aparbangla-editorial-edition-15

সম্পাদকের কলমে
শুভ নাথ


কথায় বলে পাঁচটা বাঙালি একজায়গায় হলে একটা দুর্গাপুজোর পরিকল্পনা করে। প্রবাদটা ভুল কিছু নয়, কারণ বাঙালি হুজুগে এবং উৎসবপ্রিয়। শারদোৎসব যতটা না ধর্মীয় ভাবাবেগের প্রকাশ তার চাইতে অনেক বেশি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য। আর এবছর তো এই ঐতিহ্যের আরো বড় উদযাপন, কারণ এক বাঙালি মহিলার উৎসব সংক্রান্ত গবেষণার ফলশ্রুতিতে বাংলার এই সংস্কৃতি আদায় করে নিয়েছে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি।

শারদীয় দুর্গাপুজোর ইতিহাস আমাদের সাংস্কৃতিক চেতনাকে সমৃদ্ধ করার তাগিদের কথা স্মরণ করায়। ইংরেজদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যে ১৭৫৭ সালে সুতানুটি রাজবাড়িতে প্রথম শারদোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। আরও পরে আমরা দেখছি ভারতীয় তথা বাঙালিদের মধ্যে সাংস্কৃতিক ঐক্যের চেতনা বাড়ানোর জন্য ক্লাবকেন্দ্রিক দুর্গাপুজো শুরু হয়, নেতাজি সুভাষ স্বয়ং এব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন, সিমলা ব্যায়াম সমিতি, কুমোরটুলির পুজো কমিটির তিনি সভাপতি ছিলেন।

শারদোৎসবকে ঘিরে সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চা দীর্ঘদিনের। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সমৃদ্ধ পুজোসংখ্যা প্রকাশ, গানের নতুন অ্যালবাম প্রকাশ তারই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। গানের অ্যালবামের সেই গরিমা এখন না থাকলেও পত্রিকা প্রকাশের ধারাটা রয়ে গেছে। “অপারবাংলা” তারই অনুসূরী, তাই পুজোর আগেই পাঠকের দরবারে হাজির এবছরের উৎসব সংখ্যা।

বিগতমাসে রাজনৈতিক এবং শিল্পবিশ্বে দুটি নক্ষত্রপতন হয়েছে, মিখাইল গর্বাচভ এবং জাঁ-লুক গোদার। সমবয়সী দুই ব্যক্তিত্বের একজনের স্বাভাবিক মৃত্যু, অন্যজনের স্বেচ্ছামৃত্যু। নিজেদের কাজের দুনিয়ায় স্পর্ধা দেখানো এই দুই বিপরীতধর্মী মানুষ চিরকালই আলোচনায় থেকে যাবেন। চলচ্চিত্রের চরিত্র এবং ভাষার খোলনলচে বদলে ফেলা জাঁ-লুক গোদার চলচ্চিত্রকে পুঁজির আওয়ার বাইরে এনেছিলেন, সেকালের যাবতীয় গঠনতন্ত্রকে ভেঙে দিয়ে চলচ্চিত্রের নতুন ভাষা নির্মাণ করেছেন গোদার। নিছক গোল একটা গল্প বলা ছাড়াও চলচ্চিত্র আরও অনেক কিছু করতে পারে, তা তিনিই প্রথম দেখালেন। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বার বার তিনি প্রবন্ধ রচনা করেছেন, সেই অর্থে গোদার একজন লেখক, ক্যামেরা যাঁর কলম। আর সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ রাষ্ট্রপতি মিখাইল গর্বাচভ পুঁজিকে স্বীকৃতি দিয়ে করলেন অন্য বিপ্লব। যেহেতু তাঁর হাত ধরেই সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রের পতন হল, তাই কম্যুনিস্টদের কাছে তিনি খলনায়ক। ‘গ্লাসনস্ত'(মুক্তচিন্তা), ‘পেরেস্ত্রৈকা’ (পুনর্গঠন) তৎকালীন সোভিয়েট যুক্তরাষ্ট্রবাসীর জন্য সঠিক পদক্ষেপ না ভুল, সে বিচারে না গিয়ে বলা যেতে পারে বদল আনতে গেলে সাহস লাগে। ইতিহাসে তিনি খলনায়ক হিসাবে বর্ণিত হবেন জেনেও ভেতরে ভেতরে ঘুণ ধরে যাওয়া ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক পতন ঘটিয়েছিলেন।

চিরকাল বদলে দেবার স্বপ্নে বিভোর গোদার মৃত্যুতেও বিশিষ্ট। যিনি বলেছিলেন “আমি অমর হতে চাই এবং মরে যেতে চাই”, ফ্রয়েডের মত স্বেচ্ছামৃত্যু বেছে নিয়ে তিনি জীবনের ওপর আবারও খবরদারি করেছেন।

উৎসবের আবহে একটা ভীতিকর সংবাদ ভাগ করে না নিলেই নয়। নিদারুণ খাদ্যসংকটের সম্মুখীন গোটা বিশ্ব। ইউনেস্কো জানিয়েছে, প্রতি সেকেন্ডে চারজন শিশু মারা যাচ্ছে অনাহারে। না খেতে পেয়ে, অপুষ্টিতে ভুগে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন। কাজেই উৎসবের দিনগুলোতে তো বটেই, বছরভরই খাদ্য নষ্ট না করার ব্যাপারে আমাদের দায়িত্বশীল থাকতে হবে।

উৎসবসংখ্যায় ‘অপারবাংলা’ অনন্য। এবার রইল তিনটে ভিন্ন স্বাদের উপন্যাসিকা, ছোটগল্প, কবিতা, ভ্রমণ, প্রবন্ধ এবং নিয়মিত বিভাগগুলি। কলম ধরেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, কবি ও গদ্যকারেরা। বিনোদন বিভাগ এবার বেশ আকর্ষণীয় এবং ভিন্ন স্বাদের। শ্রীজাত ও সৌমেন মিত্র র সাথে অপারবাংলা র পরিবারের একান্ত আলাপচারিতা আমাদের পাঠকদের কাছে বিশেষ পাওনা। বাপ্পি লাহিড়ী কে বাংলা শিল্প সংস্কৃতি কোনোদিন ও ভুলতে পারবে না। তাঁর সাথে কিছু মুহূর্ত কাটানোর অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে ভাগ করে নিয়েছেন প্রিয়ব্রত বসু। বহির্বিশ্বে বাঙালির সবচেয়ে বড় মেলা নর্থ আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন (NABC). এবারের NABC হয়েছিলো লাস ভেগাসে। তার অভিজ্ঞতা সুসম্পাদক রূপা মজুমদারের কলমে ও ক্যামেরাতে আমরা কিছুটা হলেও জানতে পারবো। বাঙালির রক্তে ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগান। আর তার ফ্যানদের নিয়ে আটলান্টা তে এক অভূতপূর্ব টুর্নামেন্ট হয়ে গেলো, যেখানে আমিও একজন অন্যতম সংগঠক হিসাবে ছিলাম টুর্নামেন্টের প্রথম খসড়া তৈরির থেকে। রবি চক্রবর্তীর কলমে আপনারা জানতে পারবেন ইস্ট-মোহন নিয়ে এখনো প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে কতটা তুমুল উত্তেজনা।

বিবিধ বিভাগে বরাবরের মতো এবারো সুপ্রিয় চৌধুরীর অন্য ধরণের ফিচার পাঠকদের ভালো লাগবে। শারদীয়া তো সম্পূর্ণ হয় না রম্য রচনা না হলে। তিনটে রম্য লিখেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক উল্লাস মল্লিক, চুমকি চট্টোপাধ্যায় এবং অনুষ্টুপ শেঠ। যেকোনো পত্রিকা সমৃদ্ধ করে প্রবন্ধ, যা আমাদের অজানা তথ্য দেয়, দেয় নতুন ভাবে সমাজের অনেক পরিচিত ঘটনা গুলোকে অন্য ভাবে ভাবতে। আপনাদের আশা করি ভালো লাগবে চারটে ভিন্ন ধরণের প্রবন্ধ অনিতা অগ্নিহোত্রী, জয়া মিত্র, নবকুমার বসু আর তৃষ্ণা বসাক এর।

রান্না ঘরে সিঙ্গাপুরের রসনা নিয়ে হাজির ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়। আর বাঙালি র অতি প্রিয় “পান্তা ভাত” শারদীয়া র সাথে কি ভাবে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে, তা জানতে পারবেন পাঞ্চালি দত্তর কলমে।

এছাড়াও এবারের শারদীয়াতে আছে ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকার বিশিষ্ট লেখকদের ২৭ টি গল্প, তিনটে অনুবাদ, তিনটে দেশ বিদেশের ভ্রমণ কাহিনী, ১৭টি অণুগল্প ও ২৪টি কবিতা। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে অপারাবাংলার সম্পাদকমন্ডলীর বিগত দু মাস ধরে অক্লান্ত চেষ্টা সার্থক হবে যখন আরো বেশি করে পত্রিকা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীর বাঙালি পাঠক সমাজের কাছে। পুজোর আগে শারদীয়া অপারবাংলা আপনাদের কাছে প্রকাশিত করতে পেরে আমরা গর্বিত। পাঠকদের সম্পূর্ণ নিখরচায় এমন সমৃদ্ধ শারদীয়া ওয়েবজিনের জুড়ি মেলা ভার।

শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো অপারবাংলার পক্ষ থেকে।

আনন্দ হোক!

শুভ নাথ
সম্পাদক

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “aparbangla-editorial-edition-15

    1. I am interested to be a part of writer’s forum of your magazine . wd u please send the details . I wd be obliged . I am a regular writer of various types. Stories, poems and essays on various topics. These are published in various magazines incl. Ei samay , Ajkal , Prasad and many others . Recently I have published a story book comprising 14 sh erort stories titled , সাবজেক্ট টু মার্কেট রিস্ক , available on line on Amazon and flipcart . Thanks.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *