binodan-lapata-ladis

লাপাতা লেডিস
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


লাপাতা লেডিস- আসলে এক বিশ্বাসের গল্প বলে। যে বিশ্বাস, এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার কারসাজিতে ইদানীং একেবারে লুপ্তপ্রায় বস্তু হয়ে উঠেছে। মধ্য ভারতের এক জোড়া সদ্য বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর গল্প দিয়ে ছবির শুরু। একটা ট্রেন এবং তার সময়সূচি – এর মধ্যে গোলমাল। দেহাত থেকে আসা, একহাত লম্বা ঘোমটা দিয়ে থাকা, নয়ি নভেলি দুলহান দুইখান পাল্টাপাল্টি হয়ে যেতে ঝামেলা শুরু। বউ পালটে যেতে স্বাভাবিক ভাবেই দুটি পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়ে – এবং গল্প নরম রোদের মতো এগোতে থাকে। মাঝে আসে সরল গ্রাম্য পরিবার – তাদের আচার বিচার, শস্য খামার, পারিবারিক রীতিনীতি। একটি মেয়ে, উচ্চাকাঙ্খী। সে পড়তে চায়। আকাশ ছুঁতে চায়। সে জয়া। উচ্চশিক্ষার জন্য সে রীতিমত পরিকল্পনা করে ঘর ছাড়ে। আরেকজন ঘরেলু। সে, ফুল। নামের মতোই নাজুক। ঘটনাচক্রে রেলস্টেশনের এক মহিলার কাছে আশ্রয় পায়। তিনি আবার স্টেশনে দোকান চালান। খাবারের। সেখানে সে কাজ করে এবং প্রথম জানতে শেখে, জীবনে ‘ফ্রি লাঞ্চ’ বলে আদতে কিছু হয় না। নিতান্ত গ্রামীন এই যুবতী-প্রায় মেয়েটি, দুনিয়া দেখে সেই প্রথম। স্টেশনের ভিক্ষুক, খাবারের দোকানের কর্মী- তার বন্ধু হয়ে ওঠে। সঙ্কোচ কাটিয়ে সে নিজে হাতে তৈরি করে মিঠাই। বিক্রিও হতে থাকে সে সব। আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে তার। ওদিকে নতুন বউ হারিয়ে, স্বামীটিও সুখে নেই। ঘরে যে এসেছে – সে অন্যের বউ বটে কিন্তু বন্ধু হয়ে যায় তারা। ফুল এবং জয়া এই দুই মেয়ে এই ছবির মূল চরিত্র বটে তবে পরিচালক কিরণ রাও-এর দক্ষতার কারণে, এই ছবির প্রতিটি ঘটনা এবং দৃশ্য এক-একটি চরিত্রে পরিণত করেছে। বাড়ির লাগোয়া খেতখামারও এখানে কথা বলে। তবে সারল্যের তাজিয়া সব চরিত্রের জন্য নেই। বাস্তবের মতোই। জয়ার স্বামী প্রদীপ দুষ্টু লোক। সে নেশা করে- বউ পেটায় – এবং জ্বালিয়েও দেয়। অন্তত পূর্ববর্তী রেকর্ড তাই জানায়। এক রাগী দারোগা আছেন ছবিতে। তিনি শেষ পর্যন্ত জিতিয়ে দেন লড়াকু মেয়েটিকে। সব জেতার যেমন কিছু অনুঘটক থাকে – লাপাতা লেডিস-এ সেই অনুঘটকের কাজটিই করেন দারোগাবাবু। মনোহর নামের এই চরিত্রে দুর্দান্ত কাজ করেছেন রবিকিষণ। অভিনয় এই ছবির অন্যতম সম্পদ।

আকাশচুম্বী তারকা নেই এই ছবিতে। নেই ঝাঁ চকচকে লোকেশন। মরমী গল্প এবং চিত্রনাট্যের মধ্যে দিয়ে পরিচালক কিরণ রাওয়ের এই ছবি এক ভারতবর্ষের কাহিনি লেখে সেলুলয়েডে। সেই ভারতে, আতুরকে আজও লোকে আশ্রয় দেয়। অজানিতকে রুটি খাওয়ায়। বন্ধুতা শেখায়। ঘুষখোর দারোগা, একজনের উড়ালের স্বপ্নকে এগিয়ে দেয়। অন্য লোকের বউকে বাড়ির মেয়েরা আদর করে পাশে বসায়। ছাদের নীচে জায়গা দেয়। আর জয়া তাদের স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দেয়। নিজেকে ভালবাসতে শেখায়। আরও কত কী যে হয়…।

লাপাতা লেডিস, ভারতীয় সিনেমা জগতের অন্যতম মাইলস্টোন বিবেচিত রইল।

 
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *