micro-story-7ti-anu-golpo

সাতটি অণুগল্প
নীহারুল ইসলাম


~যুগলবন্দী~

ঘরবন্দি হয়ে থাকতে থাকতে বড় দুঃখে বউ একদিন গেয়ে উঠল, ‘কারো কেউ নই গো আমি, কেউ আমার নয়।’ স্বামী উত্তরে গাইল, ‘বাতাসে ভাসছে করোনা, সবার মনে মৃত্যু ভয় … ‘

~মরা ইলিশ~

কর্তা ইলিশ কিনে এনে ঝিয়ের হাতে দিয়ে বললেন, ভালো করে রান্না কর তো! খেয়ে কাজে যাব। গিন্নী পাশেই ছিলেন। ঝিকে বললেন, তুই সর- আজ আমি মাছ রান্না করব। একথা শুনে মরা ইলিশ হেসে উঠল …

~স্বাধীনতা~

প্রকাশ্য রাস্তায় দুই বয়স্ক মানুষের মারামারি। পুলিশ এল। জিজ্ঞেস করল, তোমরা নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করছ কেন?

দু’জনেই একসঙ্গে জবাব দিল, পাশাপাশি বাস করে পচাত্তুরে বুড়ো হয়েও আমরা নিজেরাই বুঝতে পারলাম না কেন আমরা লড়ছি! তাহলে তোমাকে কী উত্তর দেব?

~পেপসি~

বাবা দমকলকর্মী, ডিউটিতে বেরোবেন।
বেরনোর আগে তাঁর অভ্যেস মতো একমাত্র কন্যাকে জিজ্ঞেস করলেন, কি আনতে হবে মা? কন্যা বলল, বাপি পেপসি এনো বাবা।
###
বাপি এখন বাগরি মার্কেটে আগুন নেভাতে ব্যস্ত। হাতে জলের পাইপ ধরে আগুন নেভাতে লড়াই করছেন। ভাবছেন, বাগরি মার্কেটে নয়, যেন ওই আগুন লেগেছে তাঁর কন্যার গায়ে। তাঁর একমাত্র কন্যা জ্বলেপুড়ে মরছে। আর তিনি পেপসি ছিটিয়ে তাকে বাঁচাতে চাইছেন …

~ফেসবুক~

– কোথায় আছিস?
– এই তো বাড়িতেই।
– কী করছিস?
– ফেসবুক।
– চল, ঘুরে আসি!
– কোথায়?
– খান্দুয়া, পদ্মাপাড়।
– দাঁড়া, আসছি।
###
দুই বন্ধু পদ্মাপাড়ে এসে বসে আছে। দু-জনের হাতেই মোবাইল। দু-জনেই ব্যস্ত তা নিয়ে। কেউ কারও সঙ্গে কোনও কথা বলছে না। কেউ কিছু দেখছে না। কিছু শুনছেও না। অথচ তাদের পা ছুঁয়ে কলকল বয়ে যাচ্ছে পদ্মা অসীমের খোঁজে …

~চশমা~

প্রচণ্ড গরম।
শ্রাবণের বৃষ্টির মতো আমার শরীর থেকে দরদর করে ঘাম ঝরছে। সেই ঘামে চোখের চশমাটা কিছুতেই চোখে থাকতে চাইছে না, বার বার পিছলে পড়ছে। হয়ত শ্রাবণ-স্রোতে কোথাও ভেসে যেতে চাইছে। আমি তা হতে দিচ্ছি না। ঠিক হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে সেটা তুলে আবার চোখে পরে নিচ্ছি।
যখন বুঝতে পারলাম এই গরমে ব্যাপারটা আমার কাছে একটা খেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ঠিক তখনই আবার সেটা পিছলে কোথায় যে পড়ল, অনেকক্ষণ আর খুঁজে পাচ্ছি না। অন্ধ হয়ে পাগলের মতো চারপাশ হাতড়ে বেড়াচ্ছি।
হঠাৎ আমার প্রতিবেশী ল্যালহার আবির্ভাব। জিজ্ঞেস করল, কী খুঁজছ দাদা?
বললাম, আমার চোখের চশমাটা রে ভাই!
ল্যালহা বলল, ওটা আর পাবে না দাদা। ফালতু হাতড়ে বেড়াচ্ছ। তুমি খেয়াল করনি, কিন্তু ওটা কবেই স্রোতে ভেসে গেছে। শুধু ফ্রেমটা কোনও মতে খড়কুটোর মতো আটকে ছিল। এতদিন যেটা তুমি বয়ে বেড়াতে ! আজ সেটাও গেল। অবশ্য একদিক থেকে ভালই হল। তোমার নাক-কানের বোঝা খানিকটা অন্তত কমল …

~করোনা ভাইরাস~

ঘুম ভাঙতেই বউ বলল, শুয়েই থাকবে না বাজারে যাবে?
আমি ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসলাম। জিজ্ঞেস করলাম, বাজার! কেন?
বউ বলল, চা-চিনি-দুধ নেই। সাবান নেই। গিয়ে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো। না হলে সকালের চা পাবে না। আর স্নান বিনা সাবানেই করো।
চা-পাতা, চিনি, দুধ নেই তা বুঝলাম। লকডাউনে যে হারে ঘন ঘন চা খাচ্ছি, শেষ হতেই পারে। কিন্তু সাবান!
জিজ্ঞেস করলাম, এই তো সেদিন মাসকাবারিতে তিনটেতে সাবানে একটা ফ্রি নিয়ে এলাম! এর মধ্যে সবগুলো শেষ হয়ে গেল?
বউ বলল, হবে না! সাবানকে যদি উঠতে বসতে প্রেমিকা ভেবে হাতে ঘষো, মুখে ঘষো, তাহলে সাবান শেষ হবে না তো আর কে শেষ হবে? করোনা ভাইরাস!

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *