micro-story-biporjoy

বিপর্যয়
তুলিকা মজুমদার


গোল্লার জীবনে বিপর্যয়ের শেষ নেই! সেই ছোটবেলা থেকেই কী করে যে সে নিজেকে উপর্যুপরি সমস্যায় জড়িয়ে ফেলে তা সে নিজেও জানে না! পড়াশোনায় কোনোদিন খুব একটা ভালো সে ছিল না, ওই কায়ক্লেশে পাশ করে যেত আর কী, কিন্তু সারা স্কুল ওকে ওর বিটকেল বিপর্যয়ের জন্য চিনত। ক্লাস ফাইভে একবার স্কুলের অ্যানুয়াল ডে’র নাটকে গোল্লা দুয়োরাণীর পার্ট পেলো। না না ভুল বুঝবেন না, ও বয়েজ স্কুলে পড়ত তাই “ক্ষীরের পুতুল” নাটকের সব চরিত্রতেই স্কুলের ছাত্রেরা অভিনয় করেছিল। সে যাই হোক, রিহ্যার্সাল তো বেশ ভালোই হলো। গোল্লা নিজেও বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিল যে নাটকে অভিনয় করে সে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে। যথারীতি অ্যানুয়াল ডে’র দিন সকলে নাটকের পোশাক পরে তৈরী হয়ে পার্ট অনুযায়ী মঞ্চে প্রবেশ করার কথা। এদিকে গোল্লা কিছুতেই তার মাথার নকল বেণী খুঁজে পায় না। এদিক ওদিক হাতড়ে কিছু না পেয়ে সে আতঙ্কে ভুগতে থাকে, পরিচালক দিলীপস্যারের ধমকের। এদিকে গোল্লার মঞ্চে ঢোকার সময় প্রায় আসন্ন তখন হঠাৎই ওর চোখে পড়ল ঘরের এক কোণে লম্বা মতো চুলের গোছা। কোনোমতে সেটা মাথায় ফিট করে সে দৌড়ালো মঞ্চের দিকে। অভাগী দুয়োরাণী চোখের জল মুছতে মুছতে পর্ণকুটিরে চলে যাচ্ছে, সে এক সাংঘাতিক স্যাড সিন্! কিন্তু একি! সকলে হো হো করে হাসছে কেন? আর কেনই বা উইংসের পাশ থেকে দিলীপস্যার রক্তচক্ষু মেলে ওর দিকে তাকিয়ে আছে? গোল্লা কিছুই বুঝতে না পেরে কোনোমতে সিনের শেষে মঞ্চের পিছনে গিয়ে পৌঁছাল! ওমা! দিলীপস্যার কোথা থেকে ছুটে এসে ওর গালে ঠাস করে চড় মেরে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে বললেন “হতচ্ছাড়া! অপদার্থ কোথাকার! চোখদুটো কি বিসর্জন দিয়েছিস! বানরছানার লেজ মাথায় লাগিয়ে ঘুরছিস কেন? আর তোর এই কাণ্ডের জন্য বিশ্বনাথ বেচারা রাণীর বেণীটাকে ল্যাজ বানিয়ে পরতে বাধ্য হয়েছে…! ”

এরপর কলেজে একবার ক্লাস কেটে সিনেমাহলে গিয়ে গোল্লা মুশকিলে পড়ে! ওর সামনের সারিতে বসা একটি যুগল বারবার ঘনিষ্ঠ হচ্ছে দেখে বিস্তর টোন টিটকিরি কাটল গোল্লা! হাফটাইমে আলো জ্বললে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর কলেজের ডিপার্টমেন্টাল হেড নববিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে বসেছিলেন সেই সিটে…!

এরকম অনেক বিপর্যয়ের ঘটনাই আছে গোল্লার জীবনে কিন্তু ইদানিং তার হয়েছে মহাসংকট। পাশের বাড়ির রণিতা ওকে প্রপোজ করেছে। রণিতা আবার হবু ডাক্তার! ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে। তার যে গোল্লার মতো সাধারণ বি. কম. পাশ স্বল্প বেতনের চাকুরেকে কেন পছন্দ হলো কে জানে? গোল্লার গলা তো রণিতাকে দেখলেই শুকিয়ে যায়, ওর চোখের দিকে তাকালে বিলকুল ভ্যাবলা বনে যায়! সেদিন কলেজ যাওয়ার পথে হাতে একটা কাগজ গুঁজে দিয়ে চলে গেলো রণিতা। কাগজটা খুলে রণিতার হাতের লেখা বিশেষ কিছু না বুঝলেও ওর মনে হলো সর্দিকাশির ওষুধের নাম লেখা আছে! আসলে হবু ডাক্তার তো, গোল্লার যে ঠান্ডা লেগেছে বুঝতে পেরেছে! কিন্তু গোল বাঁধলো পরের দিন। সকালে অফিসের পথে পা বাড়াতেই রণিতা ছুটে এসে বললো “কৈ, আমার চিঠির উত্তর দাও!” চিঠি? সর্বনাশ! ওটা প্রেমপত্র ছিল বুঝি! গোল্লা লজ্জায় মাথা হেঁট করে কোনোমতে সামাল দেওয়ার জন্য বলল ” আছে তো, ঠিক উত্তর দিয়ে দেব!” রণিতা চোখ পাকিয়ে কপট রাগ দেখিয়ে চলে গেল, বলে গেল পরেরদিন ওর উত্তর চাইই চাই! কিন্তু গোল্লা পড়ল মহামুশকিলে! কাল কাগজটা প্রেসক্রিপশন ভেবে পাড়ার ওষুধের দোকানে জমা দিয়েছিল। দোকানের কম্পাউন্ডার ছোকরা কাগজটা দেখে মাথা নেড়ে কয়েক পাতা ওষুধ দিয়ে দিল। ব্যাটা কী ওষুধ দিল গোল্লাকে? গোল্লার মাথা ঘুরতে লাগলো ভাবতে গিয়ে কারণ আগেরদিন রাতে, এমনকি ঐদিন সকালেও সেই ওষুধ দুটো খেয়ে নিয়েছে সে…!

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *