ময়না মুখোপাধ্যায়
“হ্যাঁ গা মেয়ে ফেরি কখন আসবে বলতে পারো?”
গুপুবাবু কথাটা যাকে বললেন সেই মেয়েটি তখন এক গলা ঘোমটা দিয়ে জলের দিকে মুখ করে কিছু একটা করছিল। গুপুবাবুর কথায় তার তেমন কোন হেলদোল দেখা গেল না। এদিকে ঘাটে একটাও যাত্রী নৌকা নেই। চারিদিকে তাকিয়ে গুপুবাবু দেখলেন ঘাটে থাকার মধ্যে রয়েছে একহারা বাণ মাছের মতো একটা লম্বা ডিঙি নৌকা। সেও বুঝি আজকের মতো ঘাটে নাও ভেড়ালো। তাছাড়া এ মাছ ধরা ডিঙি, যাত্রী পার করবে বলে মনে হয় না।
নৌকাটি পরাণ জেলের। পরাণ তখন সারাদিনের মাছ ধরা সেরে ডিঙিতে বসে আজকের মতো জাল গোটাচ্ছিল। গুপুবাবুর কথাটা তার কানে যেতেই সে চোখ তুলে ঘাটের দিকে দেখল। সেখানে হদ্দ গাঁজাখোর মিন্টে ছাড়া আর কারোকে তার চোখে পড়ল না। পরাণ মনে মনে ভাবল এ বাবু দেখি মিন্টের ওপর দিয়ে যায়। নইলে আস্ত একটা মদ্দকে কিনা ‘হ্যাঁ গা মেয়ে’ বলে ডাকে।
গুপুবাবু পড়েছেন মহা বিপদে। ঘটকের সাথে এদিকে এসেছিলেন বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে। এদিকে আসার ইচ্ছে তার একেবারেই ছিল না কিন্তু ঘটক বলল মেয়েটি কচি আর সুলক্ষণা তাই। গুপুবাবুর মনে পড়ল তার আগের বৌও এখানকারই মেয়ে ছিল আর এই ঘাটেই তো -। না এখানে বেশিক্ষণ থাকার ইচ্ছে তার একেবারেই নেই। ঘটকটাও সাথে এলো না। আর অন্য বাড়ি যাওয়ার আছে। তবে মেয়েটির কথা মনে পড়ে গুপোবাবুর মনটা ভালো হয়ে গেল। বেশ ডাগর ডোগর। আজই পাকা কথা দিয়ে এসেছেন। যত তাড়াতাড়ি শুভ কাজটা সেরে ফেলা যায়। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সময় আরো খানিক গড়িয়ে যায়। ঘাট পার হয়ে এক ক্রোশ হেঁটে তবে ট্রেন ধরবেন। বাড়ি ফিরে সব জোগাড়যন্ত্র করতে হবে।
এদিকে পরাণকে নৌকা একটু দূরে বেঁধে ঘাটে উঠতে দেখে গুপুবাবু তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“ফেরি কখন আসবে বলতে পারো ?”
“আজ তো আর ফেরি নেই বাবু। শেষ ফেরি অনেকক্ষণ চলে গেছে।”
“সে কি? এখন পার হই কি করে?”
“দেখেন যদি কোন মালের নৌকা ভেড়ে।”
পরাণ উঠে নবুর চায়ের দোকানে বসল। এদিকে সূর্য পাটে বসতে যায়। গুপুবাবু অস্থির হয়ে উঠলেন। কতক্ষণে যে এই ঘাট পার হবেন। এমন সময়ে জলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ঘোমটা টানা বউটি বলল,
“বাবু কি ওপারে যাবেন? আমি পার করিয়ে দিতে পারি।”
গুপুবাবু তখনও মুখটা দেখতে পারলেন না। বললেন,
“বলো কি? কেমন করে ?”
“কেন ডিঙি নিয়ে।”
“ডিঙি কোথায়? আর তুমি বাইতে পারবে?”
” পারব না কেন বাবু? জলেই তো বাস করি। আর ওই যে ডিঙি।”
সে আঙুল দিয়ে পরাণের নৌকাটা দেখায়। গুপুবাবু পড়লেন ভারী বিপদে। পার হওয়ারও দরকার আবার এই মেয়ে মানুষের ওপর ভরসা করাও মুশকিল। অনেক দোনামনার পর তিনি পার হওয়াই সাব্যস্ত করলেন। আর উপায়ই বা কি। বললেন,
“আচ্ছা আচ্ছা, এখন নৌকা আনো।”
বউটি আঘাটা থেকে ডিঙিটা টেনে আনল। গুপুবাবুও মধুসূদনের নাম নিয়ে উঠে বসলেন ডিঙিতে। ওদিকে নবু পরাণকে ডেকে বলে,
“এ কি কান্ড! ও পরাণ তোর ডিঙিতে ওই বাবু চললেন কোথায় রে? মরবে নাকি?”
পরাণ দৌড়ে আসতে আসতে দেখল সে ডিঙি চলেছে মাঝ জলে ঘূর্ণির দিকে আর তার ওপর একা বসে আছেন গুপুবাবু।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
দারুণ 👌😀। বেশ মজার গল্প।