ফিচার
সুজন আরিফ

বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের হিরন্ময় ফ্রেমে যে ক’জন প্রতিভাবান শিল্পী স্বতন্ত্র অভিনয়ের দ্যুতি দিয়ে দীর্ঘদিন রুপালী পর্দায় বর্ণিল আলো ছড়িয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন আকবর হোসেন পাঠান, এদেশের মানুষের কাছে যিনি ফারুক নামেই সমধিক পরিচিত। প্রকৃতির অপার রুপলাবণ্যে ভরা এই জনপদের মানুষের কাছে পরম আনন্দের ঠিকানা হলো আবহমান বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত আঁকাবাকা মেঠোপথ। কখনো নদীর পাড় ঘেঁষে বয়ে গেছে এ পথ আবার কখনো-বা অনাবিল সবুজের বুক চিরে এগিয়ে গেছে এই পথ। যে পথে নির্ভয়ে- নিঃসঙ্কোচে হেঁটে যায় এ মাটির উদাসী সন্তানেরা। সিনেমার রূপালী পর্দায় ফারুকও যেন সেসব সন্তানদেরই প্রতিনিধি, যাদের চোখে ধুলিউড়া কোনো যান্ত্রিক শহরের স্বপ্ন থাকে না। থাকে না প্রাণহীন কোনো আলোর ইশারা, বাংলার মাটি আর বাংলার জলেই তাদের কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা। ক্যারিয়ার জুড়ে অভিনীত অধিকাংশ ছবিতে গ্রাম-বাংলার এই চিরচেনা আবহেই তাই ফারুকের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। ছবিগুলোতে তাঁর অনবদ্য অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক কিংবদন্তিতে পরিণত হয়ে গেছে। কখনও সহজসরল গ্রাম্য প্রেমিক শিমুল, কখনো-বা সুজন কিংবা নয়ন হয়ে পর্দায় এসেছেন। কথা বলেছেন, হেসেছেন, হাসিয়েছেন, কেঁদেছেন এবং কাঁদিয়েছেন চিরায়ত বাঙালী রূপেই।
বাংলা চলচ্চিত্রের মিয়া ভাই নামে খ্যাত নায়ক ফারুকের সেলুলয়েড জীবন শুরু হয় ১৯৭১ সালে এইচ আকবর পরিচালিত নায়িকা কবরীর বিপরীতে ‘জলছবি’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই নিজের স্বতন্ত্র অভিনয় প্রতিভার জানান দিতে সক্ষম হন। তাঁর সহজাত অভিনয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন চলচ্চিত্রের বিখ্যাত সব পরিচালকেরা। চাষী নজরুল ইসলাম, খান আতাউর রহমান, আবদুল্লাহ আল মামুন, নারায়ণ ঘোষ মিতা, তমিজ উদ্দিন রিজভী, নূর হোসেন বলাই, আজমল হুদা মিঠু, এ জে মিন্টু, শিবলী সাদিক, মতিন রহমান, সুভাস সোম, ইবনে মিজান, ফজল আহমেদ বেনজির, আজিজুর রহমান, শেখ নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন, মহিউদ্দিন ফারুক, জহিরুল হক, দিলীপ সোম, দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, স্বপন সাহা, জাকির হোসেন রাজু, বাদল খন্দকারের মতো পরীক্ষিত নির্মাতারা ফারুকের অভিনয় ক্ষমতায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে নিয়ে ধারাবাহিকভাবে ছবি নির্মাণ করতে থাকেন। ফারুকও সহজাত অভিনয় কুশলতায় এসব তুখোড় পরিচালকদের মন জয় করতে সক্ষম হন। অবুঝ প্রেমিক, প্রতিবাদী যুবক কিংবা অধিকার আদায়ের আন্দোলনের একনিষ্ঠ কর্মীসহ বিভিন্ন চরিত্রে অনবদ্য রূপদান করে ফারুক নিজেই নিজেকে একটি চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে পরিণত করেন। ফলে সদ্য স্বাধীনতা লাভ করা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র মাধ্যমটি নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। এসময়ে ফারুক অসংখ্য কালজয়ী চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে সমকালীন প্রজন্মের জন্য দেশ ও মাতৃকার এক বাস্তব অধ্যায় ফুটিয়ে তোলেন। যে অধ্যায়ে যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশের চিত্র এবং বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্যের নিখুঁত রূপায়ণ দেখা যায়।
১৯৪৮ সালে মানিকগঞ্জের ঘিওরে জন্ম নেয়া নায়ক ফারুক অভিনয় জীবনে নানামুখী চরিত্রে রূপদান করেছেন। তাঁর অভিনীত অসংখ্য ছবির মধ্যে অধিকাংশই সফলতার স্বাক্ষর রেখেছে। ছবিগুলো একইসাথে দর্শক ও বোদ্ধাদের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছে। ঢাকাই সিনেমার পাতায় যা এক অনন্য উদাহরণ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন নিঃসন্দেহে উনিশশো একাত্তর সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ। তিরিশ লক্ষ প্রাণ আর দুই লক্ষ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ যুদ্ধজয় বাঙালির সুমহান চেতনার বাতিঘর। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তিসনদ ঐতিহাসিক ছয়দফার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে তরুণ ফারুক একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। অভিনয় এবং ব্যক্তিজীবনেও ফারুক আমৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখেছেন। তাই মুক্তিযুদ্ধকে উপজীব্য করে নির্মিত একাধিক সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। এক্ষেত্রে খান আতাউর রহমান পরিচালিত ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “আবার তোরা মানুষ হ” ছবিটির কথা উল্লেখ করা যায়। ছবিতে ফারুককে একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও প্রকৃত এক মানবহিতৈষীর চরিত্রে দেখা যায়, যিনি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের সমাজিক ও রাজনৈতিক অনাচার থেকে মুক্তির জন্য অস্ত্র জমা না দিয়ে নতুন এক যুদ্ধে শামিল হন। এই যুদ্ধ সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশকে পুনর্গঠনের। ছবিটিতে ফারুকের অনবদ্য অভিনয় সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। ফারক অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের কাহিনি নির্ভর অন্যান্য ছবিগুলোর মধ্যে নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত “আলোর মিছিল” অন্যতম। রাশেদ নামে ছোট্ট একটি চরিত্র হলেও ছবিটি ফারুকের চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করেছে। এখানে খান আতাউর রহমান পরিচালিত আরও একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সিনেমার কথা বলা যায়, ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটির নাম “এখনও অনেক রাত”। ‘জাহিদ’ নামক চরিত্রের মাধ্যমে এ ছবিতেও ফারুক অনবদ্য অভিনয় প্রদর্শন করেছেন। এখানে রাত বলতে দুঃসময়কে বোঝানো হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু আমাদের কাঙ্ক্ষিত সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি আজও নিশ্চিত হয়নি। ছবিটিতে জাহিদ রূপে ফারুক ভরাট গলায় যখন বলে ওঠেন- “এখনও অনেক রাত, এখনও অনেক রাত।” দর্শকও তখন বিমোহিত না হয়ে পারে না। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একজন ফারুকের অবদান বিবেচনার জন্য এই ছবিটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পারিবারিক ও সামাজিক গল্পের সেন্টিমেন্টাল ছবিতেও ফারুকের অসামান্য অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব ছবিতে তাঁকে রাগী ও প্রতিবাদী চরিত্রে দেখা যায়। সমাজের বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলতে সর্বদাই সচেতন ফারুক। সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে উপজীব্য অসংখ্য ছবিতে তাঁর অভিনয় আজও বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকদের মনে গেঁথে আছে। ১৯৭৫ সালের ২২ আগস্ট মুক্তিপ্রাপ্ত “লাঠিয়াল” ঠিক এমনই একটি ছবি। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ছবিটিতে ‘দুখু’ নামে গ্রামের একজন প্রতিবাদী যুবকের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন। অত্যাচারী মোড়লের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে যায় দুখু রূপী ফারুক। নদীতে জেগে ওঠা নতুন চরের ওপর দৃষ্টি পড়ে মোড়লের, যেকোনো উপায়ে কেড়ে নিতে চায় এ চর। চরের দখল নিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দুখু। জীবন বাজী রেখে মোড়লের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। একসময় মোড়ল পরাজিত হতে বাধ্য হয়, ফলে চরের ওপর সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু প্রতিবাদী যুবকের চরিত্রেই নয়, একজন প্রেমিক হিসেবেও এ ছবিতে ফারুক অনবদ্য অভিনয় প্রদর্শন করেছেন। ফারুকের অভিনয় সমৃদ্ধ এ ছবিটি ১৯৭৫ সালে মোট ছয়টি শাখায় শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়ে বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়।

বাংলা চলচ্চিত্রের অধ্যায়ে নবইতিহাস সৃষ্টিকারী অভিনেতা ফারুক, যার ক্যারিয়ারে ব্যর্থ ছবির সংখ্যা খুবই কম। গ্রাম-বাংলার চিরায়ত লোকজ জীবনের কাহিনি-নির্ভর ছবিগুলোতে তিনি নিজেকে বিকল্পহীন এক অভিনেতায় পরিণত করেছেন। এধরনের একটি ছবি হলো প্রমোদ কর তথা খান আতাউর রহমান পরিচালিত “সুজন সখী”। সখী রূপী কবরীর বিপরীতে সুজন রূপী ফারুকের কালজয়ী অভিনয় আজও বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকেরা ভুলতে পারেনি। শুধু সিনেমাতেই নয়, “সুজন সখীর” অমর প্রেম যেন বাংলাদেশের এক জীবন্ত কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। কথায় আছে, “ভাইয়ের শত্রু ভাই আর মাছের শত্রু ছাই।” ঠিক এমনই এক কাহিনির ধাঁচে নির্মিত হয়েছে সুলেমান ও লোকমান নামক দুই ভাইয়ের পারিবারিক দ্বন্দ্বকে উপজীব্য করা ছবি “সুজন সখী”। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিটি সবধরনের দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়। অমর প্রেমের গাঁথা এ ছবিটিতে ফারুকের অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে সাফল্যের জোয়ার নামিয়েছিল। তাঁর লিপে, সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা গানটি আজও মানুষের ঠোঁটে।
অভিনয় জীবনে নানামুখী চরিত্রে রূপদান করে ফারুক ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর অভিনীত গণমানুষের জীবনঘনিষ্ঠ ছবিগুলোকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক জগতের সম্পদ বললে এতটুকু বাড়িয়ে বলা হবে না। আমজাদ হোসেন পরিচালিত নয়নমণি, গোলাপী এখন ট্রেনে, এমএ সামাদের সূর্যগ্রহণ, আবদুল্লাহ আল মামুনের সারেং বৌ, সখী তুমি কার, জহিরুল হকের ঘরজামাই, প্রমোদ করের দিন যায় কথা থাকে, চাষী নজরুল ইসলামের পদ্মা মেঘনা যমুনা, আজিজুর রহমানের জনতা এক্সপ্রেস, যন্তরমন্তর, মেহমান, ফুলেশ্বরীসহ অসংখ্য সফল ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। এক্ষেত্রে আমজাদ হোসেনের পরিচালনায় ১৯৭৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘নয়নমণি’ সিনেমার কথাটি বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। এটি ফারুকের অভিনয় জীবনের অন্যতম সফল একটি ছবি। শিক্ষার আলো বঞ্চিত বাংলাদেশের গ্রামীন জনগোষ্ঠীর মধ্যকার ভয়াবহ কুসংস্কারের চিত্র নিয়ে নির্মিত ‘নয়নমণি’ ছবিটিতে ডানপিটে ও প্রতিবাদী ‘নয়ন’ চরিত্রে ফারুক অনবদ্য অভিনয় প্রদর্শন করেন। এই নয়ন অত্যাচারী মোড়লের বিষাক্ত চোখ থেকে গ্রামের মানুষকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। আমজাদ হোসেন রচিত ‘নিরক্ষর স্বর্গে ‘ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটিতে ফারুকের অসামান্য অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রের এক জীবন্ত ইতিহাস। ফলে এ ছবিটিও বিভিন্ন শাখায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়। ‘গোলাপী এখন ট্রেনে ‘ আমজাদ হোসেন পরিচালিত ফারুক অভিনীত আরও একটি কালজয়ী চলচ্চিত্র। গোলাপী রূপী ববিতার বিপরীতে ফারুকের দুরন্ত অভিনয় চুটিয়ে উপভোগ করেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের দর্শকেরা। বাণিজ্যিক সফলতার পাশাপাশি সমালোচকদেরও মন জয় করতে সক্ষম হয়এ ছবিটি। যৌতুকের বলী গোলাপীর পাশে দাঁড়ানো মিলনরূপী ফারুকের হার না মানা অভিনয় ছবিটিকে সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে দেয়। ১৯৭৮ সালে নির্মিত এ ছবিটিও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করতে সক্ষম হয়।
শুধু এফডিসিনির্ভর বাণিজ্যিক সিনেমাই নয়, অভিনয় জীবনে সাহিত্যনির্ভর ছবিতেও ফারুক সমানতালে পর্দায় এসেছেন। এক্ষেত্রে বিরাজ বৌ ,পদ্মা মেঘনা যমুনা, ও সারেং বৌয়ে’র কথা উল্লেখ করা যায়। বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক শহীদুল্লাহ কায়সার রচিত উপন্যাস সারেং বৌ’য়ের কাহিনি নিয়ে একই নামে নির্মিত ছবিটি ফারুকের এক অনবদ্য অভিনয়বিভা। জীবীকার তাগিদে জাহাজে করে সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়ানো কদম সারেং-এর স্ত্রী নবিতুনের উপর কুদৃষ্টি পড়ে গ্রামের প্রভাবশালী মোড়লের। নানারকম ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে কদম সারেং অবশেষে নবিতুনকে মোড়লের হাত থেকে রক্ষা করে। এ ছবির শেষ দৃশ্যে স্ত্রীর স্তন্যপান করে নিজ জীবন বাঁচানোর মুহূর্তে ফারুকের অভিনয় ছিল হৃদয়ছোঁয়া। এছাড়াও ছবিটিতে ফারুকের ঠোঁটে আব্দুল জব্বারের কণ্ঠে “ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া” শিরোনামের গানটি আজও মানুষের মুখে মুখে। বাংলা চলচ্চিত্রের বহু নায়িকার সঙ্গে জুটি গড়ে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন। কবরী, শাবানা, ববিতা, অঞ্জনা, রোজিনা, সুচরিতাসহ অনেকের সঙ্গে তাঁর সাফল্য প্রশ্নাতীত। তবে জুটি হিসেবে কবরী, ববিতা ও রোজিনার সঙ্গেই সর্বাধিক সাফল্যের দেখা পেয়েছেন।
সহজসরল গ্রাম্য প্রেমিকের চরিত্রে রূপদান ফারুকের অভিনয় ক্ষমতার সবচেয়ে শক্তিশালী দিক। এ দিকটিতে ফারুক নিজেকে অপ্রতিরোধ্য অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আব্দুস সামাদ খোকন পরিচালিত ঝিনুক মালা, দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর শিমুল পারুল, পালকি, ইবনে মিজানের পুনঃর্মিলন, নারায়ণ ঘোষ মিতার মান অভিমান, সাহেব, শাহজাহান আকন্দের পরীস্থান, স্বপন সাহার অবিশ্বাস; এসব ছবিতে ফারুকের দুর্দান্ত অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন রূপালী পর্দার দর্শকেরা। ‘ঝিনুক মালা’ ছবিতে বাউল চরিত্রের এক অবুঝ প্রেমিকরূপী ফারুকের মনের আকুতি কেড়ে নেয় দর্শকের মন। ফারুকের লিপে এ ছবির গানগুলোও সমান জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। এছাড়াও ফারুকের অভিনয়সমৃদ্ধ আরও কিছু চলচ্চিত্রের মধ্যে; চাষী নজরুল ইসলামের রঙিন বেহুলা লখিন্দর, অঞ্জন সরকারের ভুল বিচার, এম এ মালেকের লায়লা আমার লায়লা, চাষী নজরুল ইসলামের মিয়া ভাই, আওকাত হোসেনের বন্ধু আমার, অন্যতম সফলসব ছবি। বন্ধু আমার’ ছবিতে জাফর ইকবালের এক অন্ধ বন্ধুর চরিত্রে তাঁর অভিনয় ছিল অনবদ্য। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে জাকির হোসেন রাজুর জীবন সংসার, এ জীবন তোমার আমার, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর জীবন মানেই যুদ্ধ, বাদল খন্দকারের পৃথিবী তোমার আমার এর মত ছবিতেও চমৎকার অভিনয় করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের তুখোড় এ নায়ক অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হন। বর্ণাঢ্য অভিনেতা হিসেবে ফারুকের নাম বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন