উদয়নের মূর্তি
বিভাবসু দে
‘দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খানখান’— সে ঘটনার পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। হীরক রাজা এখন ভালো রাজা। মারে না, ধরে না, মগজ ধোলাইও করে না। শুধু মাঝে মাঝে মূর্তি বানায় আর ঘটা করে দেশসুদ্ধু লোককে ডেকে তার আবরণ উন্মোচন করে। এই যেমন আজ উদয়ন পণ্ডিতের মূর্তির পর্দা সরানো হবে। মাঠে গিজগিজ করছে লোকজন। চাষি, শ্রমিক, মজুর, সেপাই— আট থেকে আশি সবাই।মাঠের ঠিক মধ্যিখানে বসানো হয়েছে উদয়ন পণ্ডিতের মূর্তিটা। পঞ্চাশ ফুট উঁচু। পাথরের। সবার চোখ উৎসাহে ঝলমল করছে।সেপাই সান্ত্রী নিয়ে মিনিট দশেক পর এলেন মহারাজ স্বয়ং। মুখে গর্বের হাসি। চোখে ভক্তি গদগদ চাউনি। চারপাশ থেকে মুহুর্মুহু ধ্বনি উঠছে, “জয় হীরক রাজের জয়। জয় উদয়ন পণ্ডিতের জয়।” যদিও উদয়ন আসেননি— বিশেষ কাজে নাকি গেছেন শুণ্ডীদেশে।রাজা আস্তে আস্তে দড়ি টানলেন। কাপড় সরে গেল। বেরিয়ে এল সেই আকাশছোঁয়া মূর্তি। লোকজন খুশিতে ফেটে পড়ল। উদয়ন পণ্ডিতের ছাত্ররা দু’হাত তুলে জয়ধ্বনি দিতে লাগল পণ্ডিত আর হীরক রাজার নামে। কেউ কি কোনওদিন স্বপ্নেও ভেবেছিল যে এমন দিনও আসবে! রাজা সত্যিই বড় ভালো রাজা। এমন রাজা আর হয় না। মাঠভর্তি লোক সবাই খুশিতে আর জয়ধ্বনিতে মেতে উঠল। উদয়নের মূর্তি আর হীরকের রাজা— জয় হোক, জয় হোক।যদিও একটু ত্রুটি রয়ে গেছিল— মূর্তির পেছনে একটা ছোট্ট ফুটো। কিছু কালো কালো মাংসখেকো পিঁপড়ে সার দিয়ে তার ভেতর ঢুকছে আর মুখে করে যেন কিছু একটা নিয়ে বেরিয়ে আসছে।উদয়ন পণ্ডিত কবে ফিরবেন কে জানে!
দারুণ লিখেছেন