ফিল্ম রিভিউ
স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক
হবে কি হবে না করতে করতে অবশেষে হয়েই গেল। আর হলো যখন তখন বেশ জাঁকজমক করেই হলো। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের কথা বলছিলাম। সাধারণত নভেম্বরে হয়ে থাকে প্রতিবছর। কিন্তু কোভিড এসে উল্টেপাল্টে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। তাই সময় পিছিয়ে ২০২১ এর ৮ই জানুয়ারি শুরু হলো ২৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবার অনেক কিছুই অন্যরকম। অন্যবারের মতো নেতাজি ইনডোরের পরিবর্তে এবার উদ্বোধন অনুষ্ঠান মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় নবান্ন থেকে অনলাইনে করা হলো। উদ্বোধন করতে প্রতিবার মুম্বই থেকে উড়ে আসেন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, শর্মিলা ঠাকুর, জয়া বচ্চনরা। এবার স্বাভাবিক কারণেই তারা কেউ আসতে পারেননি। তবে শাহরুখ অনলাইনে শুভেচ্ছা জানান কলকতাবাসীকে। মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে মঞ্চে প্রদীপ জ্বালিয়ে উৎসবের সূচনা করেন অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন বাংলা ছবির একাধিক তারকা অভিনেতা অভিনেত্রীরা। উৎসবের প্রথম ছবি ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অপুর সংসার’। ১১৭০টি বিভিন্ন ধারার ছবির থেকে এবারে বেছে নেওয়া হয়েছিল ৮১ টি ফিচার, ৫০টি ডকুমেন্টারি ও স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি এবং ৪৫টি বিভিন্ন ভাষার ছবি। অতিমারীর কথা মাথায় রেখে এবার কমানো হয়েছিল হলের সংখ্যাও। নন্দন, রবীন্দ্রসদন, শিশির মঞ্চ ও তথ্যকেন্দ্র ছাড়াও যে দুটি হলে ছবি দেখানো হয়েছে সেগুলি হলো রবীন্দ্র ওকাকুরা ভবন ও চলচ্চিত্র শতবর্ষ ভবন। তবে একদিকে যেমন বিদেশি অতিথিরা এবার আসতে পারেননি, আবার সাধারণ মানুষও হলে গিয়ে ছবি দেখার ব্যাপারে কিছুটা ধন্দে ছিলেন। তাই সব মিলিয়ে এবার ফিল্ম উৎসবের মেজাজ একটু ফিকে হবে সেটা কিছুটা আন্দাজ করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যিই কি ফিকে হলো? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনে দুটো প্রদর্শনীর উদ্বোধন হবার কথা। একটা হবে গগণেন্দ্র আর্ট গ্যালারিতে, আর একটা নন্দন ২ এর করিডোরে। উদ্বোধন করতে আসবেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, গৌতম ঘোষ। আমরা রিপোর্টারকুল আকুল হয়ে গগণেন্দ্র আর্ট গ্যালারির সামনে হা পিত্যেশ করে দাঁড়িয়ে রয়েছি। তারকারা কখন আসবেন কেউ জানে না। হঠাৎ আমাদের বলা হলো আগে নন্দন ২ এর টা উদ্বোধন করবেন প্রসেনজিৎ। সবাই দৌড়লো ওদিকে, কেউ হাতে মাইক তো কেউ ক্যামেরা নিয়ে। আর আমরা যারা লিখি তারা হাতে নোটবুক কিংবা ফোনের রেকর্ডার অন করে ছুটলাম অকুস্থলে। গিয়ে দেখি পুলিশ সবটা ঘিরে দিয়েছে। শুধু ফটোগ্রাফারদের কয়েকজনকে ঢুকতে দেবে। বাকিদের বাইরে দাঁড়াতে হবে। অগত্যা বাইরেই দাঁড়ালাম। একটু পরে প্রসেনজিৎ এসে পৌঁছলেন। যদিও এসেই নন্দনের ওপরে অতিথিদের বসার ঘরে চলে গেলেন। আমরা অপেক্ষায় আছি কখন আসবেন কে জানে। হঠাৎ আবার বলা হলো আগে গগণেন্দ্রতেই উদ্বোধন হবে। সকলে ওখানে চলে যান। আবার দৌড়লাম আমরা। অদ্ভুত লাগছে এবার, এভাবে বারবার পরিকল্পনা বদলের কী মানে! অগত্যা আবার এসে আগের জায়গায় দাঁড়াবার জন্য ধাক্কাধাক্কি শুরু হলো। নাহ, এবারেও এলেন না কেউ। আবার আমাদের পাঠানো হল নন্দন ২-এর সামনে। অবশেষে গৌতমদা এলেন, সঙ্গে সদ্য প্রয়াত অভিনেতার পুত্র-কন্যা ও আরও কয়েকজন। উদ্বোধন হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্ম ও জীবন নিয়ে প্রদর্শনীর। বললেন, “এ বছরের চলচ্চিত্র উৎসবকে সৌমিত্রদার জীবনের উদযাপন বলেই ধরে নিন। উনি ছিলেন আছেন এবং থাকবেন।”
এরপরে প্রসেনজিৎ এসে উদ্বোধন করলেন শতবর্ষ প্রদর্শনীর। পাঁচজন শিল্পী যাঁরা নানাভাবে সিনেমা শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে তাঁদের জন্মশতবর্ষ উদযাপন করতেই এই ছবির প্রদর্শনী। এই পাঁচজন হলেন অভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, গায়ক ও সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সেতারশিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক রবিশঙ্কর, ইতালিয়ান পরিচালক ফেদেরিকো ফেলিনি ও ফ্রেঞ্চ পরিচালক এরিক রোহমার। ২০২০ সালে এঁদের সকলেরই জন্মের শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। সেদিন কাজের তাড়ায় দেখতে না পেলেও পরে প্রদর্শনী দুটো সময় নিয়ে দেখেছিলাম। শতবর্ষের প্রদর্শনীতে শিল্পীদের বহু দেখা অদেখা ছবি রয়েছে। সাদা কালো অজস্র ছবির মধ্যে সেই হারিয়ে যাওয়া সময়টাকে ফিরে পাওয়া যায় যেন। অন্যদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রদর্শনী আনন্দ ও নস্ট্যালজিয়া দিলেও কিছু ছবির মান বেশ খারাপ, ইন্টারনেটে পাওয়া চেনা ছবিকে এনলার্জ করতে গিয়ে বহু ছবি ফেটে গেছে। আন্তর্জাতিক মানের কোন প্রদর্শনীতে এ জিনিস প্রত্যাশিত নয়।
বিকেলে ছিল পরিচালক অনুভব সিনহার বক্তৃতা। প্রতি বছর সত্যজিৎ রায় স্মৃতি বক্তৃতায় কোন অভিনেতা বা পরিচালক আসেন। এবার এলেন অনুভব। বিষয় ছিল ‘মেইনস্ট্রিম ছবির সামাজিক দায়িত্ব’। প্রাঞ্জলভাবে বর্ণনা করলেন অনুভব, ছবি বলতে তিনি কী বোঝেন, একটা ছবি বানাবার সময় কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি তাঁকে ভাবায়। তিনি কোন সামাজিক বার্তা দেবার জন্য ছবি তৈরি করেন না, বরং ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা হোক এটাই তাঁর উদ্দেশ্য থাকে। এছাড়া একমাত্র হিন্দী ছবিকেই ন্যাশনাল ছবি ও অন্য সমস্ত ভাষার ছবিকে রিজিয়নাল বা আঞ্চলিক বলে দেগে দেওয়াকে তিনি মানতে পারেন না। কথায় কথায় বললেন ‘আর্টিকল ফিফটিন’, ‘থাপ্পড়’, ‘মুল্ক’ ছবির কথা। ‘মুল্ক’ ছবিটি এবারের উৎসবে দেখানোও হয়েছে।
মুক্ত মঞ্চে সেদিন ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণে ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান। উপস্থিত ছিলেন প্রয়াত শিল্পীর কন্যা পৌলমী বসু, পুত্র সৌগত চট্টোপাধ্যায়, শঙ্কর চক্রবর্তী, হরনাথ চক্রবর্তী, সোহিনী সেনগুপ্ত, সুদীপ্তা চক্রবর্তী প্রমুখ। সকলের স্মৃতিচারণে আবার যেন সকলের মাঝে ফিরে এলেন বাঙালির প্রাণের অভিনেতা সৌমিত্র।
এবারের উৎসবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বেশ কিছু ছবি দেখানো হয়েছে। এছাড়া একাধিক অভিনেতা ও পরিচালককে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের ছবিও দেখানো হয়েছে। এদের মধ্যে ছিলেন কিম কি-ডো, বাসু চট্টোপাধ্যায়, ঋষি কাপুর, ইরফান খান, অমলা শংকর, সন্তু মুখোপাধ্যায় ও তাপস পাল। এছাড়াও ছিল শতবর্ষে পা রাখা পাঁচজন অমর শিল্পীর স্মৃতিবিজড়িত ছবি। ছিল ‘সপ্তপদী’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘কল্পনা’, ‘ছোটি সি বাত’ থেকে শুরু করে ‘দাদার কীর্তি’র মতো ছবিও।
প্রতিদিন বিকেলে এক অভিনব সিনে আড্ডার আয়োজন করা হয়েছিল মুক্ত মঞ্চে। আড্ডায় উপস্থিত থেকেছেন বর্তমান বাংলা সিনেমা, সঙ্গীত ও থিয়েটার ইন্ডাস্ট্রির রথী মহারথীরা। এই আড্ডাকে ঘিরে সাধারণ দর্শকদের উৎসাহ ছিল লক্ষ্য করার মতো। প্রতিদিন করোনা উপেক্ষা করে শয়ে শয়ে মানুষ দর্শকাসন ভরিয়ে রেখেছেন নিয়ম করে।
গত রবিবার মুক্ত মঞ্চে ছিল এক অভিনব বিতর্কসভা। বিষয় ছিল ‘ডিজিট্যাল মাধ্যম কি সিনেমার ভাষাকে বদলে দিচ্ছে?’ পক্ষে বলার জন্য উপস্থিত ছিলেন সৌরভ চক্রবর্তী, ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, অনিন্দিতা বসু, ইশা সাহা ও সৌরসেনী মৈত্র। বিপক্ষে বলার জন্য মঞ্চে হাজির হলেন হরনাথ চক্রবর্তী, আবির চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন চক্রবর্তী, ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায়, অরিজিৎ দত্ত ও ঋদ্ধি সেন। ডিজিট্যাল মাধ্যমে নিজের সময়সাপেক্ষে ছবি বা ওয়েব সিরিজ দেখার সুবিধা ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষানিরীক্ষার সুযোগ থাকলেও সিনেমাহলের অন্ধকারে ছবির জগতে ডুবে যাবার ম্যাজিককে কেউই অস্বীকার করলেন না। বেশ খানিকটা তর্ক বিতর্কের পর অচিরেই সিনেমার জয় ঘোষণা করা হলো। আসলে সবই যে বড় পর্দার জন্য। আজ যারা সিরিজে অভিনয় করে তারকা হয়েছেন তারাও বড় পর্দায় একটা সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। সিনেমার দুনিয়াটা বড়ই মোহময়ী যে। জীবনের হাজারো ঝামেলার মধ্যে থেকে ঘন্টা দুয়েক আমাদের অন্য দুনিয়ায় ঘুরিয়ে নিয়ে আসার যে জাদু কার্পেট তারই আর এক নাম সিনেমা।
গত বছর মুক্তি পাবার কথা ছিল পরিচালক শুভ্রজিৎ মিত্রর ‘অভিযাত্রিক’ ছবিটির। কোভিডের কারণে তা আর সম্ভব হয়নি। সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অপরাজিত’ উপন্যাস অবলম্বনে সত্যজিৎ রায়ের কাল্ট ছবি ‘অপুর সংসার’ যেখানে শেষ হচ্ছে ঠিক সেখানেই শুরু হচ্ছে ‘অভিযাত্রিক’। এ বছর উৎসবে ছবিটি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এ ছবিতে অপুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অর্জুন চক্রবর্তী। এছাড়াও অভিনয়ে রয়েছেন সব্যসাচী চক্রবর্তী, বরুণ চন্দ, দিতিপ্রিয়া রায়, শ্রীলেখা মিত্র, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ বসু, সোহাগ সেন। নন্দন ২ এর মত ছোট্ট হলে একটা করে আসন ছেড়ে বসতে হলে দর্শক সংখ্যা এমনিই কমে যায়। কিন্তু অপুর মাহাত্ম্য প্রকাশ পেল ছবি শুরু হবার পর। পরের পর দর্শক ঢুকে হলের মেঝেতে বসে ছবি দেখলেন। কেউ তাদের বাধা দিল না, দর্শকাসন থেকে কেউ বললো না এভাবে ছবি দেখা যাবে না। এখানেই বোধহয় সিনেমার জয়, আবার জয় কলকাতারও। স্রেফ একটা ফিল্ম উৎসবকে নিয়ে এমন আবেগ আর কোন শহর কি দেখাতে পারে? আসা যাক ছবির প্রসঙ্গে। পর্দার অপু এভাবে মুগ্ধ করবে সমস্ত দর্শককে, সাদা কালো ছবির পুরোনো দিনকে ফিরে পেয়ে দর্শক এতটা আপ্লুত হবেন, ছোট্ট কাজলের চরিত্রে আয়ুষ্মান মুখোপাধ্যায় এত স্নেহ আদায় করে নেবে এমনটা বোধহয় পরিচালক বা প্রযোজক কেউই ভাবেননি। মনে রাখার মতো কাজ করেছেন ছবির সুরকার বিক্রম ঘোষ। ছবির শেষে আবেগে ভেসে গেল গোটা হল।
সিনে আড্ডার মঞ্চে প্রায় প্রতিদিনই ছিল নানারকম জনপ্রিয় বিষয়ের বিতর্ক বা আড্ডা। ‘সিনেমায় নাটকের প্রভাব’ শীর্ষক আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন নাট্য জগতের উজ্জ্বল চন্দ্র সূর্যরা। ছিলেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, সব্যসাচী চক্রবর্তী, দেবশঙ্কর হালদার, রজতাভ দত্ত ও শুভাশিস মুখোপাধ্যায়। সঞ্চালনায় ছিলেন চৈতী ঘোষাল। আলোচনাকে সর্বসাধারণের উপভোগ্য করে তোলার জন্য হালকা চালে শুরু হলেও মাঝে মাঝেই উঠে এলো নাটক সংক্রান্ত গুরুগম্ভীর আলাপ আলোচনা। তবে নানান বিষয়ে মজার মজার গল্পও ছিল প্রায় সকলের বক্তব্যেই।
বাংলা গান নিয়ে মুক্ত মঞ্চে আড্ডার ব্যবস্থা করা হয়েছিল দু’দিন। উপস্থিত ছিলেন বাংলা গানের সম্মানীয় শিল্পীরা। প্রথমদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোমলতা আচার্য, রূপঙ্কর বাগচী, সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়, স্বপন বসু, লোপামুদ্রা মিত্র, বিক্রম ঘোষ, লগ্নজিতা চক্রবর্তী। বিষয় ছিল ‘গান শোনা না গান দেখা?’ অনুষ্ঠান জমে যায় শিল্পীদের আড্ডা আর গানে। সেদিনের অনুষ্ঠান শেষ হয় সকলের কণ্ঠে সুরজিতের ‘তোমার দেখা নাই’ দিয়ে। শেষের আগের দিনের বিষয় ছিল ‘সিনেমার জন্য গান নাকি গানের জন্য সিনেমা?’ উপস্থিত ছিলেন জয়তী চক্রবর্তী, শিলাজিত, অনুপম রায়, উজ্জয়িনী, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, উপল সেনগুপ্ত, শ্রীজাত, সাহেব চট্টোপাধ্যায় ও ইমন চক্রবর্তী। গানে গানে জমে যায় এ দিনের আড্ডাও।
ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের শতবর্ষে উৎসবে দেখানো হলো তাঁর স্মৃতিতে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘ভুবনময় ভানু’। সুদূর লস অ্যাঞ্জেলেসে বসে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করেছেন শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী। শিল্পীর পুত্র কন্যা ও সহশিল্পীদের স্মৃতিচারণে ছবিটি এক অন্য নস্টালজিয়ার সৃষ্টি করে। ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় অভিনীত নানা ছবির টুকরো দৃশ্য আবারও মনে করিয়ে দেয় সর্বকালের সেরা এই কমেডিয়ান ও অভিনেতার কোন বিকল্প হতে পারে না।
সাংবাদিকতার কাজে নানা কনফারেন্স ও অনুষ্ঠানে ছুটোছুটি করার ফলে ছবি দেখার সময় বার করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তার মধ্যেই শেষবেলায় দেখলাম পরিচালক অন্দ্রেই কনচালোভস্কির রাশিয়ান ছবি ‘ডিয়ার কমরেডস’। ১৯৬২র পটভূমিকায় রাশিয়ায় হয়ে যাওয়া এক ঐতিহাসিক ঘটনা ছিল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সোভিয়েত আর্মি ও কেজিবির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ নিয়ে এ ছবি দেশে দেশে হয়ে যাওয়া শ্রম আন্দোলনকে মনে করিয়ে দেয়। বুঝিয়ে দেয় রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাছে জনগণ শুধু একটা সংখ্যামাত্র। এক সরকারী চাকুরে সিঙ্গল মায়ের মেয়ে হারানোর গল্প বড়পর্দায় দেখার অভিজ্ঞতা অনেকদিন মনে থেকে যাবে।
এভাবেই নানারঙের অভিজ্ঞতা ও আনন্দের মিশেলে শেষ হলো এবারের ফিল্ম উৎসব। শেষ দিনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অবশ্য করা হয় অনলাইনে। পুরস্কার প্রাপকরাও সকলেই ভার্চুয়ালি উপস্থিত থাকলেন। মঞ্চে সেদিন হরেকৃষ্ণ দাস সম্প্রদায়ের কীর্তনের আসর বসেছিল। উপস্থিত ছিলেন গৌতম ঘোষ, অরিন্দম শীল, নুসরত জাহান, ফিরহাদ হাকিম প্রমুখরা। অতীতের গাম্ভীর্য সরিয়ে রেখে চলচ্চিত্র উৎসব এখন অনেকটাই সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত। সব মিলিয়ে ভালোই কাটলো Kiff ২০২০।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন