micro-story-drishti

দৃষ্টি

অভীক মুখোপাধ্যায়

আগে গোপাল একাই ভিক্ষে করতে আসত। ওর একটা চোখ কানা। ডান চোখটা। সপ্তাহ খানেক আগে দেখলাম একটা বারো – তেরো বছরের মেয়েকে নিয়ে আসছে। একহাতে মেয়েটার কাঁধ ধরে অন্যহাতে ভিক্ষের বাটি। আগে হাউজিং এর বাইরে বসতো। মেয়েটাকে নিয়ে আসতে দেখে আমিই সিকিউরিটিকে বলে প্রেমিসেসের মধ্যে বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম।যেদিন মেয়েটাকে নিয়ে প্রথম এল জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কে গোপাল।আমার দিকে তাকিয়ে গোপাল বলেছিল, আমার মেয়ে, পিট্টু।বাহ্! পিট্টুরানি। খুব মিষ্টি দেখতে দেখতে তোমার মেয়েকে –আমি মেয়েটার গায়ে আলতো করে হাত বুলিয়ে দিয়েছিলাম। সেদিন দুটো দশটাকার কয়েন রেখে দিয়েছিলাম গোপালের বাটিতে। পরদিন আমার মেয়ের পুরোনো জামাকাপড় আর জুতো দিয়ে এলাম পিট্টুকে। পিট্টু খুশি হলেও গোপাল হলো না মনে হয়েছিল।এরপর পিট্টুকে দেখলেই আমি ওর খোঁজ নিতাম। শরীর ঠিক আছে কিনা জিজ্ঞেস করতাম। একদিন তো বলেই ফেললাম, নখ সাদা কেন পিট্টুরানির? গোলাপী হওয়ার কথা যে। গোপাল মেয়ের দিকে নজর রাখো। টাকাপয়সা লাগলে বোলো।কাল হঠাৎ খেয়াল করলাম গোপাল মেয়েকে নিয়ে আসেনি। একা এসেছে। হাউজিং এর বাউন্ডারির বাইরে বসেছে। আমি গোপালকে জিজ্ঞেস করলাম, কী ব্যাপার গোপাল? পিট্টু কই? শরীর খারাপ নাকি মেয়েটার?গোপাল রুক্ষভাবে উত্তর দিল, ও আর আসবে না। আমি কানা হলেও অন্ধ নই। অন্যদের দৃষ্টি বুঝতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *