micro-story-baba

বাবা
ইসমত আরা প্রিয়া


বেলা ফুরান ফুরান ভাব, চাইর দিক অন্ধকার হয়া আসতেছে চাচা কি করবেন কিছু ভাবছেন নি?

-নারে বাপ, মাথাত কিছু আসতেছে না।

– আইসবো ক্যামনে সারাদিন তো মুখে পানি ডাও দেন নাই।

– ক্যাম্নে দিমু শুনলি না ডাক্তার সাবের কথা, কাইলার মধ্যে ২ লাক ট্যাকা জমা না দেবার পারলে ওরা অপারেশন করবেনা। আর অপারেশন যদি না হয় তাইলে আমার পরীর কি হইবো। বাড়িত যাইয়া পরীর মারে কী কমু। কী কমু আমি ক?

এই বলেই জহির আলি উঠে দাড়ালো,

টুকু তার চাচার উদ্দেশ্যে বললো,

-কই যান চাচা?

-কই আর যামু, আমগো মতো মানুষের তো মরনেরও জায়গা নাই।

এই বলে জহির আলি আবার হাসপাতালের দিকে ছুটতে লাগলো। পিছ পিছ টুকুও ছুটছে।

এতো বড় শহরের কিছুই জহিরের চেনা নয়, তবুও আজ পাঁচ দিনে জহির বেশ ভালো ভাবে এতো বড় হাসপাতালে তার মেয়ের বেডটা খুঁজে ফেলে। জহিরের চোখের মনী তার মেয়ে। পাখির মতো উড়তো পরী, হঠাত এক এক্সিডেন্টে সব এলোমেলো হয়ে গেছে, আজ পাঁচ দিন কথা বলে না। মুখের সাথে অক্সিজেন লাগানো। ডাক্তার বলেছেন ঠিকঠাক অপারেশন হলে তবেই জ্ঞ্যান ফিরতে পারে। আবার নাও ফিরতে পারে। ভিটা বাড়ি সব বিক্রি করেই এক লাক পোজে না। দিশেহারা হয়ে জহির দুইশ একান্ন নাম্বার কক্ষে ঢুকলো। একদম কর্নারের বেডে শুইয়ে পরী।

জহির তার মেয়ের কপালে হাত রেখে বললো,

– চিন্তা করিস না মা, তরে সুস্থ কইরা নিয়াই বাড়ি ফিরমু, তোর মারে যে আমি কথা দিছি।

বাবার প্রশ্নের উত্তর দেবার ক্ষমতা পরীর নেই। চোখ মুছতে মুছতে জহির হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসলো।

জহির বুঝতে পারছে তার পরী আর বাঁচবো না কারন খুব আপন মানুষ পৃথিবী ছাড়ার আগেই জানান দেয়, বুকের ভেতরটা তছনছ করে ফেলে। জহিরেরও অমনটা হচ্ছে তার পরও নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে মেয়েকে বাঁচানোর জন্য। চেষ্টা তো করতেই হবে বাবাদের হেরে যেতে নেই।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *