binodan-decouple

দাম্পত্যের নতুন ভার্সান – ডিকাপল্ড (নেটফ্লিক্স)
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


নেটফ্লিক্সের নতুন ওয়েব সিরিজ, ডিকাপল্ডের ট্রেলার যতখানি আকর্ষক, ছবিটিও তাই। পরিচালক হার্দিক মেহেতা সাম্প্রতিককালের উচ্চবিত্ত, বিবাহিত যুগলের মনোজগতের প্রতি আলোকপাত করতে চেয়েই এই ছবিটি বানিয়েছেন, বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ডিকাপল্ড নামের এই সিরিজের পরতে পরতে হিউমারের মোড়কে তুলে ধরা হয়েছে আধুনিক দাম্পত্যের নানা অন্ধকার দিক। মজার ছলে যে বার্তা দিতে চেয়েছেন পরিচালক, তা সময় বিশেষে চড়া দাগের লাগতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত কমেডি – এই ছবির মূল বিষয়টিকে দুর্বল করে দিয়েছে। ছবির শুরুতেই মাধবন ও সারভিন চাওলাকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে দেখা যাবে পর্দায়। প্রথম দৃশ্যের তাঁদের কথা-কাটাকাটির মধ্যে দিয়েই দর্শক, তাঁদের দাম্পত্যের কেমিস্ট্রি ও হিস্ট্রি এক সঙ্গেই জানতে পারবেন।

মাধবন, স্বভাবতই, নায়কের ভূমিকায়। আর্য এখানে, তাঁর নাম। তাঁর স্ত্রী, শ্রুতির চরিত্রে কাজ করেছেন সারভিন চাওলা। আর্য, দেশের দ্বিতীয় বেস্ট সেলার লেখক। এক নম্বর চেতন ভগত এবং তিনি নিজের নাম-ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আর্যের কান্ড-কারখানা, আপাতদৃষ্টিতে বিরক্তিকর মনে হলেও – একটু তলিয়ে দেখতে গেলে, তার কিছু কিছু আচরণের কারণ খুঁজে পাওয়া যায় এবং তা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত। আবার কিছু কিছু স্থানে তার ব্যবহার মেনে নেওয়া প্রায় অসম্ভব। শ্রুতি তার কাজকর্মে তিতি-বিরক্ত হয়ে ডিভোর্স চাইছে। কিন্তু মেয়ের জন্য তারা আলাদা হতে পারছে না – । শেষ অব্দি, ভেবে চিন্তে তারা ঠিক করে, ডিভোর্স হলেও তারা মেয়ে সাবালক না হওয়া পর্যন্ত একসঙ্গে একই বাড়িতে থাকবে। – এই ডিকাপল্ড ছবির প্লট। এই মূল বিষয়টিকে ঘিরে এপিসোডগুলো এগিয়েছে।

সিরিজটি মূলত কমেডি হলেও মাঝে মাঝে তা শালীনতার সীমা পার করার গোল বাঁধে। গল্পও খানিক খেই হারিয়ে ফেলে। শ্রুতির বাবা-মায়ের বিবাহিত জীবন ও তাঁদের যৌন জীবনকে সামনে আনার ব্যাপারটা, পরিচালক প্রায় জোর করেই এনেছেন। মূল বিষয়ের সঙ্গে যার কোনও সম্পর্কই নেই। মীর, ছবিতে এক বাঙালি কূটনীতিকের ভূমিকায় আছেন। তাঁর মতো প্রতিভাবান অভিনেতাকে সেভাবে ব্যবহার করতে পারেন নি পরিচালক। তবে মীর যতবার পর্দায় এসেছেন, মুগ্ধ করেছেন। আর্য ও শ্রুতির কন্যা, মাসার ভূমিকায় সোনিয়া রাঠি অত্যন্ত সাবলীল। মাসার চরিত্রটি অনেকখানি অনুঘটকের কাজ করে। দাম্পত্য মানেই যে কেবল স্বামী ও স্ত্রীর ব্যাপার নয় এখনও, ভারতবর্ষে সেই বিষয়টিও দেখানো হয়েছে। এ দেশে বিয়ের মাধ্যমে দুটি পরিবার পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে সন্তানের জন্মের পর ব্যাপারটা আরও প্রসারিত হয়। সেক্ষাত্রে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নিতে হলে – দুটি পরিবারকেও আলাদা ভাবে বিষয়টি জানানো জরুরী। এবং ভারতীয় বাবা-মায়েরা এখনও মানিয়ে নেওয়া ও মেনে নেওয়ার ফারাক সম্পর্কে ততখানি ওয়াকিবহাল নন বলে, আজও তাঁরা সন্তানের ডিভোর্স মেনে নিতে পারেন না সহজে। বিশেষ করে মেয়ের বাড়ির বড়রা। তাঁরা ডিভোর্সি মেয়েকে গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ করেন। সামাজিক ও পারবারিক ক্ষেত্রে সংকুচিত মনে করেন নিজেদের। এক্ষেত্রে শ্রুতির বাবা-মায়েরও একই অবস্থা! যদিও শ্রুতি বড় চাকুরে। স্বনির্ভর এবং মেয়ের মা হওয়া স্বত্বেও বাপের বাড়ি থেকে সে বাবা-মায়ের সহযোগিতা পায় না। এসবের চক্করে যে সবচেয়ে দুঃখ পায়, সে হল, মাসা! অন্যান্য সন্তানদের মতোই সে বারেবারে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ রুখতে চেষ্টা করে। বাকিটা দেখার জন্যে ছবিটি দেখুন! বিপুল প্রতিশ্রুতিময় একটি গল্প ছিল, চিত্রনাট্য অত্যন্ত স্মার্ট। অভিনেতাদের কাজ যথাযথ। কিন্তু পরিচালকের মাত্রাবোধের অভাব ছবিটির ভরাডুবির অন্যতম কারণ।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *