে উপস্থিত হলেন, হলঘর ভরে গেল। এত লোকজন দেখে পুরোহিত খুব চনমন করে উঠলেন, জ্ঞান বিতরণ করার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি প্রত্যেককে আলাদা করে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন, কখনো তা বেদ সংক্রান্ত কখনও বা কোনো ধর্মীয় আচার বিষয়ক। বাবা মাকে নিরুত্তর দেখে ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা বেশ মজা পেতে লাগল। অতিথিরা মোটামুটি ভয়ে সিঁটিয়ে গেলেন এরপর কার উদ্দেশ্যে প্রশ্নবাণ নিক্ষিপ্ত হবে এই ভয়ে। অনেকেই কোনো ছুতো করে গুটি গুটি পায়ে পূজাস্থল ছেড়ে হলের লাগোয়া ডাইনিং এরিয়াতে চলে গেলেন। আনন্দ উৎসব ক্রমশঃ পরীক্ষার হলে পরিণত হলো। মেয়েরা অনেকেই পুরোহিতের সঙ্গে শুভদৃষ্টি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় চোখ বুঁজে ঈশ্বরের মূর্তি ধ্যান করতে লাগলেন।ইতিমধ্যে আমি একটা কমন প্রশ্ন পেয়ে মনে মনে “একে চন্দ্র দুইয়ে পক্ষ” কে ধন্যবাদ জানিয়ে হাত তুললাম, বলে দিলাম চারটি বেদ। আজকাল দক্ষিণ ভারতীয় মা বাবারা তাঁদের পুত্রের নাম অথর্ব রাখছেন, উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে অন্ততপক্ষে তিনটি শিশু ও কিশোর অথর্ব। আমার আবার অথর্ব শুনলেই পঙ্গু মনে আসে প্রথমে। তারপর বেদ, কিন্তু সে কথা তো আর স্নেহময় পিতা মাতাকে বলতে পারিনা! যাইহোক হয়তো এই প্রশ্নটি তাঁদের কাছেও কমন হতো কিন্তু আমি আগেই পাশ করে গেলাম।

সব খারাপ সময় একদিন শেষ হয় তাই এই প্রশ্নোত্তর পর্বও শেষ হলো, পুরোহিত মশাই মধ্যাহ্নভোজ পরম তৃপ্তি সহকারে সম্পন্ন করলেন। তিনি বিদায় নেওয়ার পর আমরা অতিথিরা নানাবিধ উপাদেয় পদের ওপর মোটামুটি ঝাঁপিয়ে পড়লাম, মাধ্যমিক পরীক্ষার খাঁড়া মাথার ওপর থেকে নেমে গেলে যেমন আনন্দ হয় ঠিক সেই রকম নির্ভার মনে হতে লাগল।

বাড়ি ফিরে গৃহকর্তার সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, উনি বললেন এই জন্যই সময় মতো কোথাও যেতে নেই। উনি নিজে সেটা ভীষণ ভাবে মেনে চলেন। কোনো অনুষ্ঠানে বেরোবার সময় সাংঘাতিক অশান্তি হয়ে যায় শুধু আমি সময় মতো পৌঁছতে চাই বলে। যদি সন্ধ্যে সাতটায় কেউ ডিনারে ডেকে থাকেন তাহলে আমি অন্ততপক্ষে সাড়ে সাতটার মধ্যে পৌঁছে যাই কিন্তু গিয়ে দেখি বাড়ি ফাঁকা, গৃহকর্ত্রী তখন স্নানঘরে গান করছেন, কারণ তিনিও জানেন সাড়ে আটটার আগে কেউ আসবে না। পরিবারে আমি হয়ে যাই ভিলেন।

আরেকবার মধ্যাহ্ন ভোজের আমন্ত্রণ পেয়ে সময় মতো পৌঁছে বিকেল চারটের সময় খাবার পেয়েছিলাম। এটাই এখানে ভারতীয়দের দস্তুর, তাই আমি ছাড়া এই সময় নিয়ে কেউ খুব একটা মাথা ঘামায় না।

আমি একবার আমাদের এক ভারতীয় প্রতিবেশীকে সপরিবারে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সেটা ছিল শনিবার। অফিসে খুব কাজ পড়ে যাওয়ায় কর্তাকে বারোটা নাগাদ একটু অফিসে যেতে হবে। নইলে এদেশে শনি রবি ছুটি থাকে। আমি সকাল থেকেই রান্নাবান্না সেরে রাখছি। আমি আবার অতিথি আসার আগে সব কিছু গুছিয়ে একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে তাদের জন্য অপেক্ষা করি। যদিও ব্যতিক্রমী দু’একজন ছাড়া কেউই ঠিক সময়ে আসেন না। তিন রকম পদ এবং দুটি মিষ্টি তৈরি করা শেষ। ভাজাভুজি সন্ধেবেলা ওঁরা এলেই শুরু করব। হঠাৎ দরজায় বেল। কর্তা অফিস বেরোচ্ছিলেন তাই তিনিই দরজা খুললেন, দেখি ওই যাঁদের রাত্রে ডেকেছি তাঁরা সপরিবারে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে। কর্তা ভ্যাবাচ্যাকা, আমি মাথা চুলকোচ্ছি, আমি কী তাহলে ভুল বলেছি ওঁদের! ওঁরাও বুঝতে পারছেন না ওঁদের দেখে আমরা স্বামী স্ত্রী উচ্ছ্বসিত না হয়ে পরস্পরের মুখ চাওয়াচায়ি কেন করছি আর অতিথি আসবে জেনেও গৃহকর্তা কেন অফিসের পোশাকে।

আমি সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ওঁদের ভেতরে এনে বসাই। পরিবারের গৃহবধূটি আমার ঘনিষ্ট বন্ধু, তার শাশুড়িমাও সঙ্গে এসেছেন। আমি ওকে ফিসফিস করে বলি, “আমি তোমাকে ডিনারের কথা বলেছিলাম না?”

সে চোখ বিস্ফারিত করে বলে ওঠে, “হায় রাম, ম্যায় তো ভুলই গয়ি! সুনো জি, আজ ডিনার কা ইনভিটেশন থা …”

ব্যাস ওর কর্তা ও শাশুড়ি মা অপ্রস্তুতের এক শেষ। এদিকে আমার কর্তা আমার দিকে বজ্রদৃষ্টি হেনে নিমন্ত্রণ করতে আমিই কিছু ভুল করেছি এই ভুল ধারণা নিয়েই অফিসে বেরিয়ে গেলেন। বান্ধবীর কর্তাটিকে কিছুতেই আটকে রাখতে পারি না, বলছেন ওঁরা হোটেলে খেতে যাবেন। ভাগ্যিস বেশিরভাগ রান্নাই আমার হয়ে গেছিল তাই একরকম জোর করেই ওঁদের খেয়ে যেতে রাজি করাই। বেচারারা খেতে খেতে বারম্বার দুঃখ প্রকাশ করতে লাগলেন। বন্ধুটি তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যায় প্রায়।

পরবর্তীতে এই পরিবারটির‌ সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে যায় এবং তা দীর্ঘস্থায়ী হয়। একবার আমাকে ফোন করে বন্ধুটির স্বামী বলেছিলেন, “ম্যায় দরোয়াজে পর খাড়া হুঁ, সীমা নে মিঠাই ভেজি হ্যায়।”

আমি ফোন হাতে নিয়েই দরজা খুলতে দৌড়ই। সীমার রান্নার হাতটি জব্বর। দরজা খুলে দেখি শুনশান, কেউ কোত্থাও নেই। একটু বাইরেটা বেরিয়ে দেখে এলাম ওদের গাড়িটা দূরে কোথাও পার্ক করেছে কিনা, কিন্তু কোথাও দেখতে পেলাম না। যাহ আমার ঠিকানা ভুলে গেল নাকি? তড়িঘড়ি ফোন লাগাই, “কাঁহা হো, ম্যায় তো দরওয়াজে পে …”

ওপাশে স্বামী স্ত্রীর অট্টহাস্য ভেসে আসে, “ক্যালেন্ডার দেখো জরা!”

মাথা থেকে বেরিয়ে গেছিল যে সেদিন পয়লা এপ্রিল। তারপর অবশ্য সন্ধেবেলা ওরা আমার জন্য মুখরোচক খাবার বানিয়ে এনে কলিং বেল টিপছিল আর আমি ওরা দাঁড়িয়ে আছে দেখেও ভয়ে দরজা খুলছিলাম না। তারপর হাতের বাটিটা খুলে দেখাতে বিশ্বাস করলাম। আমার রাঙাকাকা তো এক পাথর ভর্তি প্রেশার কুকার এনে আমার আরেক কাকিমাকে দিয়ে বলেছিল, “নে ধর, তোর রাঙাবৌদি সকাল থেকে তোদের জন্য মাংস রান্না করেছে, ধর খুব ভারী!”

ছোট কাকিমা ওমনি শশব্যস্ত হয়ে, ‘এত কেন এনেছেন রাঙা দা ….’ বলতে বলতে যেই হাত বাড়িয়ে কুকারটা ধরেছিল তৎক্ষণাৎ রাঙা কাকা “এপ্রিল ফুল” বলে চেঁচিয়ে আমাদের পিলে চমকে দিয়েছিল।

এই গত মাসে আমার বাঙালি প্রতিবেশী ঠিক করল ওর বাড়িতে দোল খেলার আয়োজন করবে। আরও কয়েকটি বাঙালি পরিবার ও আমাদের আমন্ত্রণ জানাল। আমি না করে দিলাম নানাবিধ ব্যস্ততার কারণে। তারপর ওদেরও দোল খেলার দিন পেছোতে লাগল। আরও দিন দশেক পর মেয়েটি আমাকে ফোন করে বলল, “উইকেন্ডে চলে এসো, তখন ব্যস্ত ছিলে, এখন আর না বললে চলবে না।”

আমিও ভাবলাম ঠিক আছে বাড়ির পাশেই যখন, যাবো তাহলে। ওদের এই হোলির জন্য একটা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপও ছিল, সেখানে মেয়েটি আমাকে ঢুকিয়ে নিল। পরে ঢোকার জন্য আমি আগের মেসেজ পড়তে পারিনি তাই ওরা আমাকে জানিয়ে দিল কে কী খাবার বানিয়ে নিয়ে যাবে। মেনু শুনে জিভ দিয়ে জল গড়াতে লাগল। ফুচকা, পাওভাজি, চিকেন রোল, ভেজিটেবল চপ, মিষ্টি। আমি তখন বললাম কিমা বিরিয়ানি করে নিয়ে যাবো।

শনিবার অর্থাৎ উইকেন্ডে সকাল সকাল উঠে রান্না সেরে ফেললাম, খেতে মন্দ হয়নি। কর্তা‌ এবং কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দুজনকেই শাসিয়ে রাখলাম যে এই পার্টিতে মোটেই দেরি করলে চলবে না। দুজনেই বাধ্য ছেলের মতো ঘাড় নাড়ল, মনে হয় মেনুর প্রভাবেই। আমি মেয়েকে নিয়ে আগে রওনা দিলাম একটু সাহায্য করব এই অভিপ্রায়ে। তার আগে গ্রুপে জেনে নিয়েছিলাম মেয়েরাকে কী পরছে, ওরা লিখল, শাড়ি। তারপর জিজ্ঞেস করেছিলাম,”সত্যি করে বলো তোমরা ঠিক কটার সময় আসবে সেই বুঝে বেরোবো।‌” অনেকেই লিখল সাড়ে বারোটা, পৌনে একটা। বাহ, তাহলে তো ঠিকই আছে। আমি কন্যাকে নিয়ে পাক্কা সাড়ে বারোটায় মেয়েটির বাড়ি কড়া নাড়লাম। হাতে বিরিয়ানির পাত্র, গন্ধে নিজেরই খিদে পেয়ে যাচ্ছে। দেখলাম কোনো গাড়ি পার্ক করা নেই। গৃহস্বামী দরজা খুলে আমাকে দেখে হতবাক, “একি! আজকে তো পার্টি নয়!”

আমি ওকে প্রায় ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বীরদর্পে ওরই বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়লাম, “এক তারিখ আসেনি বাবা, এখন এপ্রিল ফুল করলে হবে না। এটা কোথায় রাখবো বলো”।

আমার মেয়ে কেমন যেন পাথর হয়ে গেছে। ছেলেটি ওর বউকে ডাকাডাকি শুরু করল। দেখলাম সারা বাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে আছে। মেয়েটি সদ্য স্নান সেরে মাথায় তোয়ালে জড়িয়ে বেরিয়ে আমাকে দেখে গালে হাত দিয়ে স্ট্যাচু হয়ে গেল, “তুমি আমাদের মেসেজ ফলো করোনি? আমি কাল রাতে লিখলাম যে রবিবার চলে এসো তাড়াতাড়ি?”

আমার তখন ধরণী দ্বিধা হও দশা। উইকেন্ড বলতে আমি শনিবার ভেবে নিয়েছি, মেয়েটির ওই মেসেজটি চোখ এড়িয়ে গেছে।আর সকালের মেসেজগুলো আমি সব শনিবার ভেবেই করেছি অন্যরা রবিবারের কথা বলছি ভেবেই উত্তর দিয়েছে।

মেয়ে আস্তে করে বলল, “মা বাড়ি চলো”।

 



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *