binodan-aranyer-prachin-probad

অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


গোয়েন্দা গল্পের শিহরণ, সেলুলয়েডের পর্দায় বজায় রাখা সহজ কাজ নয়। ছবি জুড়ে টানটান পরিস্থিতি তৈরি করাও বেশ কঠিন কাজ। সে যদি আবার হয়, অরণ্য নামের জিতু কামাল অভিনীত, ঝকঝকে ডাক্তারি বিদ্যার ছাত্র এবং সেই সঙ্গে ক্রিকেট খেলোয়াড় তাহলে, দর্শকের আগ্রহ বাড়তে বাধ্য। অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ ছবির পরিচালক দুলাল দে, দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন সাংবাদিক। ছবির গল্পও তাঁরই লেখা। প্রথম ছবিতেই থ্রিলার নিয়ে কাজ করছেন তিনি। ছবির শুরুতেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়, এক চিকিৎসকের অকালে চলে যাওয়া নিয়েই ছবি। সেই সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে, দেশকালের সামাজিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। তবে সবটাই একটি হত্যাকান্ডকে নিয়ে। খুন হওয়া, সেই ডাক্তারকে কেন্দ্র করেই ছবির গল্প আবর্তিত। ‘কে খুলেছে আজব কারখানা’ গানকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রেখে, একখানি রক্তমাখা হাত দেখানো হয় সূচনাপর্বে। ধীরে ধীরে জানা যায়, এই হত্যার ঘটনা প্রায় এক বছর আগের। গ্রামে রাজত্ব করা মাফিয়া-চক্র যে কীভাবে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে – এই ছবি তার জ্বলন্ত উদাহরণ। সরকারী হাসপাতালে থাবা পেতে থাকা, বেসরকারী নার্সিংহোমের মালিকদের আঁতাত, চিকিৎসকদের নানা প্রলোভন এবং ভয় দেখিয়ে সরকারী কাজে অবহেলা করে নার্সিংহোমে যুক্ত করা – সব মিলিয়ে পরিচালক একেবারে সমকালীন পরিস্থিতিকে পর্দার তুলে এনেছেন। সেই পরিস্থিতি বা সিস্টেমকে অগ্রাহ্য করে অমিত। দেশের অরাজকতা এবং অসাম্যের বিপ্রতীপে সেই চিকিৎসক একা দাঁড়িয়েছেন। কিন্তু সিস্টেম যে তাঁকে নিকেশ করে দিতে চাইবে, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ রাখেননি পরিচালক। কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে পারিবারিক গোলমালের গল্পও উঠে এসেছে পর্দায়। চিকিৎসক হত্যার তদন্ত করতে, পানাঘাট, যেখানে ডাক্তার অমিত খুন হন, সেখানে আসেন সি আই ডি অফিসার। সেই অফিসার সুদর্শনের ভূমিকায় কাজ করেছেন শিলাজিত মজুমদার। সাম্প্রতিক কালের প্রতিটি ছবিতে শিলাজিত নিজেকে চাপিয়ে যাচ্ছেন। অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ তার ব্যতিক্রম নয়। অমিতের চরিত্রে সুহোত্র মুখোপাধ্যায় যথাযথ। এবং যথারীতি দুর্দান্ত কাজ করেছেন তিনি। সুহোত্রের স্ত্রীর চরিত্রে মিথিলাকে সামান্য আড়ষ্ট লাগে। গ্রামীন সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্স হিসেবে তাঁর সাজ-পোষাকও সেভাবে বাস্তবের সঙ্গে সাজুয্য রাখেনা। অরণ্যের ভূমিকায় জিতু কমল বেশ ভাল। তবে ডাক্তারি পড়ুয়া হিসেবে তাঁকে একটু বড়ই মনে হয়। তিনি ক্রিকেটার। ডাক্তার এবং গোয়েন্দা হিসেবেও দুর্দান্ত। জিতু ভাল কাজ করেছেন। ঝকঝকে, স্মার্ট স্ক্রিন প্রেজেন্সে তিনি অনবদ্য। আশা করা যায়, টলিউড ইন্ডাস্ট্রি জিতুকে এবার সফল ভাবে ব্যবহার করতে পারবে। এবং অরণ্য চরিত্রটিও ভবিষ্যতে নতুন সব রহস্যের সমাধান করতে পারবে। আসবে পরিচালকের নতুন থ্রিলার। অভিনেতারা দুর্দান্ত কাজ করেছেন। লোকনাথ দে, সায়ন, নীলাদ্রি মৈত্র খুব ভাল। সায়নকে সারাক্ষণ ‘গান্ডু’ সম্বোধনের ডাকটি শ্রুতিকটু। কেনই বা তাঁর মতো শক্তিশালী অভিনেতাকে কেবল কমিক রিলিফ হিসেবে রাখা হল – বোধগম্য হল না।

ছবির মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট শুভদীপ গুহের। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর চমৎকার। সেই সঙ্গে, ছবির শেষ চমকটি, আশাতীত। তবে মাঝে মাঝে চিত্রনাট্যের দুর্বলতার কারণে, ছবিটিকে দীর্ঘ মনে হতে পারে। সেক্ষেত্রে, প্রথম ছবি হিসেবে সামান্য ত্রুটিসমূহকে এড়িয়ে বলা যেতেই পারে, ক্রীড়া সাংবাদিক, পরিচালক তিন গোলে এগিয়ে খেলা শুরু করেছেন। শুভেচ্ছা রইল আগামীর জন্য।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *