bibidho-dadar-songe-deshe-bideshe

দাদার সঙ্গে দেশে-বিদেশে
স্মৃতিচারণা
ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়


তিনি চলে গেছেন ৮ই মে। বিচিত্র সব স্মৃতির বোঝায় এখনও চাপা পড়ে আছি। মাত্র বছর কুড়ির ঘনিষ্ঠতা আমাদের, তার মধ্যেই আমার সঙ্গে তাঁর রসায়ন এমন দাঁড়াল যে, সুযোগ পেলেই আমি ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছি, অসমবয়সী বন্ধু, অভিভাবক তিনি।

হ্যাঁ, আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এই একটি বিষয়ে আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই, সেটা হল সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া। ওর দুই মেয়ে, স্নেহের দোয়েল ও পরমার কথা মাথায় রেখেই বলছি। কম করে কুড়িবার, তার মধ্যে দেশের বাইরে আমেরিকা, কানাডা চারবার, এবং বাংলাদেশ।

ছোট ছোট কয়েকটা দৃশ্য। শুরু করছি চা-বাগান দিয়ে।


প্রথম দৃশ্য।


সুভাষিণী টি গার্ডেনে ওঁর অনুজপ্রতিম অন্বেন্দু রায়ের বাংলোয় গল্প হচ্ছে। দাদা বললেন, ‘গাড়িটা দিও। কাল বিকেল বিকেল চিলাপাতা ফরেস্টে ত্রিদিবকে নিয়ে যাব।’

ড্রাইভার তাঁর পরিচিত। তখন গোধূলিবেলা। দু’ধারে নিবিড় অরণ্য চিরে জীপ পিচঢালা রাস্তা ধরে ছুটে চলেছে। সমরেশদা বললেন, ‘এখানে থামাও।’

একটা কালভার্ট। নীচে দিয়ে কলকল শব্দে জলস্রোত বয়ে যাচ্ছে। সারথি একটু চিন্তাচ্ছন্ন কণ্ঠে বলল, ‘স্যার, এখানে? এখানে কিন্তু…’

‘জানি। সেজন্যেই ওকে নিয়ে এসেছি। ত্রিদিব, এসো।’

নামলাম। হু হু বাতাস, পাতায় পাতায় মর্মরধ্বনি। ‘কী ত্রিদিব, কেমন লাগছে? গাছেদের গন্ধ, শব্দ, ওদের নিজেদের কথা শুনতে পাচ্ছ?’

শরীরে কাঁটা ফুটল। শেষ বিকেলের আলো চুঁইয়ে চুঁইয়ে এসে পড়েছে বনস্পতিদের ফাঁক দিয়ে, অদ্ভুত ভিজে ভিজে মাদক গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা মারছে। স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি দুজনে। সমরেশদা ফিসফিস করে বললেন, ‘এই গন্ধ, এই শব্দ কতবার শুনেছি। তবু ওরা বারবার টেনে আনে উত্তর বাংলায়।’

ঠিক তখনই ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে এল, ‘স্যার, ওই যে! শিগগির উঠে পড়ুন স্যার। একবার ওরা দেখে ফেললে…!’

ওর দৃষ্টি অনুসরণ করতেই সর্বাঙ্গ দিয়ে বরফস্রোত নেমে গেল। একটু দূরেই কয়েকটি চলমান ছোট বড় মিশমিশে কালো পাহাড়। তাদের পিঠে মেখে আছে কমলা রঙ। বনের বাম দিকে দিয়ে বেরিয়ে হেলেদুলে নেমে যাচ্ছে ডানদিকে।

‘হাতির পাল।’ সমরেশদা নিচুগলায় বললেন, ‘ওরা এদিকে ফিরলে আমাদের আর জীবন্ত ফেরা যাবে না। অন্ধকার নেমে এলে এই ঝোরাতেই জল খেতে আসবে চিতাবাঘ, হরিণ, আরও সব বনের রাজা প্রজারা। এর খুব কাছে একটা সল্ট লিংক আছে। সেখানে ওরা নুন চাটতে আসবেই।’

প্রায় আধঘন্টা কেটে গেল। নিঃশব্দে গাড়ির ভিতর ঢুকে বসে আছি আমরা। সারথি সবদিক দেখে গাড়িতে স্টার্ট দিল, ‘স্যার, লাইন ক্লিয়ার। যাব তো?’

সমরেশদা সিগারেট ধরিয়ে বললেন, ‘হুম, চলো। ভেবেছিলাম, ওকে কাছ থেকে গণ্ডার দেখাব। তোর্ষার এপারে ওরা নদী পেরিয়ে চলে আসে। আজ আর দরকার নেই।’

পরদিন সুভাষিণী টি গার্ডেনের গায়ে নদীর কাছে এসে স্পষ্ট দেখেছিলাম, ওপারে জলদাপাড়া জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে তিন-চারটে গণ্ডার ঘুরে বেড়াচ্ছে।


দ্বিতীয় দৃশ্য।


কলকাতা থেকে ফ্রাঙ্কফুর্ট হয়ে কানাডার রাজধানী টরন্টো। টরন্টো থেকে উত্তর কানাডার বড় শহর ক্যালগেরি। সেখান থেকে ফের ফ্লাইট বদলে এডমান্টন এয়ারপোর্টে যখন নামলাম, সমরেশদা আমার দুজনের অবস্থাই বেশ কাহিল। সব মিলিয়ে ৩৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। এমনিতেই আসার সময় কলকাতার ব্যবস্থাপক আর.পি-দা বাথরুমে পড়ে গিয়ে আসতে পারেনি, ফলে তার যা যা আনার কথা ছিল, আমাদেরকেই বইতে হচ্ছে। খুবই বিপর্যস্ত অবস্থা।

ছোটখাটো এয়ারপোর্ট, অনেকটা আমাদের দেশের রাঁচি বা পাটনা শহরের মতো। বেশ অবাক হয়ে দেখলাম, বেশ কিছু বাঙালি মানুষ আমাদের দলকে অভ্যর্থনা জানাতে এসে হাজির হয়েছেন। দল মানে পরদিন অর্থাৎ শুক্রবার থেকে হতে চলা ‘বঙ্গমেলা’র গেস্টরা, যাদের মধ্যে আমরা ছাড়াও আছেন নাটকের দল নিয়ে দেবশঙ্কর আর গৌতম হালদার, গানের দল নিয়ে শ্রীকান্ত আচার্য, লোপামুদ্রা মিত্র, জয় সরকার, আবৃত্তির জগন্নাথ বসু, উর্মিমালা বসু। আসার পথে খবর পেয়েছি, আগের ফ্লাইটে বিখ্যাত ভূমি ব্যান্ডের সুরজিত, সৌমিত্র ও তাদের পুরো দল এসে গেছে।

সমরেশদা বললেন, ‘এটা তো ছোট শহর। আপনাদের অনুষ্ঠানে লোক হবে? মানে এতজনকে ডেকে এনেছেন? খরচও তো আছে। তত বাঙালি আছে এখানে?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, প্রচুর বাঙালি। বেশিরভাগই জব করে ক্যালগেরিতে। এখান থেকে থ্রি আওয়ার জার্নি। আসলে এডমান্টনে কস্ট অফ লিভিং কম। পরিবেশও সুন্দর।’ অন্যতম কর্মকর্তা প্রভাকর বললেন, ‘এই তো, আমারও ফ্যাক্টরি ক্যালগেরির কাছে।’

‘ফ্যাক্টরি! কীসের ফ্যাক্টরি?’

‘সলিড ক্রুড অয়েল।’ প্রভাকর বললেন, ‘আপনারা তো তরল সোনার দেশদের কথা জানেন। আর পৃথিবীর এইপ্রান্তে মাটিতে মিশে আছে তরল সোনা – পেট্রল। ক্যালগেরি থেকে শুরু করে এরকম খনি ছড়িয়ে আছে বহুদূর অব্দি। সুতরাং অঢেল কাজের সুযোগ, বড় বড় কোম্পানিরা এখানে এক্সট্রাকশনের ফ্যাক্টরি করেছে, আরও করছে। কলকাতার প্রচুর ইয়াং মাইনিং ইঞ্জিনিয়াররা আসছে, ডলারে মাইনে। শুধু কলকাতা কেন, ভারতের নানা রাজ্য থেকে তারা আসছে, প্রচুর শ্রমিকও আসছে ভারত, বাংলাদেশ থেকে। বাঙালি আর পাঞ্জাবি কমিউনিটি বেশ স্ট্রং।’

‘ইন্টারেস্টিং!’ সমরেশদার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে, ‘সলিড ক্রুড অয়েল, আগে শুনিনি।’

‘হ্যাঁ, আমরা যখন এসেছি, তখন অবশ্য এত খনি আবিষ্কার হয়নি। আর শুধু তেল নয়, কানাডার এই পশ্চিমে মাটির নীচে অনেক রিসোর্স, আয়রন, কোল, ইউরেনিয়াম ওর। ভ্যাঙ্কুভার হয়ে আলাস্কা পর্যন্ত।’

‘ভ্যাঙ্কুভার! সে তো প্যাসিফিক কোস্ট। এখান থেকে কতদূর?’

‘দশ-এগারো ঘন্টা। এখানে সাইট সিয়িং যশপার ন্যাচারাল পার্ক, লেক লুইস… সব নিয়ে যাব আপনাদের।’

একজন সুটেড বুটেড ভদ্রলোক এগিয়ে এলেন, ‘গুড ইভনিং সমরেশবাবু ইন দিস বিউটিফুল সিটি অফ আলবার্টা। আমি বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। আপনার লেখা অনেক পড়েছি।’

‘তাই? থ্যাংক ইউ।’

‘হ্যাঁ, আপনার ‘বিবর’, ‘দেখি নাই ফিরে’… অ্যামেজিং!’

সমরেশদা বিড়বিড় করলেন, ‘যা শালা! বসুর সঙ্গে গুলিয়েছে। এটাই মুশকিল। এরা বড় সমরেশদার পরে আর কিছু পড়েনি।’

‘কিছু বললেন? আমার হবি পেইন্টিং। কলকাতায় ভাবছি একটা এক্সিবিশন করব। চলুন স্যার। এখন আমাদের একটা পার্টি আছে। কিক অফ পার্টি। ড্রিংকস অ্যান্ড ডিনার।’

‘সরি। আমরা এক্সট্রিমলি টায়ারড।’ সমরেশদা মুখের উপর বললেন, ‘এখন আগে হোটেলে যাব, রেস্ট নেব।’

‘কিন্তু… আজ তো আলাদা করে ডিনারের অ্যারেঞ্জমেন্ট…’

‘উই উইল ম্যানেজ। কোথাও যেতে পারছি না প্রেসিডেন্ট স্যার।’

প্রভাকর তাড়াতাড়ি সামাল দিলেন, ‘ঠিক আছে দাদা। আপনারা আমার বাড়িতে খেয়ে নেবেন।’

এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে এসেই চমকে উঠেছি। ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আমাদের ছেঁকে ধরল। এক একেকটার সাইজ বোলতার মতো। রীতিমত হুল ফুটিয়ে কামড়াচ্ছে, শরীরের মুক্ত জায়গায়।

‘এ কী মশাই! আপনার বিউটিফুল সিটিতে এইরকম মশা! এ তো গড়িয়া, সোনারপুরকে টেক্কা দেবে।’

‘ইয়ে… এবার হঠাৎ সামারে কদিন এমন বৃষ্টি হল যে মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন থেকে ট্রিটমেন্ট করার সময় পায়নি।’

‘ধুর মশাই, রাবিশ!’ সমরেশদা আমায় চোখ টিপলেন, ‘বুঝলে ত্রিদিব, ভেবে ফেলেছি, আমার নেক্সট গল্প – এডমান্টনের মশা।’

‘এই রে দাদা, প্লিস।’ সকলে হাউমাউ করে উঠলেন, ‘বদনাম হয়ে যাবে।’

‘ব্ল্যাক লেবেল আছে কি? তাহলে ভাবব। চলুন, দাঁড়াতে পারছি না। যেটুকু রক্ত এই জার্নির পরে অবশিষ্ট ছিল, সব মশাদের পেটে যাবে। বাপরে!’


তৃতীয় দৃশ্য।


মুক্তধারার আন্তর্জাতিক বইমেলার দ্বিতীয় দিনের মেলা শেষ হয়েছে। হুমায়ূন আহমেদ এসেছেন, তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে রাত হয়ে গেছে। সমরেশ মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীরের প্রবীর মজুমদার ও আমি জ্যাকসন হাইটসের স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সাবওয়ে (মেট্রো) স্টেশনের কাছে চলে এসেছি।

সমরেশ মজুমদার হঠাৎ আড়মোড়া ভেঙে বললেন, ‘ত্রিদিব, আমাদের জয়েন্ট ফান্ডে কত আছে?’

‘চল্লিশ মতো।’

‘গুড। মনে হয়, হয়ে যাবে। আজ আর মেট্রোতে যেতে ইচ্ছে করছে না। কুইন্স স্টেশনে নেমে অতটা হাঁটা! একটা ক্যাব ডাক।’

পরপর ক্যাব যাচ্ছে। কেউ পঞ্চাশ ডলারের নীচে যাবে না, শ্রাগ করে চলে যাচ্ছে। সমরেশদাও একগুঁয়ে, কিছুতেই ত্রিশের বেশি দেবেন না।

ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছুঁই ছুঁই। একটা গ্রিন ক্যাব এসে দাঁড়াল। যাবে না জেনেও জিগ্যেস করলাম, ‘কুইন্স, হাউ মাচ? উই থ্রি।’

‘থার্টি বাকস।’

‘দেখলে? উঠে পড়ো। অনেস্ট লোকও আছে।’

তিনজন উঠে পড়লাম। মেট্রো থেকে নেমে হাঁটতে হবে না, ভেবে মন ফুরফুরে। সমরেশদা আবার পিছন থেকে গুনগুন করে গাইছেন, ‘কাজল নদীর জলে…’

চালক নির্ঘাত এশিয়ান, অন্তত ওর চামড়ার রঙ তাই বলছে। কিন্তু চুপচাপ, কথা বলছে না। শুধু শুধু মাঝে মাঝেই রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে পিছনে দেখছে। একটু অস্বস্তি হচ্ছে। এই শহরে ছিনতাইবাজের অভাব নেই। তেমন কোনো পাল্লায় পড়লাম নাকি?

শেষে নিজেই উপযাচক হয়ে জিগ্যেস করলাম, ‘আর ইউ এশিয়ান?’

‘ইয়া।’

‘ফ্রম হুইচ পার্ট? ইন্ডিয়া?’

লোকটা আমাদের বেমালুম চমকে দিয়ে বলে উঠল, ‘দাদা, আপনেরা কলকাতার?’

‘হ্যাঁ হ্যাঁ, আপনি? আপনি কি বাংলাদেশ?’

‘জি দাদা। চিটাগং। আপনেরা জিগাচ্ছিলেন না, তাই আমিও কই নাই। আপনেগো দেইখাই বুঝছি, বাঙালি। তাই ত্রিশ টাকা কইছি। এখানে কুইন্সে কি রিলেটিভ থাকেন?’

‘হ্যাঁ ভাই। ওর কাছেই উঠেছি।’

‘বইমেলায় আইছেন নিচ্চয়? আমি কাল যাব। সানডে আমি ক্যাব চালাই না। ফেমিলি নিয়া যাব। অনেক বাংলা বই কিনব। প্রতি বচ্ছর কিনি, মেলা থেকে।’

বলেই সে গাড়িতে রবীন্দ্রসঙ্গীত চালিয়ে দিল, ‘গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ…’

‘কাদেরি কিবরিয়া, না? বড় ভালো।’

‘জি দাদা। আমি দেবব্রত বিশ্বাসের গানও অনেক পছন্দ করি।’

একের পর এক গান বাজছে। মন অদ্ভুত তৃপ্তিতে ভরে উঠেছে। চালককে শামার (আমাদের নিউইয়র্কের বাসা) ঠিকানা বলে দিয়েছি, জিপিএস দেখে ক্যাব এগিয়ে চলেছে। কুইন্স স্টেশন পার হয়ে এল। এবার সেই বিশাল গোরস্থান। তার শেষপ্রান্তে এসে গাড়ি থামল, ‘দাদা, আইয়া পড়ছি।’

বলেই মানুষটা পিছনে গিয়ে সমরেশ মজুমদারের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে পড়ল, ‘সালাম দাদা।’

‘সালাম ভাই। ত্রিদিব, পেমেন্ট করে দাও।’

লোকটা আমাদের ফের চমকে দিয়ে হেসে উঠল, ‘দাদা, আপনারে চিইনা ফ্যালাইছি। এক মিনিট দাদা।’ একছুটে গিয়ে ক্যাবের ড্যাশবোর্ড খুলে দুটো বই বের করে আনল, ‘দাদা, অটোগ্রাফ দেন।’

আমরা স্তম্ভিত। বইদুটির নাম – ‘গর্ভধারিণী’ ও ‘কালবেলা’।

সমরেশদাও নিশ্চুপ। মানুষটি ততক্ষণে পকেট থেকে একটা পেন বের করে এগিয়ে দিয়েছে, ‘দাদা, প্লিস লেইখা দেন আমার আর বউয়ের নাম, জাকির আর আলোকে। আরেকটা রিকোয়েস্ট দাদা।’ সে ক্যাবের ভিতর থেকে একটা ক্যামেরা বের করে আনল। আমাকে দিয়ে বলল, ‘একটা ফটো তুইলা দেন দাদার সাথে। এই ক্যাবের সামনে। না হইলে আলো বিশ্বাসই করবে না। প্লিস দাদা। আজ যে আমার কতবড় ভাগ্য, ইনশাল্লাহ।’

ছবি তুলে ওর ক্যামেরা ফেরত দিয়ে ত্রিশ ডলার এগিয়ে ধরেছি। জাকির হাতজোড় করে এতবড় জিভ কাটল, ‘কী কন দাদা, আপনের মাথা খারাপ হইছে? সমরেশ মজুমদার সার আমাগো কাছে আল্লা, ভগবান। উনার সব বই আছে বাড়িতে, যা লেখেন, খবর পাইলেই কিনি। তিনি আমার মতো সামান্য মানুষের গাড়িতে উঠছেন, ভাবা যায়! আর আমি আপনেগো কাছ থেকে ভাড়া নেব! ভাবলেন কী কইরা? দাদার এই সই আর ফটো আমার কাছে অমূল্য। আমি বাঁধায়ে রাখব এই ফটোখান চিরকাল।’

‘চলি দাদা।’ জাকির আমাদের মাথা নুইয়ে সালাম করে ক্যাবে গিয়ে উঠল। গাড়ি স্টার্ট করেই প্রবল গতিতে বেরিয়ে গেল। বুঝলাম, ও যতক্ষণ না ওর বউ আলোকে সই আর ক্যামেরার ছবি না দেখাতে পারছে, ওর শান্তি নেই।

প্রবীরদা বলে উঠলেন, ‘ভাবা যায় না দাদা।’

এরকম অজস্র ঘটনা ছড়িয়ে আছে আমার স্মৃতিতে, থেকেও যাবে চিরকাল।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *