অনুষ্ঠান
অদিতি বসুরায়
নীল-ইমন মানে নীলামন। এই সংযুক্তি গায়িকা ইমন চক্রবর্তীর। বেশ কয়েক মাস ধরেই তাঁদের বিয়ের খবর ভেসে আসছিল এদিক ওদিক থেকে। কিন্তু করোনা-জনিত পরিস্থিতিতে তাঁরা সময় নিচ্ছিলেন। বাগদান ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে সারা হলেও বিবাহ কবে তাই নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ইমন চক্রবর্তী, সম্প্রতি বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলেন নীলাঞ্জন ঘোষের সঙ্গে। নীলাঞ্জন মিউসিয়ান। তাঁদের আলাপ দুর্নিবারের একটা প্রজেক্ট-শুট-এ। পরের গল্পটা দ্রূত পরিণয়ের পথ নেয়। গত বছরের লক-ডাউনের সময়টা তাঁরা পরস্পরের সাহচর্যে কাটান।
বিয়ের কথায় আসা যাক! ইমনের বিয়ে এবং বৌভাত একদিনেই হয়। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় ‘নীলামনে’-র বিয়ের দিন ঠাণ্ডা ছিল খুব। বিবাহবাসর বালিতে। গঙ্গাপারের জেঠিয়া হাউসে। খোলা দালানে – হু হু শীতল বাতাস – এলোমেলো হয়ে যাচ্ছিল, মাটির কলসিতে সাজানো ফুল সব। ঝাড়বাতিতে তখন বিবাহের আলো! থার্মোকল এবং শোলার কদম ফুল দিয়ে নির্মিত অসামান্য সেই লাল রঙের ঝাড়বাতিটির মূল কারিগর শিলাদিত্য চট্টোরাজ। তবে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন আরো অনেক বন্ধু-বান্ধব।
ফেব্রুয়ারি মাসের দুই তারিখ – অন্যান্য বছর এই সময়ে শীত থাকে না আর কলকাতায়। কিন্তু ইমন – নীলাঞ্জনের বিয়ের দিন হিম হিম ঠান্ডা ছিল। বিয়ে বাড়িটি অনাবিল জায়গা নিয়ে সজ্জিত। লম্বা লন – দালান – মঞ্চ। সেই মঞ্চে উপহার ও অভ্যাগতের ভিড়। সকালে এই বাড়িতেই হয়েছে তাঁদের গায়ে –হলুদ। সাবেকি সাজে, জাতীয় পুরষ্কার-প্রাপ্ত গায়িকা, ঝলমলে এবং রঙিন হয়ে উঠেছিলেন। পরনের লাল বেনারসিকে ছাপিয়ে যাচ্ছিল তাঁর মুখের লাবণ্য। ভারি সোনার গয়না, মাথার টায়রা, কনে চন্দন – সব মিলিয়ে অসামান্য সুন্দর লাগছিল কনেকে। সেদিন তাঁকে সাজিয়েছিলেন মেকআপ আর্টিস্ট অভিজিৎ চন্দ। ফ্যাশান ডিজাইনার, অভিষেক রায়ের পছন্দের শাড়ি এবং শাল পরেছিলেন ইমন। নীলাঞ্জনের পরনের সাদা-লাল পাঞ্জাবিটিও অভিষেকেরই ডিজাইন করা। গমগমে অতিথি সমাবেশের মধ্যে হল সিঁদূরদান-মালাবদল। ইমনকে সিঁদূর পরিয়ে দিলেন নীলাঞ্জন – এবং ইমনও তাঁকে সিঁদূর পরিয়ে দিতে হুল্লোড় উঠল উপস্থিতদের ভেতরে। আনন্দ হল বড়! চিরকাল দেখে আসা হিন্দু লোকাচারকে এমনভাবে পরিমার্জনা করা দেখে – ভরসা বাড়লও। দিন বদলাচ্ছে –।
ওদিকে মাইকে তখন গান শুরু হয়েছে। আগত গায়ক-গায়িকা গানে গানে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেন নব – দম্পতিকে। মণ্ডপে তখন চাঁদের হাট – বিক্রম ঘোষ, মনোময় ভট্টাচার্য, শ্রাবণী সেন, উপল সেনগুপ্ত, শোভনসুন্দর বসু, সোমলতা, জয় সরকার, অরিন্দম শীল, লগ্নজিতা প্রমূখ ইমন ও নীলাঞ্জনকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত। উপল এবং জয় ছুটলেন গঙ্গা দেখতে ।
বিয়েবাড়ির সেরা আকর্ষণ খাওয়া-দাওয়া। সেখানেও অভিনবত্ব এবং আয়োজনের খামতি ছিল না একেবারেই। খাবার বুফেতে ভিড় ছিল বেশ। এবং সেখানেও মুর্গি-মাটন-মাছের ছড়াছড়ি। যথেষ্ট বিবেচনার সঙ্গেই বাংলার নিজস্ব পদগুলি বেছে নেওয়া হয়েছিল মেনুতে। ভাজা থেকে ঝাল – সবকিছুই ছিল মেনুকার্ড আলো করে। ছিল গরম গরম লুচি –বেগুন ভাজার সঙ্গে ছোলার ডালের পরশ। আলু পোস্ত এবং ছানার ডালনার সঙ্গে রাখা হয়েছিল ফিস বাটার ফ্রাই, সর্ষে পাবদা এবং মাটন কোর্মা। শেষ পাতে, জলভরা সন্দেশ এবং লর্ড চমচম। মিষ্টি দই এবং গাজরের হালুয়াও ছিল ডেসার্ট লিস্ট –এ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন