ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়
মানিকবাবু একলা লোক। অশীতিপর বাবার সঙ্গে থাকাকালীন আমাদের ছবির শুরু। সকালের আল্যার্ম-কে পছন্দ করে, এমন লোক মেলা ভার। মানিকবাবুও তার ব্যতিক্রম নন। তিনিও ঘোর অনিচ্ছা সত্বেও ঘুম থেকে উঠে নিজের এবং বাবার প্র্যাতহিক কাজকর্মে লিপ্ত হন। উপায়ই বা কী? বুড়োবাবার কেবল মানিকবাবু আছেন। আর মানিকবাবুর অবশ্য বাবা ছাড়া গাছ আছে অনেক। ফেলে দেওয়া ফ্রিজ, সাদা কালো টেলিভিশন সেটের পাঁজরে তিনি গাছদানি রাখেন। রাতের রুটি খেতে, তাঁর কাছে আসে পাড়ার কুকুরের দল। আপিস ফেরত, কবিতা পড়াতে যান। স্মার্ট ফোনের পাহারাবিহীন জীবনের স্বাধীনতাও কিছু কম নয়। পথে যেতে যেতে ফোনের পর্দার চোখ রাখতে হয় না বলে, তিনি মরতে বসা মহীরূহ দেখতে পান। এগিয়ে তার মরচে ধরা গোড়ায় জল দিতে যেতে পারেন। ব্যস্ত দিন, কাজের ফাঁকে আকাশে মুখ তুলে দেখার সময় পান। গলিপথে হাঁটতে হাঁটতে দু’দন্ড জিরোতে পারেন। আপন মনে ঘুরে বেড়ান শহরের আনাচে কানাচে। সকালে বাজার সেরে রান্না করে এক থালায় খাওয়া বাবা-ছেলের শহরের কোনে এক ছাদওয়ালা বাড়িতে একটেরে জীবন যাপনে আপাত ভাবে তেমন কোনও ওঠা পড়া না থাকা নিয়েই ছবি এগোতে থাকে।
তারপর এক ভোরে, গান শোনাতে শোনাতে ক্যাসেট আটকে যায়। মারা যান মানিকবাবুর বাবা। বাবাকে পুড়িয়ে, বাড়ি ফিরে, মানিকবাবু একা লোক আরো একা এবার। তবে আরও কিছুটা মুক্তিও আসে তাঁর। হারানোর কিছু না থাকলে, মানুষ যে স্বাধীনতা পায়, তার তুলনা নেই। মানিকবাবু প্রায় সেই অবস্থায় পৌঁছে তিনি প্রেমে পড়লেন। গেল অনেক কিছু। মাথার ওপর থেকে ছাদও যাওয়ার উপক্রম হলো। ঘর ফাঁকা করে বিদায় করলেন, ছেলেবেলার বাক্সে জমানো ছুটকো স্মৃতি মাখা জিনিসপত্র। আসবাবপত্রও গেল। ফাঁকা দেওয়ালে কেবল বিগত ক্যালেন্ডার ঝুলে রইল। সেও খুব বেশিদিন নয়। বাকিটুকু অলিখিত থাকাই শ্রেয়। তাই রইল।
পরিচালক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটাই প্রথম ছবি। সাদা কালো ফ্রেমে এক অলীক জীবন দেখিয়েছেন তিনি আমাদের। সেখানে কলকাতা শহর তার যাবতীয় অসুন্দর গলি, ব্যস্ততা, হুল্লোড়, বাজার, পথ, গঙ্গার ঘাট, জমায়েত, বিজ্ঞাপনের ভিড় পেরিয়ে এক সমান্তরাল শহরের সন্ধান দেয় – সেই কলকাতায় ছাদভ’রে বাগান, ফাঁকা দেওয়ালে টিকটিকি, সিপিয়া ছবি, পথ কুকুরদের আনাগোনা, সকালের কলরোল আর সবার মাঝে, লুকিয়ে থাকা একটা রাজার মতো লোক। সে গিয়ে দাঁড়ায় ধাপার মাঠে। তখন ঝড় আসবে আসবে করছে- লোকটা ময়দানে শুয়ে প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা বলে যায় অনর্গল। বন্ধু তাকে পাগল ভাবে। ভাবে চোখের সমস্যা হয়েছে। বাড়িওয়ালা ঘর ছাড়তে বললে, মানিকবাবু যখন ছাদ ছাড়া ঘর নিতে অস্বীকার করেন, তাকে গালাগাল দেওয়া হয়। এসব অচেনা লাগে আমাদের। ফোনহীন লোক যেন ভিন গ্রহের জীব! এই অসম্ভব ব্যস্ত, ছুটপ্রবণ প্রজন্মের কাছে, মানিকবাবুর মেঘ এক এল ডোরাডো। হারিয়ে যাওয়া অবকাশের দূত। চন্দন সেন, মানিকবাবুর ভূমিকায় জীবনের সেরা কাজটি করেছেন। বাড়িওয়ালার ভূমিকায় অরুণ গুহঠাকুরতা অনবদ্য। মানিকবাবুর বাবার রোলে নিমাই ঘোষের জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকাটুকু এমন এক আকুতি নির্মাণ করে যে, জীবনের সমস্ত প্রার্থনা যেন জমা হয় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানোর জন্যে। একটিবার বাইরে বেরতে পারা যেত যদি! ছোট্ট ভূমিকায় ব্রাত্য বসু সিগনেচার কাজ করেছেন। দেবেশ রায়চৌধুরি মানিকবাবুর বন্ধু। বিপদের সহায়। তাঁর অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দুরন্ত যথারীতি।
মানিকবাবুর মেঘ, দেখে নিন। বাংলা ছবির ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে রইবে এই ছবি।
তারপর এক ভোরে, গান শোনাতে শোনাতে ক্যাসেট আটকে যায়। মারা যান মানিকবাবুর বাবা। বাবাকে পুড়িয়ে, বাড়ি ফিরে, মানিকবাবু একা লোক আরো একা এবার। তবে আরও কিছুটা মুক্তিও আসে তাঁর। হারানোর কিছু না থাকলে, মানুষ যে স্বাধীনতা পায়, তার তুলনা নেই। মানিকবাবু প্রায় সেই অবস্থায় পৌঁছে তিনি প্রেমে পড়লেন। গেল অনেক কিছু। মাথার ওপর থেকে ছাদও যাওয়ার উপক্রম হলো। ঘর ফাঁকা করে বিদায় করলেন, ছেলেবেলার বাক্সে জমানো ছুটকো স্মৃতি মাখা জিনিসপত্র। আসবাবপত্রও গেল। ফাঁকা দেওয়ালে কেবল বিগত ক্যালেন্ডার ঝুলে রইল। সেও খুব বেশিদিন নয়। বাকিটুকু অলিখিত থাকাই শ্রেয়। তাই রইল।
পরিচালক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটাই প্রথম ছবি। সাদা কালো ফ্রেমে এক অলীক জীবন দেখিয়েছেন তিনি আমাদের। সেখানে কলকাতা শহর তার যাবতীয় অসুন্দর গলি, ব্যস্ততা, হুল্লোড়, বাজার, পথ, গঙ্গার ঘাট, জমায়েত, বিজ্ঞাপনের ভিড় পেরিয়ে এক সমান্তরাল শহরের সন্ধান দেয় – সেই কলকাতায় ছাদভ’রে বাগান, ফাঁকা দেওয়ালে টিকটিকি, সিপিয়া ছবি, পথ কুকুরদের আনাগোনা, সকালের কলরোল আর সবার মাঝে, লুকিয়ে থাকা একটা রাজার মতো লোক। সে গিয়ে দাঁড়ায় ধাপার মাঠে। তখন ঝড় আসবে আসবে করছে- লোকটা ময়দানে শুয়ে প্রেমিকার দিকে তাকিয়ে থাকে। কথা বলে যায় অনর্গল। বন্ধু তাকে পাগল ভাবে। ভাবে চোখের সমস্যা হয়েছে। বাড়িওয়ালা ঘর ছাড়তে বললে, মানিকবাবু যখন ছাদ ছাড়া ঘর নিতে অস্বীকার করেন, তাকে গালাগাল দেওয়া হয়। এসব অচেনা লাগে আমাদের। ফোনহীন লোক যেন ভিন গ্রহের জীব! এই অসম্ভব ব্যস্ত, ছুটপ্রবণ প্রজন্মের কাছে, মানিকবাবুর মেঘ এক এল ডোরাডো। হারিয়ে যাওয়া অবকাশের দূত। চন্দন সেন, মানিকবাবুর ভূমিকায় জীবনের সেরা কাজটি করেছেন। বাড়িওয়ালার ভূমিকায় অরুণ গুহঠাকুরতা অনবদ্য। মানিকবাবুর বাবার রোলে নিমাই ঘোষের জানালা দিয়ে বাইরে চেয়ে থাকাটুকু এমন এক আকুতি নির্মাণ করে যে, জীবনের সমস্ত প্রার্থনা যেন জমা হয় গিয়ে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ানোর জন্যে। একটিবার বাইরে বেরতে পারা যেত যদি! ছোট্ট ভূমিকায় ব্রাত্য বসু সিগনেচার কাজ করেছেন। দেবেশ রায়চৌধুরি মানিকবাবুর বন্ধু। বিপদের সহায়। তাঁর অভিনয় নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দুরন্ত যথারীতি।
মানিকবাবুর মেঘ, দেখে নিন। বাংলা ছবির ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে রইবে এই ছবি।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন