micro-story-asukh-sukh

অসুখ সুখ
কাবেরী রায়চৌধুরী


বাজারের শেষ বেলায় আজ অনেকক্ষণ দাঁড়িয়েছিল সোনামনি। শেষ বেলায় কুড়িয়ে পাওয়া যায় অনেকরকম সবজিপাতি। কোনোটা হয়ত বিক্রেতার ঝুড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে গেছিল, কারোর খেয়ালই নেই। কোনোটা পোকায় কাটা! কোনোটাতে পচন ধরেছে হয়ত একটু আবার কোনোটা অন্য সবজির চাপে পড়ে থেঁতলে গেছে, সেগুলো অবহেলায় ফেলে দেয় দোকানদার। আর শেষ বেলায় ঝাঁটপাট দেবার সময় কাঁড়ি করে ফেলে দেয় বর্জ্য বলে। সেগুলোই কুড়িয়ে আনে সোনামনি চাঁদমনিরা। ঘরে এনে ধুয়ে মুছে তাই রাঁধে লঙ্কা দিয়ে কষে। মেঠো ইঁদুরের ঝোল হলে আরো ভালো। তবে ইদানীং গরীবের খাদ্য আলুতে টান পড়েছে। করোনা না কি এক ব্যামোর কালে সবজিপাতি সব আগুনের দামে বিকোচ্ছে! আলু তো কেনাই যায়না! কতদিন ঘরে টাটকা আলু আসেনি। এখন শেষ বেলার বাজার থেকে আগেভাগে কুড়োয় আলু। সোনামনিদের গ্রাম থেকে অনেকে আসে আলু কুড়োতে। কিন্তু এমন আকাল যে দাগী আলুও আর ফেলেনা কেউ। বড়লোক খরিদ্দাররাও একটু কম দামে দাগী আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছে নিজের চোখে দেখা!

আলুর বদলে কচু সেদ্ধ! কচু দিয়েই পিঁপড়ের ডিম রান্না করেছে। কচুর ঝাল রেঁধেছে। মুখে পুরো চরা পড়ে গেছে কচু খেয়ে খেয়ে!

আজ বাজারের এ মাথা ও মাথা ঘুরে সর্বসাকুল্যে গোটা দশ পচা আলু কুড়িয়ে পেয়েছে। সবাই মিলে ভাগাভাগি করে নিয়েছে গোটা ত্রিশ পচা আলু। তাতেই হাসি ফুটেছে মুখে।

সোনামনির দিদি মালতি পোয়াতি। বাচ্চা হবে কয়েকদিনের মধ্যেই। কীর্ণাহারে যে বাবুর বাড়িতে কাজ করে সেই বাবু ছুটি দিয়ে দিয়েছেন পেটের অবস্থা দেখে।

সে কথাই দুপুর গড়ানো বিকেলে একমাথা রোদ মেখে থালায় আলু কচুর ঝোল দিয়ে ভাত মেখে খেতে খেতে বলল মালতি, বাবু আমাদের বড় ভালো। গরীবের দুক্কু কষ্ট গুলো বোঝেন বট্যে। পেট নিয়ে হাপ্যে ঝেতাম বলে, বললে, তুই ছুটি নে মালতী। ভয় নেই মাহিনা কাটবো না। বাচ্চা হলে সুবিধামত আয়। আমার তো রবিন আছে। সুমঙ্গলা আছে। ওদের দে করিয়ে নেবো। একা মানুষের কটা আর দাস দাসী লাগে। একদিন আমাদের তিনজনাকেই এক কেজি করে আলু কিনে দিয়েছিল!

সোনামনি চোখ বড় করে তাকায়, বলে, কী আকাল পল্ল! পচা আলুও মানুষ কিনে নিয়ে যাচ্ছে! কুইড়ে বাইরে এই কটা আলু পেলাম আজ।

মালতি মন উদাস করে বলে, বাবুর বড় কষ্ট ঝানিস? মেয়েটা খপর নেয়না। সে তো মেঘালয় না কোন দেশে থাকে। তার নাকি মনে অসুখ।

— মনে অসুক! তা সেটা কেমন?

— তার নাকি কিছু ভালো লাগেনা। বাপকে ফোন করতে ভালো লাগেনা! খাবার খেতে ভালো লাগেনা। ভালো না লাগা অসুক! বাবু ফোন করলে ফোন তোলেনা। বাবু লিকে লিকে কতা বলে। তারও উত্তর দেয়না নাকি! বাবুর তো বয়স হয়েছ্যে নাকি? বউ মরেছে আগেই। চুপচাপ হয়্যে গেছে বাবু।

— বড়লোকদের কত্ত রকমের অসুক!! – তা বট্যে!

— কটা দিন কচু সেদ্ধ খাক খাবার কষ্ট পাক দেকবি আমাদের মত বাজার ঘুর‍্যে পচা দাগী সবজি কিনতে হলে ওসব ভালো না লাগা অসুক বাপমা কর‍্যে পলাবে! আরে বাবা সবকিছু বেশি বেশি কর‍্যে পেলে অমন ভালো না লাগা অসুকে ধরে… হে হে।

সূর্য গাছের মাথায় সরে সরে যায়। ঝাল ঝাল আঙুল চাটতে চাটতে সোনামনি বলল, রাতের বেলায় শুকনো লঙ্কা দে আলু পোড়া মেখ্যে দেব। পোয়াতি মুখে ভালো খাবি। পোড়ালে পচা বোঝা যাবেনা।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *