micro-story-bewarish-batas

বেওয়ারিশ বাতাস
কাজী লাবণ্য


কবরস্থান ত্যাগ করার আগে শেষবারের মতো আরেকবার তাকাই, নতুন কবরটার দিকে। কী অদ্ভুত আর ভয়ংকর এক অনুভূতি বুকের ভেতরটা খামচে ধরে- বাবা ওই মাটির নিচে শুয়ে আছেন!

সঙ্গে আসা সবাই যার যার ঠিকানায় চলে গেলে আমিও পায়ে পায়ে চলে আসি বাড়িতে। শূন্যতা যেন হুহুপাখি পুরো বাড়িজুড়ে ডানা ঝাপটায়। ছোট থাকতেই মা চলে গেছে। আমাদের পিতা পুত্রের সংসারে, আমরা ছিলাম পরস্পরের বেঁচে থাকার অক্সিজেন।

সামান্য এক চিলতে উঠোন, বারান্দা থেকে দু/তিন ধাপ সিঁড়ি নামতে হয়। অনুভূতিহীন শরীর নিয়ে সিঁড়িতে বসি। কবরস্থান থেকে পিছে পিছে আসা কুকুরটাকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েছি। সে আমার পায়ের কাছে শুয়ে পড়ে। সে কি আমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছে! নইলে মাথাটা কেমন যেন এলিয়ে দেয় আমার পায়ের পাতায়।

ঐ দূর নীলিমায় চিল উড়ছে, বেওয়ারিশ বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে মেঘেদের। তিতলির মতো মেঘেরা ছুটছে দিগ্বিদিক। মা বাবার আদর ভালোবাসার বৈভবে বড় হয়েছি, আর আজ আমি এক দীনহীন পথমানুষ! স্থির বসে থাকি কিন্তু মনোগহীনে সাঁতরায় এক বিক্ষুব্ধ হাঙর।

বাবা হারানোর হাহাকার আছেই, এছাড়াও বাবা যেন এক আলকাতরার ড্রামে আমাকে ছুঁড়ে দিয়ে গেছে। এই আলকাতরাই কি সত্যি! নাকি সেটা মৃত পথযাত্রীর অর্থহীন প্রলাপ! কোন দিশা পাইনা।

বাবা কোন কঠিন অসুখে অসুস্থ ছিলেন না। বার্ধক্যজনীত কারনে একদম মুখ থুবড়ে পড়লেও হুঁশজ্ঞান ছিল টনটনে। স্মৃতির সিন্দুক ছিল পরিষ্কার।

গতরাতে আমাকে ডেকে, অন্যান্য উপদেশ শেষে বললেন-

-বাবা শোন, আজ তোকে একটা কথা বলি, একথা আমাকে বলতে হবে। তোকে জানাতেই হবে, না জানালেই নয়। একটু চুপ থাকেন, লম্বা শ্বাস নেন…

বাবারে, “আমি তোর পিতা নই”।

হতভম্ব আমি মুখ খোলার আগে বাবা আবার একই কথার সত্যতা জোর দিয়ে বলেন…এরপর খুব প্রশান্তভাবে শেষ মায়া ত্যাগ করেন।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *