bibidho-kolkatar-pathanatika

সেদিনের কলকাতার পথনাটিকা
স্মৃতিকথা
শেখর বসু


ছয়ের দশকের কলকাতার একেবারে গোড়ার দিকের কথা বলছি। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাট তখন শেষ আমার। হাতে প্রচুর সময়। বিস্তর গল্পের বই পড়ি। কিছুটা সময় সাহিত্য করি। তারপরেও অনেক সময়। টিভি, কম্পিউটার তখন দূর ভবিষ্যতের গর্ভে। বারোমেসে ক্রিকেট, ফুটবল চালু হয়নি সেই আমলে। বিনোদন বলতে ছিল শুধু সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রাপালা, গানের জলসা–এইসব। উত্পল দত্তের কয়েকটি নাটক দেখে তখন তাঁর বেশ অনুরাগী হয়ে পড়েছিলাম। একদিন হঠাত্ কানে এলো, হ্যারিসন রোড আর আমহার্স্ট স্ট্রিট সংযোগস্থলের কাছে একটি জায়গায় তিনি সেদিন তাঁর দলবল নিয়ে পথনাটিকা করতে আসবেন।

কখন? না, এই বিকেল-সন্ধে নাগাদ। আমি তখন থাকি উত্তর-পূর্ব কলকাতার পৈতৃক বাড়িতে। আমাদের বাড়ি থেকে ওই জায়গাটায় হেঁটে পৌঁছতে মিনিট কুড়ি-পঁচিশ লাগে। বিকেল হতে না হতেই হাজির হয়ে গিয়েছিলাম ওখানে। আরও কিছু কৌতূহলী মানুষ জুটে গিয়েছিল। শুনলাম, পথনাটিকার জায়গা ঠিক হয়েছে আমহার্স্ট স্ট্রিট পোস্টাফিসের সামনে।ওখানে রাস্তাটা বেশ চওড়া। অল্প-অল্প করে চারপাশে ভিড় গজিয়ে উঠেছিল কিছুটা। সামনে নির্বাচন, নির্বাচন উপলক্ষে কোনও-কোনও দলের পক্ষ থেকে তখন পথনাটিকার আয়োজন করা হত। উদ্দেশ্য বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের প্রচার। বক্তৃতায় যেসব কথা নেহাতই ম্যাড়মেড়ে লাগত, নাটকে গল্পের আঙ্গিকে কুশীলবদের অভিনয়ে তা উপভোগ্য হয়ে উঠত। আর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা যদি বড় মাপের হতেন, তা হলে তো বিরাট ব্যাপার! দর্শকদের কাছে তা বিনিপয়সার ভোজের মতো। এই ধরনের পথনাটিকায় বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর লাভ হত নিশ্চয়ই, কিন্তু কতটা তা পরিমাপ করার কোনও উপায় আমাদের জানা ছিল না। কোনও রাজনৈতিক পন্থায় একটু হয়তো ঝোঁক ছিল আমার, কিন্তু কোনও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না কখনও। পথনাটিকা দেখতে যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নাটক দেখার আনন্দ পাওয়া। আর নাটক-রচয়িতা, অভিনেতা ও নির্দেশক যদি উত্পল দত্ত হন—তাহলে তো কথাই নেই!

উত্পল দত্ত ছিলেন রাজনীতি-সচেতন পরিচালক ও অভিনেতা। যে পথনাটিকা তিনি করতে আসছেন তা বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্যে। রাস্তায় উত্সাহী দর্শকের সংখ্যা একটু-একটু করে বেশ খানিকটা বেড়ে ওঠার পরে উত্পল দত্ত এলেন। সঙ্গে আরও জনাপাঁচ। প্রত্যেকের পরনেই সাধারণ পোশাক। উত্পল দত্ত পরেছিলেন হাওয়াই শার্ট আর প্যান্ট। সঙ্গীদের নিয়ে ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়লেন তিনি। কয়েকজন তরুণ, বোধহয় ওঁর দলেরই, লোকজন ঠেলেঠুলে মধ্যিখানের জায়গাটিকে একটু বাড়িয়ে নিয়েছিল।

ইতিমধ্যে দিনের আলো ফুরিয়েছে। পথের ধারের আলোগুলো জ্বলে উঠেছে। দোকানপাট, আশেপাশের বাড়ির আলোও আলোকিত করেছে ওই জায়গাটিকে। ওই আলোই একমাত্র আলো। মঞ্চ নেই, মাইক নেই, কুশীলবদের বিশেষ কোনও সাজগোজও নেই। ওঁরাই করবেন পথনাটিকা।

চিন-ভারত লড়াই তখন সদ্য-সদ্য থেমেছে। এখানকার কমিউনিস্টরা তখন ভীষণ ভাবে কোণঠাসা। ভিড় আর একটু জমাট হতেই শুরু হল পথনাটিকা। নাটকের কী নাম ছিল আজ আর তা মনে নেই, তবে সেটি ছিল পুরোপুরি রাজনৈতিক। নাটকের চরিত্র গুটিপাঁচেক, কী নাম চরিত্রদের—নাটক একটুখানি গড়াতেই তা জানা হয়ে গিয়েছিল দর্শকদের। নাটকে উত্পল দত্ত অভিনীত চরিত্রটি ছিল একটু রগুড়ে স্বভাবের মানুষ, নানা ধরনের লঘু বিষয় নিয়ে আর একজনের সঙ্গে খোশগল্প জুড়ে দিয়েছিল সে। আর তিনটি চরিত্র উঁচু গলায় তীব্র ভাষায় সমানে আক্রমণ করে যাচ্ছিল ওই চরিত্রটিকে। ওই তিন চরিত্রের মুখে বিপ্লবের ধারালো সব শপথ। শোষণহীন সমাজের কথা, সাম্যের বাণী। সর্বহারাদের মাথা তুলে দাঁড়াবার ঘোষণা। সেই সঙ্গে পুঁজিপতি আর জোতদারদের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা। শেষে সরাসরি আক্রমণ উত্পল দত্ত অভিনীত চরিত্রটিকে—আপনার মতো দালালরাই দেশের শত্রু। আপনার মতো লোকদের ফাঁসিকাঠে ঝোলানো উচিত।

এই যে এত আগুনঝরা চড়া গলার আক্রমণ, ভাষণ, সেদিকে উত্পল দত্তের যেন কানই ছিল না; রগুড়ে ভঙ্গিতে আর একজনের সঙ্গে হাসি-মশকরা করেই যাচ্ছিল। ওদিকে ওই তিনজনের ব্যক্তিগত আক্রমণের মাত্রা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছিল। হঠাত্ উত্পল দত্ত তাদের দিকে ফিরে তাঁর সেই বিখ্যাত ক্যারিকেচার করার গলায় বলে উঠলেন, “ চিন কেন ভারত আক্রমণ করেছে?” বলার ঠিক পরেই মুখ ঘুরিয়ে অবিকল আগের ভঙ্গিতে আবার খোশগল্পে মেতে উঠলেন সেই বন্ধুটির সঙ্গে।

গোটা নাটকে উত্পল দত্তের মুখে ছিল ওই একটিইমাত্র সংলাপ। লাগাতার আক্রমণের মধ্যে মাঝে মাঝে মুখ ফিরিয়ে ওই একটিই উত্তর দিচ্ছিলেন, পরমুহূর্তেই সব কিছু ভুলে গিয়ে আবার বন্ধুর সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠছিলেন আগের মতো। উত্তরটি দেওয়ার ভঙ্গি ওই ক্যারিকেচারের ঢঙে। যতবারই ওই উত্তরটি তিনি দিচ্ছিলেন, ততবারই অট্টহাস্য উঠছিল দর্শকদের মধ্যে।

পথনাটিকাটি চলেছিল মিনিট-কুড়ি ধরে। উত্পল দত্ত তাঁর বিখ্যাত মজাদার ভঙ্গিতে সব কথার জবাবে নির্দিষ্ট বিরতিতে ওই একটিমাত্র সংলাপই আউড়ে গিয়েছিলেন শুধু। এবং প্রতিবারই সমবেত শ্রোতারা ওই উত্তরটি শুনে হো-হো করে হেসে উঠেছিল। চিন-ভারত যুদ্ধের অব্যবহিত পরে জনসাধারণের কাছে ওই প্রশ্নটি ছিল জ্বলন্ত একটি প্রশ্ন। কিন্তু সেই প্রশ্নটিকেই ছোট্ট একটি পথনাটিকায় হাস্যকর করে তুলেছিলেন উত্পল দত্ত। নাটকের শেষে হাসতে হাসতেই পথের মধ্যে জমে ওঠা দর্শক বাড়ির পথ ধরেছিল সেদিন।

ওই সময় উত্পল দত্তের আরও কয়েকটি পথনাটিকা দেখেছি। সবক’টিই ছিল রাজনৈতিক প্রচারমূলক। কিন্তু রঙ্গব্যঙ্গের সাহায্যে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার ক্ষেত্রে অব্যর্থ ছিল প্রযোজনাগুলি।

পরে বিভিন্ন সময়ে ওই সব পথনাটিকার প্রসঙ্গে উত্পল দত্ত বিস্ময়কর প্রতিভা চার্লি চ্যাপলিনের কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, প্রবল পরাক্রমশালী অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে লড়াই করার সবচেয়ে বড় উপায় হল তাকে হাস্যকর এক ভাঁড় বানিয়ে দেওয়া। তাহলে পুরো ছবিটাই পালটে যাবে। স্বৈরাচারী হয়ে উঠবে তখন নখদন্তহীন, স্থবির, হাস্যকর ক্লাউন। হিটলারকে নিয়ে চ্যাপলিন ঠিক এই কাণ্ডটাই করেছিলেন তাঁর ‘দি গ্রেট ডিকটেটর’ ছবিতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলার দোর্দণ্ডপ্রতাপ, হাড়-হিম-করা কাণ্ড ঘটিয়ে চলেছে একটার পর একটা, শুরু করে দিয়েছে ইহুদি নিধনের হৃদয়বিদারক যজ্ঞ; ঠিক সেই সময়, অর্থাৎ ১৯৪০ সালে, হিটলারকে ভাঁড় বানিয়ে ছবি তৈরি করেছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। এমন ছবি বানাবার কল্পনাও কেউ তখন করতে পারেননি। এই ছবিটি বানাবার পরে চার্লিকে তখন নানা ধরনের বিড়ম্বনার মধ্যে পড়তে হয়েছিল। ল্যাটিন আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে ছবিটি প্রদর্শন করার অনুমতিও দেওয়া হয়নি। এ কাহিনি ধরা আছে চার্লির অসামান্য আত্মকথা ‘মাই অটোবায়োগ্রাফি’তে। এই বইটিও খুব প্রিয় ছিল উত্পল দত্তের। চার্লির কাছ থেকে শিক্ষাও নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর মানসপ্রকৃতিও বুঝি এই শিক্ষার অনুকূল ছিল। নিষ্ঠূর অত্যাচারীকে ভাঁড় বানিয়ে দিতে পারলে তার সম্পর্কে জনগণের আতঙ্কের ভাবটিই দূর হয়ে যায়। উত্পলের পথনাটিকাগুলির মেজাজ ছিল এই সুরেতেই বাঁধা।

শিশির ভাদুড়ী বলেছেন, আমাদের দেশে যাত্রাপালা চার-পাঁচশো বছর ধরে লোকের মনে ভাবের তরঙ্গ তুলেছে। সেই যাত্রাপালাকে মরে যেতে দিলে তা দেশবাসীর পক্ষে গৌরবের বিষয় হবে না। এই কথাটি উত্পলকে খুব ভাবিয়েছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, মুকুন্দদাসের যাত্রা ভাবপ্রকাশের এমন একটি মাধ্যম ছিল যা জনতাকে উদ্বুদ্ধ করত বারবার। আমাদের মতো দরিদ্র, অশিক্ষিত দেশে যাত্রার মতো বার্তাবহ হাতিয়ার বোধহয় আর কিছুই নেই। এই সব ভাবনা ও ঘটনাও পথনাটিকার দিকে ঠেলে দিয়েছিল উত্পলকে।

বের্টল্ট ব্রেখ্‌টের ভাবশিষ্য ছিলেন উত্পল। ব্রেখ্‌ট বলতেন, নাটকে সহ-নাট্যকারের নাম জনতা। এই জনতাকে অগ্রাহ্য করা যায় না। নাটকের ভালো-মন্দ সম্পর্কে রায় দেবে জনতাই। সেই রায় মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ব্রেখ্‌ট, অনেক সময় তাদের রায় অনুসারে নাটকে রদবদলও করতেন। তাঁর নাটক ছড়িয়ে পড়েছিল প্রান্তিক জনপদে।

ব্রেখ্‌ট একবার শেকসপিয়রের নাটকের কঠিন সমালোচনা করেছিলেন। ভাবশিষ্য হয়েও গুরুর ওই সমালোচনা মানতে পারেননি শেকসপিয়র-অন্ত প্রাণ উত্পল। তাঁর মতে শেকসপিয়র শুধু শিক্ষিত সম্প্রদায়ের নন, দূর গ্রামের নিরক্ষর মানুষদেরও নাট্যকার। শেকসপিয়রের নাটক নিয়ে তিনি গাঁ-গঞ্জে গিয়েছেন বহুবার এবং ভীষণ ভাবে সমাদৃত হয়েছেন।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়ার সময় তিনি শেকসপিয়রের বেশ কয়েকটি নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এই সময় ইংল্যান্ডের প্রখ্যাত পরিচালক ও অভিনেতা জেফ্‌রি কেন্ডাল তার ভ্রাম্যমান থিয়েটারের নাট্যদল ‘শেকসপিয়ারিয়ানা’ নিয়ে কলকাতায় উপস্থিত হন। এঁরা প্রধানত শেকসপিয়রের নাটকই মঞ্চস্থ করতেন। কেন্ডালের খুব পছন্দ হয়ে যায় অভিনেতা উত্পল দত্তকে। তাঁর ডাকে তাঁর পেশাদার নাট্যদলে তিনি যোগ দেন। উত্পলের নিজস্ব একটি নাট্যদলও ছিল—‘দি অ্যামেচার শেকসপিয়ারিয়ানস’, শৌখিন এই নাটকের দলটি বছরদুয়েক চলেছিল।

কৃতী ছাত্র উত্পল ইংরেজি ভাষায় কৃতবিদ্য ছিলেন। বাংলাও লিখতেন বেশ ভালো। ল্যাটিন, জার্মান, ফরাসি ভাষাতেও ব্যুত্পত্তি অর্জন করেছিলেন। সরাসরি জার্মান থেকে ব্রেখ্‌টের কয়েকটি নাটকও তিনি অনুবাদ করেন। কিন্তু মনেপ্রাণে বুঝেছিলেন, এই বঙ্গভূমিতে নাটক করতে হলে তাঁকে বাংলা নাটকই করতে হবে। ‘ছায়ানট’ তাঁর রচিত প্রথম মৌলিক নাটক।

১৯৫১ সালে তিনি ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘে যোগ দেন। কিন্তু এই সঙ্ঘে দশ মাসের বেশি টিকতে পারেননি। বিরোধ ছিল মতাদর্শের। উত্পলের বক্তব্য ছিল—গণনাট্য-প্রযোজনা থেকে কেন মধুসূদন, বিদ্যাসাগর, রামমোহন বাদ যাবে? মাইকেল, দীনবন্ধু, গিরিশচন্দ্র, ক্ষিরোদপ্রসাদের চিরকালীন সম্পদ গণনাট্য কেন ব্যবহার করবে না? কেন বাদ পড়বেন রবীন্দ্রনাথ? উত্পলের পরিচালনায় ‘বিসর্জন’ মঞ্চস্থ হয়েছিল। অমনি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল—তিনি বুর্জোয়া ভাবধারায় বিশ্বাসী। উত্পলের মতো খোলা মনের শিল্পী তারপরেই সরে গিয়েছিলেন গণনাট্য সঙ্ঘ থেকে।

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী উত্পল ইসমাইল মার্চেন্ট পরিচালিত ‘শেকসপিয়রওয়ালা’, ‘দি গুরু’, ‘বোম্বে টকিজ’—এই তিনটি ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। বহু বাংলা ও হিন্দি ছবিতে তিনি প্রতিভাবান অভিনেতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন অঢেল পরিমাণে। প্রধান চরিত্রে উত্পল দত্তের কথা ভেবেই সত্যজিত রায় ‘হীরকরাজার দেশে’, ও ‘আগন্তুক’ ছবিদুটির পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। দুটি ছবিতেই উত্পলের অভিনয়-প্রতিভা শিখরস্পর্শী হয়েছে।

আর উত্পলের নাট্যপ্রযোজনা? সে তো এক উজ্জ্বল ইতিহাস। সেই ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে ‘ছায়ানট’, ‘অঙ্গার’, ‘ফেরারি ফৌজ’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম,’ ‘কল্লোল’,’টিনের তলোয়ার’ ইত্যাদি।

১৯৬৮ থেকে ১৯৮৮—চিত্পুরের যাত্রাপালার জগতে কুড়িটি বছর কাটিয়েছেন উত্পল। যাত্রাপালার সাবেক ধাঁচ ভেঙে রাজনৈতিক পালা নিয়ে গিয়েছেন গাঁ-গঞ্জে। সেখানকার মানুষজন মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছেন তাঁর পালাগুলি।

মার্কসবাদে গভীর ভাবে বিশ্বাসী ছিলেন উত্পল দত্ত। ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ছিল বিরাট। কিন্তু তিনি কখনও পার্টির সদস্যপদ গ্রহণ করেননি। সক্রিয় রাজনীতিতেও যাননি। পথনাটিকা তাঁর খুব প্রিয় ছিল। তাঁর পথনাটিকার সংখ্যা গোটা-পঁচিশ। প্রথম পথনাটিকা ‘পাশপোর্ট’-এর প্রথম অভিনয় হয়েছিল ১৯৫১ সালে। শেষ পথনাটিকা ‘মায়ের চোখের জল’ অভিনীত হয় ১৯৯১ সালে।

উত্পল দত্ত গভীর ভাবে বিশ্বাস করতেন, একটি রাজনৈতিক বক্তৃতার চাইতে একটি পথনাটিকা ঢের বেশি কার্যকর হতে পারে। তাঁর এই বিশ্বাস তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত পথনাটিকায় প্রমাণিত হয়েছে বারবার।

মাত্র ৬৪ বছর বয়সে বিস্ময়কর এই প্রতিভার জীবনাবসান হয়। তাঁর মৃত্যুর পরে পথনাটিকার গৌরবোজ্জ্বল ধারাটি শুকিয়ে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। এখন তো দেখাই যায় না তেমন।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *