micro-story-bhul

ভুল
শুচিস্মিতা দেব


বেয়ারা নিমাই একগোছা চিঠি টেবিলে রেখে যেতেই উপরের খামটায় নজর পড়ে জয়ন্তর। হাতে লেখা ঠিকানা? স্ট্রেইঞ্জ! হোয়াটসঅ্যাপের যুগে চিঠি? তায় মেয়েলি ধাঁচের হস্তাক্ষর! কৌতুহলী জয়ন্ত ফাইল সরিয়ে অন্যমনস্কভাবে চিঠিটা খোলে… এবং তারপরই… তার ভ্রুদুটি বেঁকে কপালে ঘাম দেখা দেয়। সে চিঠিটা আবার পড়ে… ধীরে… অর্থ বদলায় না… অনামা এক মহিলার থ্রেট লেটার! অভিযোগটি চিটিং-এর… আশ্চর্য!

জয়ন্ত ঢকঢকিয়ে জল খায়। দুটি সন্তান আর স্ত্রী অমলাকে নিয়ে সুখের সংসার জয়ন্তর। এই মহিলার অভিযোগ জয়ন্ত তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস করেছে… সহবাস? জয়ন্ত স্তব্ধ। মহিলার সন্তানের পিতৃত্বও নাকি অস্বীকার করেছে জয়ন্ত? এবার বুঝি মহিলা জয়ন্তর কীর্তি সব ফাঁস করে দেবে…

হতবাক জয়ন্ত ভাবে, অমলা ছাড়া তো আর… তখনই বিদ্যুতের মতো একটা মুখ ঝলসে ওঠে… মৌবনী সেন… স্মার্ট, চৌখশ, সেক্সি মেয়েটি বছর দশ আগে অফিসে জয়েন করে সকলেরই মুন্ডু ঘুরিয়ে দিয়েছিল। অমলা তখন দুটো বাচ্চা নিয়ে ল্যাটাপ্যাটা। মফস্বলের মেয়ে বলে তখন বউ-এর প্রতি ক্ষীণ অবজ্ঞাও ছিল জয়ন্তর মনে। অফিসফেরৎ মায়াবিনী মৌবনী মোটরবাইকে লিফট চাইলে, ঝকঝকে মেয়েটিকে পিছনে বসাতে গর্বই হয়েছিল জয়ন্তর। তারপর রোজ… যেন নেশা ধরে গেল। অফিসে ফিসফিসানি… পাত্তা দিত না জয়ন্ত। ভাবত অন্যরা ঈর্ষায় পুড়ছে।

মৌবনী খেলুড়ে মেয়ে ছিল… বাইকে সেঁটে বসা মৌবনীর হাতদুটি পেঁচিয়ে থাকত জয়ন্তর শরীর… আগুনের ঢেলা হয়ে দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য ছুটত জয়ন্ত। তারপর দশ হাজার টাকা চাইলে না দিয়ে পারেনি জয়ন্ত। হঠাতই তারপর? ভুয়ো সার্টিফিকেটের কারণে মৌবনীর চাকরিটা গেলে রাতারাতি হাওয়া হয়ে গেল মেয়ে। গায়েব জয়ন্তর টাকাও।

তবে কি মৌবনীই তাকে ব্ল্যাকমেল করতে আসরে নেমেছে? একবার ঠকিয়ে আশ মেটেনি? ঘামছে জয়ন্ত… মাথা টিপটিপ করছে। এত বড় মিথ্যা কলঙ্ক দিল? বাইকে বসিয়ে লিফট দেওয়াকে সহবাস বানিয়ে দিল? আবার সন্তান? কী ডেঞ্জারাস! তবে এখন তো DNA টেস্ট আছে। কার না কার বাচ্চাকে জয়ন্তর নামে চালানো যাবে না কিন্তু কাদা ছোঁড়াছুড়ির নোংরামিতে ধ্বসে যাবে তার সংসার, মানসন্মান… সাধাসিধা অমলা নির্ঘাৎ আত্মহত্যা করবে! কিছুতেই মানতে পারবে না। অফিসেও কিছু কলিগদের মনে থাকতেই পারে ঘটনাটা… তারাও সন্দেহ করবে জয়ন্তকে!

চেম্বারের মধ্যে পায়চারি করে আর নিজেকে গলাগাল দেয় জয়ন্ত। প্রমোশন পেয়ে সে এখন ম্যানেজমেন্টের উচ্চপদস্থ অফিসার। জয়ন্ত বোঝে সে একটি গবেট! নাহলে অমলার মতো সরলমনা বিশ্বস্ত মেয়েকে ফেলে একটা বদমাইশের পাল্লায় পড়ে? বুকের মধ্যে যেন হাতুড়ি পিটছে! খুব ভুল করেছে… আগেই অমলার কাছে কনফেস করে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল। এই বেহায়া মৌবনী জয়ন্তকে স্ক্যান্ডেলে জড়িয়ে আরও টাকা খিঁচবে… ভুল… ভুল… ভুল করেছে জয়ন্ত… কে জানে কী প্রমান-ট্রমান আছে মৌবনীর! মাথার চুল খামচে ভাবে জয়ন্ত… একদিন পথে বিরিয়ানি খাওয়ার কথা মনে পড়ে যায়। লুকিয়ে ভিডিও বা কথাবার্তা টেপ করেছিল কি? হায় ভগবান! দশ বছর পরে এমন শাস্তি? লঘু পাপে গুরুদন্ড হয়ে যাচ্ছে না? জয়ন্ত তো অমলাকে নিয়ে শান্তিতে আছে। এরপর? অমলার বিশ্বাস একবার ভাঙলে আর জোড়া লাগবে? অমলা হয়তো সন্তানদের নিয়ে চলে যাবে কুচবিহার! যাবেই। সাধাসিধা হলেও অমলার মানসন্মান জ্ঞান খুবই প্রখর!

নিমাই এসে দাঁড়িয়েছে। দেখে সাহেবের মুখ লাল। উদভ্রান্ত দৃষ্টি। আজ টিফিনও খাননি। শরীর খারাপ করল কি?

‘সাহেব, চা খাবেন?

‘না’-

‘একটা চিঠি ভুল করে আপনার ডেস্কে দিয়েছি সাহেব’-

‘ভুল করে? কোন চিঠিটা?’

নিমাই টেবিল থেকে সেই খামটা তোলে। ‘চিঠিটা আসলে ডেসপ্যাচের জয়ন্ত দে-র… খেয়াল করিনি। সরি সাহেব’…

জয়ন্ত দেব অপলক… খেয়াল তো সে-ও করেনি। সামান্য একটা অক্ষর! ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরিয়ে দিল তাকে। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ঠিক আছে নিমাই… ভুল… আমরা সকলেই করি’…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *