চলে গেলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায়। সুদীর্ঘ সময় ধরে বাংলা সাহিত্যকে শাসন করেছে, সমৃদ্ধ করেছে তাঁর কলম। তাঁর দেশভাগ নিয়ে লেখা উপন্যাসগুলো, বিহার সিরিজ শুধুই সাহিত্য নয়, ইতিহাসের আর্কাইভও বটে। কেবল নিজের সাহিত্যকর্মের গন্ডিতে আটকে থাকেননি তিনি, পরবর্তী প্রজন্মের হাতে যাতে বাংলা সাহিত্য উপযুক্ত লালন পায়, সেজন্য যত্ন করে তৈরি করেছেন উত্তরসূরীদের। তাঁদের সময়ে এসব হত, প্রথিতযশা সাহিত্যিকেরা নিজেরাই আগ্রহ নিয়ে পড়তেন নবীনদের লেখা, ভালো লাগলে সেই নবীনকে ডেকে প্রশংসা করতেন, প্রয়োজনে ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতেন। নবীন লেখকদের লেখার অভিমুখ নির্দিষ্ট করতে সাহায্য করতেন। শুধু তাই নয়, সদ্য লিখতে আসা ছেলেটি বা মেয়েটি যাতে পরিচিতি পায় সেজন্য নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় করাতেন। প্রফুল্ল রায়ের সঙ্গে সঙ্গেই সম্ভবত বাংলা সাহিত্যে জগতের এই আত্মীয়তার ঘরানার দীপটিও নিভে গেল।
বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে জুলাই মাসে হয়েছিল আরও একটি নক্ষত্রপতন, নিতান্ত অপরিণত বয়সে মারা যান ফ্রানৎজ্ কাফকা। খুব বেশি লেখার সময় পাননি তিনি, কিন্তু সেই অল্প সংখ্যক লেখা তাঁর মৃত্যুর একশো বছর পরেও চুড়ান্তভাবে প্রাসঙ্গিকতা। সর্বত্র আমরা দেখতে পাই, ক্ষমতা আর বিচার এখন সমার্থক। ন্যায়বিচার শব্দটি আমজনতা এখন ডিকশনারির পাতাতেই দেখতে পায়, আদালতে নয়। ফলে আমাদের অবধারিত ভাবে মনে পড়ে যায় “দ্য ট্রায়াল” এর “জোসেফ কে”র কথা। আদালতের পাঠানো দুই ব্যক্তি এসে যাকে গ্রেপ্তার করে কথা জানায় অথচ তার অপরাধটা যে কি তা জানায় না। বিচারের নামে দিনের পর দিন ততোধিক রহস্যময় এক আদালতে চলে প্রহসন, কিন্তু বিচারপ্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পায় না সে। শেষপর্যন্ত এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সে শাস্তিটাকেই আঁকড়ে ধরে, তাঁর নিজের ভাষ্যে “কুকুরের মতো” মৃত্যু হয় তাঁর। আজও অধিকার বুঝে নিতে চাওয়া মানুষকে, প্রাপ্য আদায়ের জন্য পথে নামা মানুষের সঙ্গে রাষ্ট্র যখন কুকুরের মতো ব্যবহার করে, তখন মনে হয়, একজন মহান সাহিত্যিকের অন্তর্দৃষ্টি কতটা প্রখর এবং গভীর হতে পারে, যাকে শতবর্ষের ধুলো বিন্দুমাত্র মলিন করতে পারেনি। তাঁকে শ্রদ্ধা জানায় বর্তমানকাল, ভাবীকালের সামনেও তিনি তাঁর সৃষ্টির রহস্যময়তা ইন্দ্রজাল দেখাতে থাকবে।
বাংলা সহ সামগ্রিক সাহিত্য চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অপারবাংলা বদ্ধপরিকর। জুলাই সংখ্যা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে আমরা সেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। রাজা ভট্টাচার্যর ভিন্ন স্বাদের উপন্যাসিকা আপনাদের ভালো লাগবে। এই ধরণের উপন্যাস পরশুরাম এর বিরিঞ্চি বাবার কথা মনে করিয়ে দেয়। সাতটা গল্প, অণুগল্প গুচ্ছ, কবিতা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, স্মৃতিকথা আছে। সাথে আছে নিয়মিত বিভাগে ভ্রমণ, রান্নাঘর, ফিল্ম রিভিউ আর ধারাবাহিক ষ্টুডিও পাড়ার ১৬ নম্বর পর্ব।
শারদীয়া অপারবাংলা র কাজ হইহই করে শুরু হয়ে গেছে। শারদীয়ার প্রাক্কালে জুলাই সংখ্যার কাজ সমান উৎসাহে আমরা করেছি আমাদের সারা বিশ্ব জুড়ে অপারবাংলার পাঠকদের কথা মাথায় রেখে।
আনন্দ হোক!
শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা