micro-story-amay-cheno-ki

আমায় চেনো কি?
দেবদত্তা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়


আমি জারা। আমি অনাথ। অনাথ আশ্রম থেকে একটা পার্লারে কাজ ঠিক করে দিয়েছিল। তবে একঘেয়ে কাজ আমার ভালো লাগে না। একদিন রাতে এলোমেলো হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনে এসে পৌঁছে গেলাম। একটা ট্রেনে চড়ে বসলাম। না, টিকিট কাটিনি। যখন টিটি এল আমি ওঁর পাশ দিয়ে হেঁটেই বাথরুমে চলে গেলাম, কেউ কিছু বলল না। একসময় সকাল হল, কিছুক্ষণ পর ট্রেনটা একটা বড় স্টেশনে থামল। একে একে সবাই নেমে গেল। নাম দেখলাম, নিউ জলপাইগুড়ি। হঠাৎ দেখলাম একটা সিটে এক মাঝবয়সি মহিলা শুয়ে আছে, একটু অবাক হলাম। চলে যেতে গিয়েও দাঁড়িয়ে পড়লাম। ভদ্রমহিলাকে দুবার ডাকলাম, ”শুনছেন, স্টপেজ এসে গেছে। আপনি নামবেন তো? ট্রেন তো খালি হয়ে গেল।”

কোনো হুঁশ নেই। এবার গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠলাম। গা যে পুড়ে যাচ্ছে। দরজার কাছে গিয়ে এদিক ওদিক চাইলাম। সাহায‍্যর জন‍্য কাউকে দেখতে পেলাম না। আবার সিটের কাছে এলাম, মহিলার বোতল থেকে একটা জল নিয়ে ওঁর চোখে মুখে দিলাম। মহিলা উঠে বসলেন। বললেন, ”স্টপেজ এসে গেছে?”

”অনেকক্ষণ, আপনার বোধহয় শরীর ঠিক নেই। জ্বর এসেছে।”

”হ‍্যাঁ।” উঠে দাঁড়াতেই কেমন টলে পড়লেন। আমি ধরে ফেললাম। ওঁর ট্রলি সুটকেশ আর সাইড ব‍্যাগটা কাঁধে নিয়ে বললাম, ”আমায় ধরে ধরে আসুন। নামতে হবে।”

টলমল ক‍রতে করতে উনি আমায় ধরে নেমে এলেন।

আমায় ধন‍্যবাদ জানালেন। ফোন করে ড্রাইবারকে ডাকলেন। জল খুঁজছিলেন। তাড়াহুড়োয় ওঁর বোতলটা ট্রেনেই ছেড়ে এসেছি, আমারটা এগিয়ে দিলাম। উনি জল খেলেন।

আমি ওঁকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে গেলাম। ভিড়ের ভেতর মিশে বাইরে বেরিয়ে এলাম। আপাতত গন্তব‍্য তিনচুলে, একটা শেয়ার গাড়ি পেয়ে গেলাম।

একঘন্টা পর ফোন অন করে একটা বিশেষ সাইটে গেলাম। চ‍্যাট বক্সে হাই লিখতেই ফুটে উঠল, ”গুড জব। পেমেন্ট তোমার একাউন্ট এ ঢুকে গেছে।”

আমি ফোনটা বন্ধ করলাম। দুপুরে যখন হোম স্টে পৌঁছলাম চারদিকে মিষ্টি রোদ ঝলমল করছে।

পেট ভরে খেয়ে বাইরে এসে বসলাম, আরেকটা কাপল এসেছে। আলাপ হল। বেশ মিশুকে। ভদ্রলোকের পাখির ছবি তোলার নেশা, বললেন ভোরে পাশের জঙ্গলে প্রচুর পাখি আসবে, উনি ছবি তুলবেন। মহিলা বললেন এত সকালে তিনি এই ঠান্ডায় উঠতে পারেন না।

রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কাল ভোরে যাব হাঁটতে, ব‍্যাগ থেকে বাইনোকুলার আর ক‍্যামেরা বের করে রাখলাম।

পাঁচটায় এলার্ম বাজতেই বেরিয়ে পড়লাম। দুটো পাখির ছবি তুললাম, এগিয়ে গেলাম খাদের দিকে। নীচে ফোকাশ করলাম, বহু নীচে বোধহয় একটা নদী আছে।

”গুডমর্নিং। ওদিকে কী দেখছেন?” সেই কালকের ভদ্রলোক এসেছেন। তাকে দেখে হাসলাম। বললাম, ”দেখুন তো পাহাড়ি মুনাল নাকি?”

উনি একটু অবাক হয়ে ঝুঁকে দেখতে যেতেই একটা জোরে ধাক্কা দিলাম। চোখের নিমেষে বডিটা হারিয়ে গেল গভীর খাদে, একটা মৃদু চিৎকার বাতাসে পাক খেয়ে মিলিয়ে গেল। আমি আর কয়েকটা ফটো তুলে হোম স্টেতে ফিরলাম। সাতটায় গাড়ি বলা আছে, গন্তব‍্য দার্জিলিং।

এরা যখন টের পাবে একজন গেস্ট মিসিং আমি বহুদূরে।

গাড়িতে বসে ফোন অন করলাম, মেসেজ করলাম নির্দিষ্ট সাইটে ঢুকে। ”নেক্সট?”

রিপ্লাই এল, ”আপাতত ছুটি। কাজ এলে জানাচ্ছি। পেমেন্ট ডান।”

চেক করলাম, দুটো কাজে অনেকটাই বিট কয়েন এল। হ‍্যাঁ, এটাই আমার আসল কাজ। আমি একজন খুনি, ডার্ক ওয়েব থেকে আমি কাজ পাই, মাসে দুটো খুন। দেশের যে কোনো প্রান্তে। কখন কোথায় কী করতে হবে ওরা বলে দেবে। যেমন সেদিন ট্রেনের ঐ মহিলাকে সায়নাইড মেশানো জল দিতে বলেছিলাম। পেমেন্ট এসে যায় ঠিকঠাক। সাধারণ জনতার ভিড়ে মিশে থাকায় আমায় কেউ খুঁজে পায় না, এই কাজটায় আমি থ্রিল খুঁজে পাই।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *