মহুয়া ব্যানার্জী
– ও টুম্পা সোনা, দুটো হাম্পি দেনা।
মাটির দাওয়ায় গড়াগড়ি খেতে খেতে বুম্বা চেঁচিয়ে গান ধরে। নেশাটা অল্প অল্প চড়ছে। গ্ৰীষ্মের বিকেলে এই খড়ের চাল আর মাটির দাওয়া এক শান্ত শীতল অনুভূতি ধরায়। সাথে দামী স্কচ। একেবারে জমে ক্ষীর। পাশের পুকুর থেকে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে।
-আস্তে, বুম্বা। নিতাইয়ের বৌ মেয়ে ঘরে রয়েছে। ঝামেলা বাড়াস না। চাপা গলায় ধমক দেয় রোমিত।
-সরি, সরি বস। আর হবে না। এই যে বাওয়া নিতাই, তুমি যে বিলিতি মাল দেখে অনেকটাই মেরে দিলে বাওয়া। বুম্বা নেশাজড়ানো গলায় যার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলল সেই নিতাই ভ্যান ওয়ালা তখন আর নিজের মধ্যে নেই। দেওয়ালে ঠেস দিয়ে কোনমতে বসে আছে। মাথাটা বুকের কাছে ঝুঁকে গেছে। কথা বলার মত অবস্থায় নেই।
চারপাশে বাঁশঝাড়, আর বনকলমী্র জঙ্গল। গরীব হলেও তিনজনের বেশ সুখী সংসার তা বোঝা যাচ্ছে। একটা লক্ষ্মী শ্রী রয়েছে এই সংসারে। অনাবিল সহজ সবাই। চারদিক খুব শান্ত, কেবল দাওয়ার বাঁশের খুঁটি থেকে ক্রমাগত একটা আওয়াজ আসছে। নিতাইয়ের বৌ বলল,
– ওটা ঘুণপোকার আওয়াজ, একবার ঘুণপোকা লাগলে পুরো খুঁটি নষ্ট করে দেবে। বড় সর্বনেশে পোকা। বলেই শরীর দুলিয়ে আবার কল তলায় চলে গেল। টিউবওয়েলের হ্যান্ডেল পাম্প করে জল তোলার সময় ছেঁড়া ব্লাউজের ফাঁক ফোঁকর, বুকের ওঠানামা, সরু কোমর বুম্বা একমনে দেখছিল। নেশা বাড়লে শরীর জাগে। বুম্বা বউটির পেছন পেছন ঘরে ঢুকল।
ডানদিকে ধানজমি আর পেছনে ধুধু মাঠ, মাঠ পেরিয়ে হাইওয়ের রাস্তা দেখা যাচ্ছে সরু ফিতের মত। ওই হাইওয়ের থেকেই নিতাইয়ের ভ্যানে তাদের এইখানে আসা। বিপদে না পড়লে কি আর এই ভ্যানওয়ালার বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। ঘটনাটা ঘটেছে সকালের দিকে।
দুই বন্ধু মিলে একঘেয়ে জীবন থেকে পালিয়ে মাঝে মধ্যেই আসেপাশে পাড়ি দেয়। তাদের ভাষায়
মস্তি করতে যায়। আসলে তাদের শহুরে জটিলতাকে গ্রামের সহজীয়া উষ্ণতায় সেঁকে নিতে যায়। আজকেও তেমনই তারা বেরিয়ে পড়েছিল। দাঁতনে পৌঁছে কোন এক হোটেলে কিছু খেয়ে নিয়ে ভেবেছিল বন ঝিনুক পলাশিয়া গ্রামে যাবে। ওখানে তাদের এক পরিচিত একটি রিসোর্ট বানিয়েছে যা পুরোটাই গ্রাম্য পরিবেশ কে ধরে রেখে বানানো হয়েছে। কিন্তু দাঁতনে পৌঁছেই সমস্যার শুরু। তারা সামনের একটা বড় মাঠে তাদের গাড়িটা রেখে, পিঠের ব্যাগ দুটো নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল। বেশ খানিকটা হেঁটে যখন পদস্থ একটা খাওয়ার যায়গায় পৌঁছায় তখন দেখে জায়গাটা পুলিশে ভর্তি। কাউকেই আর এগোতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি যেখানে তারা গাড়ী রেখেছিল সেই জায়গাও পুলিশের ব্যারিকেড।
ভোটের সমাবেশের জন্য মন্ত্রী আসবেন আজ।তাই এই ব্যবস্থা। এক পুলিশের কাছ থেকে জানা গেল যে বিকেল পাঁচটার পর মন্ত্রী ও তাঁর সহকারীরা দীঘার দিকে রওনা দেবেন। তারপর সব ফাঁকা হবে।
এই গরমে তারা অতক্ষণ কি ভাবে কাটাবে বুঝতে না পেরে সামনের ফাঁকা রাস্তাটা ধরে হাঁটা শুরু করেছিল। কিছুক্ষণ হাঁটার পর সামনে হাইওয়ে দেখতে পেল। সেখান থেকেই এই নিতাই তাঁর ভ্যানে নিজের বাড়িতে তাদের এনে তোলে। এক হাজার টাকা আগেই নিয়েছে। বিনিময়ে দুপুরের খাওয়া আর বিকেল অবধি আশ্রয় জুটেছে।
– আহ,কা্কু ছাড়। লাগছে। বাঁশে ঘেরা বাথরুমের ভেতর পেছন থেকে রোমিত জড়িয়ে ধরতেই ককিয়ে ওঠে নিতাইয়ের মেয়ে। বুম্বা ঘরে মাকে নিয়ে আদিম খেলায় ব্যাস্ত, দু হাজারের নোটটা আগেই রেখে দিয়েছে নিতাইয়ের বৌ।
– কাউকে বলিস না। পাঁচশো টাকার নোটটা তের বছরের অভাবী মেয়ের মুখ বন্ধ করে দেয়। রোমিতের হাত, মুখ সব মেয়েটির শরীটাকে পিষতে থাকে। পাঁচশো টাকার নোট চাপা দেয় আর্তনাদ। ঘুণপোকাটা কেবল শব্দ করে চলে, কুটুর, কুটুর…
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
Oshadharon 👌
Bhishhan sundor lekhar bishoy o lekhar badhuni.. asepase erakam ta akchhar hote dekha jay.. khub bhalo laglo..
বাঃ স্বল্প পরিসরে দারুণ বাস্তব চিত্র।
অসাধারণ লেখা। অপূর্ব ফিনিশিং।
ধন্যবাদ
এই কলমটা আমার চাই…
আর কিছু বলবো না।