micro-story-ek-mutho-aalo

এক মুঠো আলো
মঞ্জিলা চক্রবর্তী


পিঠে মস্ত এক ঝোলা নিয়ে এগিয়ে চলেছে পিন্টু। মফস্বলের ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়ে পাড়ার গলিতে। মাঝেমধ্যে অনভ্যস্ত সুরে হাঁক দেয়, “টিন ভাঙা, লোহা ভাঙা, প্লাস্টিক বোতল-শিশি, পুরোনো বইখাতা… খবরের কাগজ বিক্রি আছে…।”

তার অবশ্য লোহালক্কড়ের থেকে পুরাতন বইখাতার দিকে বেশী ঝোঁক থাকে। পুরোনো বই পেলেই উল্টেপাল্টে একবার দেখে নেয়। তারপর সারাদিন এ পাড়া, ও পাড়া ফেরি করে ক্লান্ত শরীরে বিকেল বিকেল ফিরে আসে হরি মোড়লের দোকানে। সেখানে পুরোনো মালের হিসেব নিকেশ চুকিয়ে নাওয়া খাওয়া ভুলে আরও কিছুক্ষণ বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকে। তারপর যখন হরি কাকা তাড়া লাগায়, “কি রে এখনও বাড়ি যাসনি! সন্ধে তো নেমে গেল…!”

তখন সে হাতে একখান পছন্দসই বই নিয়ে বলে, “এটা নিয়ে যায়? কাল ঠিক ফেরত আনব!”

হরি কাকাও জানেন, এ ছেলে মিছে কথা কয় না।

তো সেদিন হরি মোড়লের পুরোনো জিনিসপত্রের দোকানে এলেন সন্দীপ বাবু। কলেজ স্ট্রিট পাড়ায় তার পুরোনো বইয়ের দোকান। তিনি মাঝেমধ্যে এই দোকানে আসেন সস্তায় বই সংগ্রহ করতে। বইয়ের খোঁজ করতে এসে দেখেন এক কিশোর পুরোনো বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে রয়েছে। তা দেখে বিস্মিত হয়ে হরি মোড়লকে জিজ্ঞেস করেন,”বইয়ের মধ্যে…কে ও-ই ছেলেটি?”

“ও পিন্টু, ফেরিওয়ালা। আপনি যে বই নিয়ে যান তার বেশিরভাগই তো ওই এখন নিয়ে আসে।”

“ও-ই টুকু ছেলে ফেরি করে! ওর বাবা-মা নেই?”

” মা তো ওর জন্মের সময়ই গত হয়েছে। গেল বছর বাবাটাও অ্যাক্সিডেন্টে চলে গেল!”

“তাহলে ও কার কাছে থাকে?”

“সেরকম কেউই নেই। পাড়ার এক বয়স্ক বুড়িমার কাছে থাকে। কপাল মন্দ হলে যা হয় আরকি!”

“আহা!”

“ছেলেটি বড় ভালো জানেন। পড়তে খুব ভালবাসে। বাবা চলে যাওয়ার পর স্কুল যাওয়া বন্ধ হল। এখন সারাদিন পুরোনো জিনিস ফেরি করে। ফিরেও ক্লান্ত শরীরে বেচারা বইয়ে মুখ গুঁজে থাকে।”

পিন্টু ওদিকে পাড়ার অলিগলি ছেড়ে ঢুকে পড়েছে অন্য এক জগতে। সেখানে রাশি রাশি বই। নানান গল্পের বই, ছড়া-কবিতার বই, বিজ্ঞানের বই…পশুপাখির বই। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষার বই। কত পড়বে পড়ো। সে আনন্দে চিৎকার করে ওঠে, “পেয়ে গেছি, হুর রে…!”

হরি কাকা ওকে ডাক দেয়, “কী পেলি রে পিন্টু?”

সে চোখ খুলে দেখে তার চারপাশে পুরাতন বই ছড়ানো। আর সামনে এক অচেনা লোক দাঁড়িয়ে। লোকটি তাকে প্রশ্ন করে, “খোকা, তুমি আমার বইয়ের দোকানে কাজ করবে? শুনলাম পড়তে ভালবাসো। তোমাকে মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেব। কাজও করবে, আবার পড়বেও।”

পিন্টুর চোখ দুটো উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হেসে বলে, “হরি কাকা,আমি পেয়ে গেছি…!”

 
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “micro-story-ek-mutho-aalo

  1. এটাই বাস্তব, যারা বই ভালোবাসে তারা ঠিক খুঁজে নেয় বইকে। বেশ লাগল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *