binodan-ebar-pujo-kemon-katbe

এবারে পুজো কেমন কাটবে?
পুজো
অদিতি বসু রায়, স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক ও জয়তী রায়

জয়তী, অদিতি আর স্বাতী এবার বাংলা সাহিত্যের কিছু বিশিষ্ট লেখকের মুখোমুখি হয়েছেন তাঁদের পুজো কেমন কাটবে তা জানতে। অতিমারীর পরে আমাদের পুজোর দিনগুলো একটু অন্যরকম ভাবে কাটবে। তা কি ক্ষনস্থায়ী না চিরস্থায়ী তা ভবিষ্যৎই বলবে। আসুন জেনে নিই এবার তাঁরা কেমন করে কাটাবেন পুজো।

সুবোধ সরকার –
পুজোতে সাধারণত পুজো সংখ্যা নিয়েই মশগুল থাকতে ভালবাসেন কবি, অধ্যাপক সুবোধ সরকার। পুজোর মূল আকর্ষণ তাঁর কাছে – শারদীয়া পত্রিকাগুলোই। তবে সে সব চিত্র এই মহামারীর প্রকোপে অনেকটাই বদলে গেছে। এই বছর পুজোতেও তিনি নতুন বই পড়বেন তবে খুব আনন্দের সঙ্গে নয়। এ বছর পুজো হবে – এই আশা তিনি রাখেন। কিন্তু সবটাই করোনা-পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে। সমস্ত বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে যদি শেষ পর্যন্ত পুজো হয় – তবে তিনি অবশ্যই খুব আনন্দিত হবেন বলে জানিয়েছেন। আবার সেই সঙ্গে তিনি ভয়ও পাচ্ছেন। মহামারীর কারণে। ফলে পুজো নিয়ে কবির আশঙ্খারও শেষ নেই।

উল্লাস মল্লিক –
দুর্গাপুজো নিয়ে লেখক উল্লাস মল্লিকের আলাদা উত্তেজনার কাল গত হয়েছে কিশোরকালেই। ঠাকুর দেখার প্রতি তাঁর তেমন উৎসাহ নেই। গত বছর অবশ্য কিশোরী কন্যার আবদারে তিনি বেড়িয়েছিলেন পুজো দেখতে। আবার পুজোর সময় তাঁর প্রবাসী বন্ধুরা ফিরলে – আড্ডা জমে খুব। তাছাড়া পুজো মানে পুজো সংখ্যা পড়া – যদিও গত প্রায় পনেরো বছর ধরে পুজোর সময় থেকেই আগামী বছরের জন্য লেখার চাপ শুরু হয়ে যায় তাঁর। ফলে লেখা এবং পড়া নিয়ে পুজোটা ব্যস্ততায় কাটে লেখক উল্লাস মল্লিকের।

প্রচেত গুপ্ত –
২০২১ সালের পুজো কেমন হবে – তার আন্দাজ এখনও করতে পারছেন না সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত। তবে পুজোতে তাঁর রুটিন অনেক বছর আগে থেকে প্রায় একই রকম। পুজো মানেই তাঁর কাছে জানালার বাইরে তাকিয়ে চুপ করে শুয়ে থাকার সময় আবার একই সঙ্গে প্রিয়জনেদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার অবসর। আর যে ব্যাপার প্রচেত গুপ্ত একেবারেই করতে চান না তা হল – লেখা। পুজোয় লেখা একদম বন্ধ। পুজো সংখ্যা পড়তেও ইচ্ছে করে না তাঁর পুজোতে। তাঁর কাছে পুজো মানে নির্ভেজাল ছুটি।

কাবেরী গোস্বামী –
কবি জয় গোস্বামী( নভেম্বর 10, 1954) উত্তর জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি, সাহিত্য আকাদেমি ও দুইবার আনন্দ পুরস্কার সহ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। জয় গোস্বামী বাংলা সাহিত্যের গর্ব। তাঁর সঙ্গে আর যে নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়, তিনি হলেন কাবেরী গোস্বামী। অপার বাংলার পক্ষ থেকে প্রশ্ন করেছিলাম কেমন করে কাটাবেন দুর্গাপুজো? পড়ুন, জয় – কাবেরীর বাড়ির পুজো। অনেক ধন্যবাদ জনাই।
কাবেরী গোস্বামী জানালেন “আমার বাড়িতে দুর্গা পুজো হয় অষ্টমীর দিনে, প্রত্যেকদিনই ভোগ দেওয়া হয়, অষ্টমীর দিন ঠাকুর মশাই এসে পুজো করেন, আমি ভোগ রান্না করি, দুবছর আগেও অষ্টমীর দিন বেশ লোকজন আসতেন, এখন অতিমহামারীর জন্য বন্ধ আছে, কিন্তু পুজোটা হয়, এই পুজোর কাজ নিয়ে একটু ব্যস্ত থাকি, আর হ্যাঁ আমাদের মা দুর্গা আমাদের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত। এই পুজোয় সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন।“

স্মরণজিৎ চক্রবর্তী –
পুজো নিয়ে তেমন কোনও আলাদা উচ্ছ্বাস নেই স্মরণজিতের। বরং ছোটবেলার পুজোর স্মৃতি তাঁর কাছে এখনও উজ্জ্বল। শৈশব কেটেছে বাটানগরে। সেখানে বড় বড় মাঠে ঢালাও প্যান্ডেল করে দুর্গাপুজো হতো। নানারকম স্টল, নাগরদোলনা, সার্কাস, পুতুল নাচ, খাবার দোকান এসব নিয়ে জমজমাট পুজো কাটাতেন তাঁরা। তুতো ভাইবোনেরা মিলে ঘোরাঘুরি, বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গার পাড়ে বসে আড্ডা– পুজো বলতে এসবই আজও মনে পড়ে তাঁর। পুজোর ভিড় নয় বরং প্যান্ডেল থেকে একটু দূরে বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গার ধারে বসে কাটাতেই ভালো লাগত তাঁর। গঙ্গার হাওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে পা দুলিয়ে জাহাজ যাওয়া বা শুশুক লাফানো দেখা, সবই আজও তাঁর স্মৃতিতে অমলিন। বর্তমানে পুজো মানেই তাঁর কাছে বেশ অস্বস্তিকর একটা ব্যাপার। বাড়ির লাগোয়া পুজো প্যান্ডেলে সারাদিন ঢাকের আওয়াজ বা মাইকের আওয়াজে প্রাণান্তকর অবস্থায় পুজো কাটে আজকাল। ঘুরে ঘুরে ঠাকুর দেখায় কোনওদিনই তেমন আগ্রহ নেই তাঁর। তবু তার মধ্যেই ঘনিষ্ঠ কিছু বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে গল্প আর গানবাজনা করে, সিনেমা দেখে নিজের মতোই পুজো কাটাবেন তিনি। বহুদিন হয়ে গেল আর শৈশবের শহরে যাওয়া হয় না, আসলে আজও সেই মফস্বলের পুজোয় নিজের মতো নিভৃতে কাটাতে পারলেই ভালো লাগত তাঁর।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *