micro-story-briefing

ব্রিফিং
মোজাফ্ফর হোসেন


অদ্ভুত নেশায় পড়ে গেছি। রোজ দুপুর আড়াইটায় ব্রিফিং। আমরা একটার সময় বেটিংয়ে বসি। দিন রাত আমরা অপেক্ষা করি এই সময়টার জন্য। এখন আর বার কিংবা তারিখের হিসাব না করলেও চলে, কিন্তু সময়ের হিসাবটা এই কারণে আমাদের করতে হয়।

আজ দশ হাজার। ইলা বলে।
নয় হাজার। আমি বলি।
নিয়ম অনুযায়ী দুজনের সংখ্যার ভেতর ন্যূনতম এক হাজার ব্যবধান থাকতে হবে। ঘোষিত সংখ্যার সঙ্গে যার সংখ্যা সবচেয়ে কাছে থাকবে সে জয়ী। আমরা ১টা থেকে বসে থাকি টেলিভিশনের সামনে। চাইলে সারাদিন বসে থাকতে পারি এক চেয়ারে। এখন আমাদের নিশ্চল জীবন। আড়াইটায় ব্রিফিং। ১টা থেকে ২টার মধ্যে তিনবার পরিবর্তন করা যাবে।
বারো হাজার। ইলা আধাঘণ্টা পর সংখ্যা বদলে ফেলে।
এগারো হাজার। আমিও আরেকটু তুলে দিই।
ব্রিফিংয়ে ঘোষণা করা হলো, আজকের সংখ্যা বারো হাজার পাঁচশ। ইলাই জেতে। খেলার রীতি অনুযায়ী ইলা এবং আমি দুজনেই ফেসবুকে ফলাফলটা জানিয়ে দিই।

খেলাটা দারুণ জমে উঠেছে। ইলা দশ, আমি নয়। তার মানে আমরা উনিশ দিন ধরে টানা খেলছি।
পঁয়তাল্লিশ হাজার পাঁচশ। ইলা আজ বলে। সংখ্যাটা এভাবেই বাড়ছে।
চল্লিশ হাজার। আমার মনে হয় অতোটা বাড়বে না।
না, পঞ্চাশ হাজার। ইলা দশ মিনিট পরেই সংখ্যাটা বদলে ফেলে।
আমি স্থির থাকি আগের ঘোষণাতেই।
পঞ্চান্ন হাজার। ইলা শেষ মুহূর্তে আরো বাড়িয়ে দেয়।
ওর আত্মবিশ্বাসের কারণে আমি আর অনড় থাকতে পারি না। চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশে চলে যাই।
আজ ঘোষিত হয়েছে পঞ্চাশ হাজার।
দুজনের মাঝামাঝি। ফলাফল ড্র। আমরা ফেসবুকে জানাই সেটা। আমাদের দুজনের মধ্যে কে জিতবে সেটি নিয়ে ফেসবুকে বন্ধুদের কয়েকজন বেটিং শুরু করেছেন। ওরাও সমানভাবে উত্তেজিত।

বাজি ধরার খেলাটা আমাদের পাগল করে তুলেছে। আমরা দুজনেই জেতার জন্য মরিয়া এখন। দিন রাত মোবাইলে ক্যালকুলেটর খুলে আগের সংখ্যাগুলোর অগ্রগতি হিসাব করে আজকের সম্ভাব্য সংখ্যাটা বের করার চেষ্টা করি। শুরুর মতো মনগড়া বা অনুমানের ভিত্তিতে কোনো সংখ্যা দুম করে বলে বসি না। যেটা বলি তার পেছনে শক্ত যুক্তি থাকে। আমি রাজনীতি বেশি বুঝলেও গণিতে ভালো ইলাই। ভয়টা ওখানেই।

কাল থেকে কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্টটা আরো বেড়েছে। দুজনেরই। আমার ডায়াবেটিকস। ইলার হার্ট-সার্জারি, কিডনির সমস্যাও আছে। কাজ হবে না জেনেও আমরা হেল্পলাইনে ফোন দিতে বাধ্য হই। একজন তরুণ ডাক্তার বয়স এবং অন্যসব জটিলতা শুনে বলে, বেড খালি নেই। প্রার্থনা করুন।

ভালোই হলো। আলাদা ওয়ার্ড বা কেবিনে দিত, বেটিংটা করা হতো না। ইলা বলে।

আমার শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
ইলারও শ্বাসকষ্ট বাড়ে।
আরো বাড়ে।
আরো বাড়ে।
আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
ইলার দম বন্ধ হয়ে আসে।
আমরা অপেক্ষা করি ব্রিফিংয়ের।
ফেসবুকে বন্ধুরা অপেক্ষা করে আমাদের স্ট্যাটাসের।
খেলাটা সত্যিই জমে উঠেছে।

পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *