binodan-dunki

ডাঙ্কি
ফিল্ম রিভিউ
সোহিনী মুখার্জী


নিজের যখন খুব দুঃখ হবে তখন দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখবে, সবার অনেক বড় বড় দুঃখ দেখার পর তোমার নিজের দুঃখগুলো খুব ছোট মনে হবে, এমনই বার্তা দিলেন ‘ডানকী’-র শাহরুখ ওরফে হার্ডি। পাঠানকোট থেকে এক ব্যক্তির পুরনো রেডিও ফেরত দিতে আসেন তিনি লাল্টু শহরে। সেই ব্যক্তি একদিন তাকে এক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচিয়েছিল। নিয়ে গেছিলেন হসপিটালে। তার সেবা করে সে ফিরে আসে নিজের বাড়ি লাল্টু। হার্ডির কাছে ফেলে আসে তার রেডিও। এবার হার্ডির দায়িত্ব তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রেডিও ফেরত দেওয়ার। সেই ব্যক্তিকে খুঁজতে গিয়ে ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে যায় মনু অর্থাৎ তাপসি পান্নুর সঙ্গে।

মনু তখন লড়ছে তার নিজস্ব লড়াই। তার বাড়ি হাতছাড়া হয়ে গেছে। মা বাবাদের নিয়ে সে পথে বসতে চলেছে। তবে সে শুনেছে লন্ডনে নাকি অনেক চাকরি, সেখানে গেলে অনেক টাকা কামানো যায়। যেকোনো মধ্যবিত্ত বাড়ির ছেলেমেয়ের মত তারও ইচ্ছে মাবাবাকে অভাবের জীবন থেকে বের করে একটা সুন্দর জীবন দেওয়ার। তবে শুধু মনু না, ওর সঙ্গে আছে আরো তিনজন যাদের স্বপ্ন এক। সবার লন্ডনে যাওয়ার কারণ আলাদা হলেও, লক্ষ্য এক!

যাইহোক, হার্ডি জানতে পারে যে ওর প্রাণ বাঁচায় সে আর কেউ না, মনুর দাদা। কিন্তু হার্ডির প্রাণ বাঁচিয়ে ফেরার পথে সে এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। হার্ডি ঠিক করে দাদাকে যখন ধন্যবাদ বলতে পারল না, তখন সে বোনকে সাহায্য করবে লন্ডন যেতে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ!

কী উপায় বিদেশ পাড়ি দেওয়া যায় সে পরিকল্পনা চলতে থাকে। জানা যায় IELTS পরীক্ষায় পাস করলে পাওয়া যায় স্টুডেন্ট ভিসা, তাতে লন্ডনের প্রবেশপথ হয়ে যায় সহজ। কিন্তু সহজ মনে হওয়া জিনিস সবসময় সহজ হয় না!

ওরা ফেল করে পরীক্ষায়। হঠাৎ এই সহজ মজার সিনেমার হাওয়া বদল হয়। বড় পর্দার সামনে বসে থাকতে থাকতে তৈরি হয় এক দমবন্ধ পরিবেশ। এক নিমেষে অনেক ঘটনা ঘটে। সবকিছু সহ্য করে ওরা ডানকি পথে রওনা দেয় ইংল্যান্ডের দিকে।

মৃত্যু, প্রাণ ভয়, বন্দুকের গুলি, ভাঙা হৃদয় সবটা নিয়ে চলতে থাকে গল্প। তবে সিনেমার শেষে গল্পটা আদতে শেষ হয় না। মনে পড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, “অন্তরে অতৃপ্তি র’বে সাঙ্গ করি মনে হবে, শেষ হয়ে হইল না শেষ”।

রাজ কুমার হিরানি সবসময়ই সাধারণ ভাবে অসাধারণ গল্প বলেন। চরিত্র নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। তাতে থাকে না কোনো ভান বা আজগুবি ভাবনা। রক্তমাংসের মানুষগুলোর সঙ্গে এতোটাই দর্শককে মিলিয়ে ফেলেন যা চোখে জল এনে দেয়। ডানকিও তাই!

শাহরুখকে দেখে মনে পড়ে ‘কাল হো না হো’-র সময়ের শাহরুখের কথা। পাঠান, জওয়ানের পর শাহরুখকে নিজের অবতারে দেখা যায় এই সিনেমায়। সবথেকে ভাল লাগে উনি সুপারস্টার বলে বাকি অভিনেতাদের ছাপিয়ে যেতে চান নি। সবাইকে নিয়ে একটা গল্প বলতে চেয়েছেন মাত্র!

তাপসি, ভিকি, অনিল গ্রোভার, বোমান ইরানি, বিক্রম কচ্চার সবাই নিজেদের জায়গায় অসামান্য। দৃশ্যের সঙ্গে গানের ব্যবহার বেশ মন কাড়ে।

তবে সিনেমার দৈর্ঘ্য একটু কম হলে ভালো হতো। কিছু দৃশ্য ছোট করলে বা বাদ দিকে ক্রিস্প বজায় থাকতো।

 
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *