aparbangla-editorial-edition-8

সম্পাদকীয়
মুখ ঢেকে কেটে গেল একটা গোটা বছর,জীবনের কাছ থেকে মুখ লুকিয়েও। এই একটা বছর এলোমেলো করে দিয়েছে পূর্ব নির্ধারিত সমস্ত কিছুকে,নত করে দিয়েছে দু’পেয়েদের গর্বোদ্ধত মাথাকে।

দমবন্ধ বন্দী জীবনে বেঁচে থেকেও মৃতপ্রায় মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে একের পর এক শোকমিছিল, পৃথিবী যেন এক ধূ-ধূ প্রান্তর মৃত্যু-উপত্যকা।অনেক পাতা ঝরে গেছে অসময়ে, ধূসর সেসব পাতায় ঢেকেছে রাজপথ,শবানুগমন যেন আর ফুরাতেই চায় না।

বাংলা সাহিত্যআকাশ থেকেও ঝরে গেছে একের পর এক নক্ষত্র। দেবেশ রায়,আনিসুজ্জামান,অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত,মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়,নিমাই ভট্টাচার্য, প্রণবকুমার মুখোপাধ্যায়,সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাধনা মুখোপাধ্যায়, বিজয়া মুখোপাধ্যায়, লেখক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং সর্বশেষে সুধীর চক্রবর্তী ছেড়ে গেলেন বাংলা সাহিত্যকে। ক্রীড়া আর বিনোদনের জগতেও শূন্যতা ছড়িয়ে রেখে চলে গেলেন বহুল-চর্চিত ব্যক্তিত্বরা।

যাঁদের নাম বার বার উচ্চারিত হয় না,পৃথিবীকে নীরবে ছেড়ে গেলেন যাঁরা, তাঁদের জন্যও শোকপ্রস্তাব রইল নিঃশব্দ-উচ্চারণে।

মৃত্যু কখনোই শেষ কথা বলে না, বলতে পারে না। এই অদৃষ্টপূর্ব বিভীষিকাও আমাদের অনেককিছু শিখিয়ে গেছে, বিস্মৃতপ্রায় অতীত থেকে তুলে এনেছে মানুষ হিসাবে আমাদের অনেক সুঅভ্যাস, প্রকৃত জীবনবোধ।

কখনো মানবতা গর্জে উঠেছে রাষ্ট্রের সন্ত্রাসের বিরূদ্ধে,কোভিড আতঙ্ক ভুলে ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে উপচে পড়েছে পথ, কখনো বা লকডাউনে কাজ হারানো নিরন্ন পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ।আমরা বুঝতে শিখেছি কত অল্পতেই আমাদের জীবনযাপন সম্ভব, জেনেছি পৃথিবী বাঁচলে তবেই বাঁচব আমরা।আমরা উপলব্ধি করেছি প্রাচুর্য নয়, আসলে বেঁচে থাকাটাই আনন্দের।

সেই আনন্দের উদযাপন করছি আমরাও। ‘অপারবাংলা’ দুবছরের পরিক্রমা সম্পূর্ণ করার খুশি, এই পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা ভাগ করে নিচ্ছি আপনাদের সকলের সঙ্গে। কে-না জানে, খুশি যত ভাগ করা যায় ততই বাড়ে।

নতুন বছরের প্রথম সংখ্যাটি আমরা সাজিয়েছি একটু নতুনভাবে। নিয়মিত বিভাগগুলোর সঙ্গে থাকছে আরও কয়েকটি বিশেষ বিষয়।

লকডাউনের সময় সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী কিছু অণুগল্প লিখেছিলেন। ওনার পাণ্ডুলিপি থেকে আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি গুচ্ছ অণুগল্পের সম্ভার। বিনোদন বিভাগে অনেক অজানা তথ্য আপনাদের কাছে নিয়ে এসেছি অনুপম রায় আর রুদ্রনীলের সঙ্গে একান্ত আড্ডা থেকে। দুর্গামোহন দাশের সম্বন্ধে আমরা কতটুকু জানি, যিনি আধুনিক বাংলা তৈরীর এক নিবেদিত কারিগর? পড়ার জন্য চোখ রাখুন পূরবী বসুর লেখা প্রবন্ধ বিভাগে। শোভনসুন্দর লিখেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাটানো কিছু মুহূর্ত, যা একান্ত ওদের নিজেদের সময়। জানার জন্য বিনোদন বিভাগে চোখ রাখুন। জয়তী রায় এর “কুন্তী ও ভারতবর্ষ” উপন্যাসের শেষ সংখ্যা এবার প্রকাশিত হলো। কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পীদের নিয়ে অনেক অজানা তথ্য নিয়ে লিখেছেন নন্দিনী নাগ প্রবন্ধ বিভাগে। সুমন ভট্টাচার্জ র রম্যরচনা আপনাকে রসের আস্বাদন দিতে বাধ্য। আছে আমেরিকা আর আফ্রিকার ভ্রমণ কাহিনী। এবার রান্নাঘরে ভিন্ন স্বাদের লেখা নিয়ে এসেছেন পাঞ্চালি দত্ত। বাংলাদেশের পিঠা পর্বের ইতিহাস জানতে পড়ুন মেহেরুন নেসার লেখা রান্নাঘর বিভাগে।

প্রতি সংখ্যার মতো এবারও অপার বাংলা আপনাদের উপহার দিয়েছে ছয় দেশের বিশিষ্ট লেখকদের নিয়ে এক সমৃদ্ধ পত্রিকা। আগামী সংখ্যা প্রকাশিত হবে এপ্রিল মাসে। প্রতিবারে মতো মাসের তৃতীয় রবিবারে।

আনন্দ হোক!

শুভ নাথ
সম্পাদক, অপার বাংলা ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “aparbangla-editorial-edition-8

  1. প্রিয় সম্পাদক শুভ, তোমার সম্পাদকীয় পড়ে আমি মুগ্ধ! এত স্বল্প কথায় ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে শুরু হওয়া বিশ্বব্যাপী করোনা-আবহে লকডাউনের অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে হাজার প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মানুষের জীবন যে থেমে থাকেনি, সে কথা বলেছ তুমি । বলেছ — COVID 19 আমাদেরকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। যদিও নামী-অনামী বহু মানুষকে হারিয়েছি, তবু হতাশা কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছি আমরা । Brevity is the U.S.P of your writing.
    আর অমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও সঠিক দিনেব প্রকাশিত হয়ে চলেছে “অপার বাংলা”…অভাবনীয় ! অবিশ্বাস্য ! এজন্যে কোনও প্রশংসাই তোমার জন্যে যথেষ্ট নয় । “অপার বাংলা”-র জন্যে আমার তরফে থাকছে শুভেচ্ছা অন্তহীন ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *