তখন ইয়াহু চ্যাটের যুগ। একটা সিনেমা বেরিয়েছিল — য়ু হ্যাভ গট মেইল। বাজারে ইন্টারনেট কাফে হাতেগোণা। কিন্তু ব্যবসা চলছিল রমরমিয়ে৷ কেউ গিয়ে গেমস্-এ মত্ত, কেউ চ্যাটে। চ্যাটের স্টাইলও অদ্ভুত ছিল। সার্চবক্সে গিয়ে যে কোনো নাম লেখো। এনি নেইম! ছেলেরা লিখত রিয়া, রাইমা, চায়না, বিউটি, ডলি, মলি, শিল্পা শেট্টি। আর মেয়েরা? মেয়েরা ‘…চাঁদ উঠেছিল গগনে’ মার্কা হয়নি তখনও। তারা ওসব করত না। শুধু ছেলেরাই মেয়ে খুঁজত। নিজের নিজের চাহিদা আর ভক্তি নিয়ে। আমার পছন্দ ছিল মমতা কুলকর্নি। আমি প্রথমদিন গিয়েই লিখলাম – মমতা। টেনে টেনে উচ্চারণ করুন প্লিজ — মম-তা…। একটা লিস্ট এসে গেল। একজন মমতা কুলকর্নিকে লিখে দিলাম, ‘হাই।’
ঝট করে উত্তর এল, ‘হ্যালো।’
ব্যাপার হল এ তো আর আসল মমতা কুলকর্নি ছিল না। আমি যেমন জালি অক্ষয়কুমার সেজে চ্যাট করছিলাম, তেমনি –সেম কেস। কথা শুরু হল। রোমান হরফের হিন্দিতে। রোজ একঘণ্টা করে। আমার গাড়ি এগোয় না। জ্ঞান তো ওই ক্লাস টেনের ইতিহাস – ভূগোল। ওর মধ্যেই ঘোরে। আপনারাই বলুন না, পাগল না- হলে কি আর ঘণ্টায় তিরিশ টাকা রেটে পেমেন্ট করে কেউ সমবয়সী মেয়ের সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ডিসকাশন করে? কিন্তু আমার মমতা কুলকর্নিও খুব আগ্রহ নিয়ে আলোচনা করছিল। আমি ভাবলাম, আইডিয়াল ম্যাচ। কথা এগোই। আমার পাশের টুলটায় আমারই এক বন্ধু চ্যাট করতে বসতো। পাকা ছেলে। তাকে এই চ্যাটের কথা বলেছিলাম। সে মাল একদিন জোর করে আমার মেইল আইডি থেকে ওই মমতা কুলকর্নির আইডিতে একটা রোমান্টিক ইমেইল সেন্ড করে দিল। মমতা কুলকর্নিকে প্রোপোজাল! হোক না মিথ্যে মমতা কুলকর্নি। ভয় পেয়ে কাফে যাওয়াই ছেড়ে দিলাম ক’দিনের জন্য। গেলেই তো ইনবক্স খুলব। খুললেই উত্তর পাব। পেলেই পিরিত চটকানোর গন্ধ। গান বাজবে, মুঝকো রাণাজি মাফ করনা, গলতি মাঢ়ে সে হো গয়ি…।
প্রায় একসপ্তাহ পরে গেলাম। দেখলাম একটা উত্তর এসেছে। লিখেছে, চ্যাটে তো শুধু জ্ঞান দাও, মেইলে এত রোমান্টিক! সেদিনও চ্যাট হল। রোমান্টিক। চটচটে। কত্ত কী। বেশ পাকাপোক্ত হলাম ক’দিনেই। ভাচুয়াল লাইফের থিওরির প্র্যাকটিক্যাল শুরু হল বাস্তব জীবনে। মনে গান বাজছে…ভরো, মাঙ্গ মেই ভরো…। প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়ার নিয়ম মেনে নিউটন সাহেবকে সম্মান দিয়ে একটি মেয়ের প্রেমে পড়লাম। ইনবক্সে আঠা আঠা কথা, আর বহির্জগতে মাখো মাখো প্রেম নিয়ে ভালোই কাটছিল। কিন্তু ওই যে বিবেক। আগেকার থিয়েটার বা যাত্রার বিবেকের চরিত্র কোথা থেকে টোকা মেরে উঠল মাথার ভেতর। বলল, তুই রিয়েল লাইফে তো অক্ষয়কুমারের মতো একাধিক কেস ঘটাতে পারবি না। এসব অপরাধ বুকে নিয়ে নিয়ে নিজেকে মুখ দেখাবি কী করে? ঠিক করলাম যে, থিওরির সুন্দরীকে চ্যাটে সব বলে দেব। একবার মনে হল যদি মনে কষ্ট পায়। তারপর ভাবলাম, নাহ, এসব ঠিক নয়। ওয়ান উম্যান’স্ ম্যান হব। সেদিন আর রসাল চ্যাট হল না। সব খুলে বললাম। আমি অক্ষয়কুমার, আর ও মমতা কুলকর্নি। আমি নায়ক ও নায়িকা। নায়কের সব কথা নায়িকা শুনল। শুনে বলল, ‘এ তো দারুণ ব্যাপার!’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘শুনে খারাপ লাগল না?’
‘খারাপ লাগবে কেন?’
‘এই যে এতদিনের অন্তরঙ্গ কথার পর আজকে তোমাকে বলছি যে অন্য একজনের প্রেমেও পড়েছি।’
‘তাতে কী? আমিও তো মুম্বাইতে নিজের বয়ফ্রেণ্ডের সাথে লিভ-ইন করি। ওর ডে শিফট, আমার নাইট। দিনে ও বাড়ি থাকে না। আর আমি তোমার সাথে দুষ্টু মিষ্টি চ্যাট করি। ইউ নো, হমে যব বাতেঁ করতে হ্যায় তো আই ফীল ড্রিপিং ওয়েট। ইটস্ আ কিন্ডা অরগ্যাজম। দ্যাটস্ অল।’
আমি আর কিছু না-বলে চ্যাটটা লিভ করে গেছিলাম। মাথা তখন ব্ল্যাঙ্ক। একটাই কথা ঘুরছিল — আমি অক্ষয়কুমার, আর ও মমতা কুলকর্নি।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
পুরনো সময়টাকে নিপুণভাবে ধরেছিস তোর লেখায়।
💓💓💓
বেশ ভালো লেখা৷পুরোনো সময়কে মনে করিয়ে দিলে৷ আমাদের কলেজজীবন কত স্মৃতি৷তাছাড়াও গল্পর মধ্যের সেই তরুন কে পেলাম যাদের নিজেদের তখন অক্ষয়কুমার বলে ভাবতে ভালো লাগতো আর মমতা তো তখন তরুনদের হৃদয়ে কাঁপন ধরায়৷বেশ ভালো লাগলো৷
💓💓💓
নিজেদের স্কুল লাইফ মনে পড়ে গেল। ঘন্টায় ৩০টাকা!! সব এক!
🙏🙏🙏
ভালো লাগলো। সুন্দর লেখা।
🙏🙏🙏