aparbangla-editorial-edition-18

সম্পাদকের কলমে

বাঙালীর সবচাইতে বড় উৎসব দরজায় কড়া নাড়ছে। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাঙালীদের মধ্যে শুরু হয়ে গেছে উৎসবের প্রস্তুতি। কেবল তো আর নতুন জামা-জুতো নয়, এই উৎসবে বাঙালীর চাই নতুন আরও অনেক কিছু। ঠিক কবে থেকে এই সংস্কৃতির সূত্রপাত ঠিক জানা নেই, তবে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি শারদ উৎসবের সাথে শারদ সাহিত্য একই সুতোয় গাঁথা। কত যে মহৎ বাংলা কাব্য-নাটক-সাহিত্যের জন্মস্থান শারদীয় পত্রিকাগুলো, তা গুনে শেষ করা যাবে না।

বিগত একশো বছরে বাঙালী বহুভাবে বদলেছে কিন্তু এই ট্রাডিশন এতটুকু বদলায়নি। বরং আগের চাইতে অনেক বেশি সংখ্যায় পত্রিকার পুজোসংখ্যা প্রকাশিত এবং বিক্রি হয়। যাঁরা সারাবছর বইপত্র পড়ার সময় বা সুযোগ পান না, তাঁরাও ছুটির দিনগুলোতে শারদীয়ার কয়েকটা পাতা উল্টান বৈকি।

বয়সে নবীন হলেও “অপারবাংলা” ইতিমধ্যেই সমৃদ্ধ পুজাবার্ষিকীগুলোর মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলা সাহিত্যের নবীন-প্রবীণ লেখক লেখিকাদের মুন্সিয়ানায় সেজে উঠেছে আপনাদের প্রিয় ওয়েবজিন।

উৎসবের দিনগুলোতে আমরা সকলেই আনন্দে মাতব। ভোজনরসিক বাঙালীর কোনো অনুষ্ঠানই পেটপুজোকে বাদ দিয়ে হয় না, এই উৎসবে অবশ্যই হবে দেদার খানাপিনার আয়োজন। বছরের অন্য দিনগুলোতে যাঁরা কঠোর সংযমে কাটান তাঁরাও এই কটা দিন নিজেদের জিভকে দেন মুক্তির আনন্দ। তবে সুখাদ্যের উৎসব করতে গিয়ে আমরা যেন পরিমিতিবোধের খেয়াল রাখতে ভুলে না যাই। পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশ মানুষ প্রতিরাতে অভূক্ত অবস্থায় ঘুমাতে যান, এই কথাটা যেন খাবার নষ্ট করার আগে আমাদের মনে পড়ে। আফ্রিকার মানুষের অনাহারের কাহিনী এতটাই একঘেয়ে হয়ে গেছে যে আমাদের মনে তেমন দাগ কাটে না। কিন্তু সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে লোধা পরিবারের কিশোর শুভ নায়েককে যে খাবার চুরির দায়ে পিটিয়ে মেরে ফেলা হল, সেই নৃশংস ঘটনা থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা উচিত হবে তো?

একজন শুভ নায়েক আর কোনোদিন ফিরবে না। কিন্তু এমন অনেক শিশু কিশোর আমাদের চারপাশে অনেক আছে যারা গোটা দিন না খেয়ে থাকার পর ডাস্টবিন ঘাঁটে। তাদের মধ্যে হয়তো বা কেউ মুহূর্তের দূর্বলতায় পড়শির রান্নাঘরে ঢুকে যেতে পারে খিদের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে। উৎসবের দিনগুলোতে যদি আমরা সকলে ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ তাদের দিকে একটু হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, তবে মন্দ হয় না কিন্তু।

আসা যাক এবারের শারদীয়া অপারবাংলার বৃহৎ সূচিপত্র নিয়ে কিছু কথায়। শারদীয়াতে আমরা শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়েছি শ্রদ্ধেয় সমরেশ মজুমদারকে বিবিধ বিভাগে। তাঁর বিশেষ ঘনিষ্ঠ এবং এই মুহূর্তে বাংলা সাহিত্যের দুই মহীরুহ নবকুমার বসু এবং ত্রিদিব কুমার চট্ট্যোপাধ্যায় তাঁদের একান্ত মুহূর্ত নিয়ে কলম ধরেছেন স্মৃতিচারণার পাতায়। “ময়দান” নিয়ে সুপ্রিয় চৌধুরীর লেখা (বিবিধ – ফিচার) আমাদের নস্টালজিক করে দেয় বাঙালির প্রাণ, সেন্টিমেন্ট, গর্ব ইস্ট-মোহন এর বিগত শতকের টুকরো টুকরো অজানা ঘটনা নিয়ে। এবারের রম্য রচনা (বিবিধ বিভাগে) গুলো দম ফাটানো হাসির। দুই বাংলার প্রখ্যাত লেখকরা কলম ধরেছেন প্রবন্ধ এবং অনুবাদ বিভাগে।

এসময়ের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ভার্সাটাইল ব্যক্তিত্ব; একাধারে লেখক, নাট্যকার, পরিচালক, কবি এবং অভিনেতা ব্রাত্য বসু র সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়েছেন অপারবাংলা পরিবারের অন্যতম সদস্য এবং বিশিষ্ট কবি ও সুলেখিকা অদিতি বসুরায়। বিনোদন বিভাগে অদিতি সুন্দর ভাবে তা ভাগ করে নিয়েছে আমাদের সাথে। বছরে চারবার নবরাত্রি পালন করা হয়। সারা ভারতবর্ষের নবরাত্রির নৈবদ্য নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ লেখা “রান্নাঘর” বিভাগে, পাঞ্চালি দত্তর কলমে। ভ্রমণ কাহিনী রয়েছে উত্তর আমেরিকা ও উত্তর বঙ্গ নিয়ে।              

শারদীয়া অপারবাংলা ৪টি উপন্যাস/ঔপন্যাসিকা, ৩৪টি গল্প, ২৯টি কবিতা, ১৭টি অণুগল্প, ৪টি অনুবাদ, ৫টি প্রবন্ধ, ৮টি বিভিন্ন লেখা বিবিধতে (ফিচার, রম্য, স্মৃতিচারণা), ৩টি ভ্রমণ, বিনোদন ও রান্নাঘরের লেখাতে সমৃদ্ধ। সারা বিশ্বের নবীন, প্রবীণদের এই সম্ভার আপনারা পড়ুন সম্পূর্ণ নিখরচায় ঘরে বসে, এটাই আমাদের শারদীয়ার উপহার আপনাদের কাছে। আরো ভালো লাগবে আপনারা “সেরা অপারবাংলা” সংকলন পত্রভারতী সহ কলেজ পাড়ার অনেক দোকানে এবং অনলাইন এ সংগৃহ করলে। বিস্তারিত তথ্য পাবেন অপারবাংলা ওয়েবসাইট এ। 

শুভ শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো অপারবাংলা পরিবার থেকে।

সুস্থ থাকুন, বাংলা কে এগিয়ে নিয়ে চলুন।

আনন্দ হোক!

 

ধন্যবাদ

শুভ নাথ

সম্পাদক, অপার বাংলা সাহিত্য পত্রিকা              

http://www.aparbangla.net

 

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *