micro-story-drishyo

দৃশ্য
সুরশ্রী ঘোষ সাহা


-“ম্যাডাম, আমি ৩৮ বি, হরিণাভ আবাসনের সামনে চলে এসেছি। কোন্ ফ্লোরে যাব কাইন্ডলি বলবেন?”

– “আপনি লিফ্ট চেপে একদম পাঁচ তলায় চলে আসুন।”

ওয়াটার পিউরিফায়ার কোম্পানির এজেন্ট সুকান্ত, কাস্টমারের ফোনকলটা কেটে মোবাইলটা বুক পকেটে ঢোকায়। এগিয়ে যায় সামনের বিল্ডিংয়ের লিফ্টের দিকে। বেশ পুরনো বিল্ডিং। নির্জন চারিপাশ। আশেপাশে কোনো লিফ্টম্যানও নেই। লিফ্টে ঢুকে কালো কোলাপসিবল গেট টেনে পাঁচ নম্বর টিপে দেয়।

লিফ্ট উঠতে শুরু করে। দু’তলায় পৌঁছতে কোলাপসিবল গেটের ফাঁক দিয়ে সুকান্তের চোখে পড়ে ধূ – ধূ মরুভূমির ফাঁকা প্রান্তর। একটাও গাছপালা নেই কোথাও। মাটি যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সেটাও ফুটিফাটা। অবাক হয় প্রচন্ড। এটা তো বিল্ডিংয়ের লিফ্ট, সে তাহলে এসব কী দেখছে! চশমা খুলে চোখ কচলায়।

লিফ্ট উঠে যায় তৃতীয় তলার দিকে। বড় বড় চোখ করে সুকান্ত তাকিয়ে থাকে বাইরে। দ্বিতীয় তলায় সে যা দেখেছে তা যে ভুল সেটা মনের মধ্যে আগে থেকেই গেঁথে নিয়েছে। তবুও তৃতীয় তলা দিয়ে যাবার পথে দ্যাখে, ফাঁকা প্রান্তরে একটা বিরাট কুঁয়ো। যার আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বালতি আর কলসি। কাঁখে কলসি নিয়ে বহু মহিলা তখনো দূরের পথ ধরে হেঁটে আসছে সেই কুয়োর দিকে। তৃষ্ণার্ত একদল পাখি ওড়াওড়ি করছে আশেপাশে।

মনের মধ্যে ছটফটানি হয় সুকান্তর। কী হচ্ছে এসব! কী দেখছে সে!

লিফ্ট চতুর্থ তলায় ওঠে। সেখানে একটা পানীয় জলের গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখা যায়। সেই গাড়ি থেকে বালতি – বোতল হাতে জল নিতে আসা আশেপাশের মানুষজনদের মধ্যে মারাপিট চলছে। কোলাপসিবল গেটটা শক্ত হাতে চেপে ধরে ফ্যালফ্যালে দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সুকান্ত।

এর পরেই পাঁচতলা। সেখানে নামবে। কী দেখবে এবার! কী দৃশ্য অপেক্ষা করে আছে তার জন্য! মনের মধ্যে দুর্ভাবনা বাসা বাঁধে।

পাঁচ তলার দিকে লিফ্ট উঠতে শুরু করলে চোখ বন্ধ করে ফেলে। কিন্তু পাঁচতলা আসার আগেই লিফ্টটা ঘটাং শব্দ করে আটকে যায়। ভয়ে চিৎকার করে বলে উঠতে চায়, ‘বাঁচাও’। গলা দিয়ে কোনো স্বর বেরোয় না। গলা শুকিয়ে কাঠ। একটু জলের জন্য কাঁধের ব্যাগে থাকা প্লাস্টিকের বোতলটা বের করতে যাবে, ঘুমটা ভেঙে যায় হঠাৎ। বুঝতে পারে, স্বপ্ন দেখছিল সে।

পাশ ফিরে শোয়। এবার তার বাথরুম আর রান্নাঘর থেকে জল পড়ার শব্দ ভেসে আসে কানে। মনে পড়ে, শোবার সময় সে দু’তলার বদমাইশ ভাড়াটেকে জব্দ করবে বলে একতলার মিউনিসিপ্যালিটির জলের কলগুলো খুলে রেখে ছিল।

মুচকি মুচকি হাসে সুকান্ত। এতক্ষণে নিশ্চয়ই ভাড়াটেরা জল না থাকার কষ্ট হাড়েহাড়ে টের পেয়ে গিয়েছে। আজ ভালোই ভোগান্তি হয়েছে তাদের। ফ্যাত ফ্যাত করে হাওয়াই চটির শব্দ তুলে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে খুলে রাখা কলগুলো বন্ধ করতে এগোয়।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *