পনেরোই এপ্রিল, পয়লা বৈশাখ। সাড়ম্বরে বাঙালি বরণ করে নিল নতুন আরেকটা বাংলা ক্যালেন্ডারকে। দুপুরের গরমে নতুন পোশাকে ঘামতে ঘামতে রসনাতৃপ্তির সময়, বৈশাখকে আদর করে “এসো হে বৈশাখ” বলে গানে গানে ডাক পাঠানোর সময়, মনে হওয়াটা স্বাভাবিক যে, এমন জ্বালা ধরানো গরমে কেন বাঙালি আনন্দ উৎসব করে বরণ করা শুরু করেছিল নতুন বছরকে? এমন একটা কার্যের কারণ সম্পর্কে জানতে গেলে কার্য মানে মানুষের কাজের ইতিহাসের পাতাই উল্টাতে হবে।
চৈত্রে ফসল কাটা শেষ, চাষীকে এবার ছুটতে হবে রাজার ঘরে খাজনা জমা দিতে। খাজনা দেওয়ার মতো একটা কষ্টকর কাজকে গরিমায় মুড়ে দেওয়ার জন্য, তাকে মহান কাজ হিসাবে প্রতিপন্ন করার জন্য রাজারা নিলেন এক কৌশল। রাজাকে খাজনা দেওয়াতেই প্রজার পূণ্য, এই ধারনা গরীব প্রজার মনে গেঁথে দিতে তারা খাজনা দেওয়ার মতো অবশ্যকর্তব্য বিষয়টির নাম দিলেন ‘পূণ্যাহ’। বিশেষ দিনে রাজসন্দর্শনে যাবে প্রজা, ঢাকঢোল, কাঁসর ঘন্টা বাজিয়ে, সঙ্গে থাকবে প্রণামী, যা আসলে খাজনা। সব বিষয়টা এমনভাবে সাজিয়ে দেওয়া দেখে মনে হবে যেন, প্রজারা অন্তরের খুশিতে রাজার ডালি ভরে দিচ্ছে তাদের ফসলের অগ্রভাগ দিয়ে। রাজদরবারে যাবে আর আমোদ আহ্লাদ হবে না? গরীব প্রজারা তাই পরবে নতুন বস্ত্র, নাচে গানে বাজনায় ভুলবে সারাবছরের কষ্ট আর পরিশ্রমের কাহিনী। আর রাজার অর্থমন্ত্রী কি করবে? পুরনো বছরের দেনা পাওনার হিসাব মিটিয়ে নতুন খাতা খুলবে নতুন ফসল ওঠার সময় দেওয়া খাজনার হিসাব রাখতে। নতুন খাতায় নতুন হিসাব, সেই হল ‘হালখাতা’র প্রচলন। এখনো বাংলার বহু ব্যবসায়ী পয়লা বৈশাখে ‘হালখাতা’র ধারাটি ধরে রেখেছেন।
‘নতুন করে শুরু করছি’, এটা ভাবতে পারলে আমাদের সকলেরই খুব সুবিধা হয়, মনের ওপর থেকে চাপ কমে যায় অনেকটাই। ‘আগে যা হয় নি, এবার তা হবে’, এমন একটা সিদ্ধান্তকে কার্যকরী করতে গেলে একটা উপলক্ষ্যের প্রয়োজন হয়। নতুন বছর হল সেই উপলক্ষ্য, সে যেন একটা দাগ, যার ওপারটা অন্ধকারে ঢাকা থাকলেও এপারে রয়েছে আলোর সমূহ সম্ভাবনা। এমন ভাবনাকে ফোকাসে রেখে আমরাও স্বাগত জানাচ্ছি চোদ্দশো বত্রিশ সালকে, কামনা করছি এই বছর আমাদের সকলের জন্য শুভ হবে, সকলের হাতে হাতে পৌঁছে যাবে একটি-দুটি ইচ্ছেপূরণের চাবিকাঠি।
অপারবাংলাই কেন সামিল হবে না নতুন বছরে নতুন ভাবে নতুন ভাবনা নিয়ে পাঠকের দরবারে আসতে? এপার ওপার সাগরপাড়ের অনেক বিশিষ্ট লেখক অপারবাংলার জন্য এবার প্রথম কলম ধরেছেন। নিয়মিত বিভাগগুলো ভীষণ ভাবে আকর্ষণীয় ভিন্ন স্বাদের লেখায়। ঔপন্যাসিকা, গল্প, প্রবন্ধ, রম্য, কবিতা ইত্যাদিতে পরিপূর্ণ এবারের নববর্ষ এর অপারবাংলা এপ্রিল সংখ্যা।
আনন্দ হোক!
সম্পাদক
অপারবাংলা ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন