হাজার মৌমাছির গান
সুদীপ ভট্টাচার্য্য
যে আমাকে প্রবল অপমান করেছিলো,আমি তার সঙ্গেই চা খাচ্ছি আজকাল।যে মৃত্তিকা আমায় তিলতিল করে গড়ে তুলেছিলো তাঁর প্রতিটি ধূলিবসন দিয়ে,তার উপরেই আমি ডিনামাইট ফাটাচ্ছি ক্রমাগত।আর চিৎকার করে বলে উঠছি,—- এসো,দেখে যাও আমাকে,আমি আজ বাতাস ছুঁয়েছি।আমার হাত দুটো স্পর্শ করেছে–এই দেখো,ওই আকাশটাকে।আমার কানে আজ হাজার মৌমাছির গান।অন্য কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না চারপাশের।আমি একটু একটু করে উঠে এসেছি পাহাড়ের ঢাল থেকে,কাস্তের মতো বাঁকানো পথ থেকে,পাইনের বন থেকে,মেঘেদের মিনার থেকে,আরো উঁচুতে,আরো আরো উঁচুতে,এক্কেবারে বরফ পাহাড়ের চূড়োয়,মেঘ আর স্বপ্নতে ঢাকা আছে চারপাশ,সেখান থেকে কিচ্ছুটি শোনা যায় না,কিচ্ছুটি না।চলো কুমির ডাঙা খেলি আমরা,আমায় ছোঁও,ছোঁও আমায়,ছোঁও,আমায় ছোঁও।যে বুকে আমার জন্য কান্না ছিলো অনেকখানি,আমি সেই কান্নার জলে অবগাহন করেছি বৈশাখের তপ্ত দুপুরে।আর তারপর,ঠিক নিজেকে পরিচ্ছন্ন করে নিয়েই,এক দৌঁড়ে ছুটে গেছি লোহিত সাগরের বুকে।আমি প্রবাল প্রাচীরের মতো রক্তস্নাত হতে চাই।রক্তিম সূর্য্য আরো লাল হয়ে উঠুক লাল জলে।অন্যায় দেখলেই যে ছুরিটা শানিয়ে নিতাম শক্ত পাথরে,আজ সে পাথর বড্ড নরম,একতাল মাখনের মতো।আমি এখন মাখনের মতো ছুরি চালাই পাথরের বুকে।আস্তিনে রেখে দিয়েছিলেম বেশ কয়েকটি তাস,ইচ্ছে হলে খেলবো বলে।আমার ইচ্ছে যখন হলো,আমি আস্তিন থেকে একে-একে বার করে আনলাম প্রথমে চিরতন কে,তাকে বসিয়ে রাখি আমার ঠিক পাশে,যত্ন করে।তারপর একে একে রুইতনের রাজার সঙ্গে ইস্কাপনের রাজার দিলাম যুদ্ধ লাগিয়ে,হরতনের রানীর সঙ্গে সম্পর্ক জুড়ে দিলাম আমার পাশে বসিয়ে রাখা চিরতনের রাজা কে।আর ঠিক তারপরই,আমার গোপন মগজাস্ত্র থেকে বার করে আননাম টেক্কা গুলোকে।ব্যাস কিস্তি মাত।বাহান্ন তাসের প্রতিটি তখন আমার গোলাম।আমার মস্তিষ্কের এক-একটি নিউরোন দিয়ে তৈরী করে দিয়েছি ওদের কোমরের বেল্ট।যে আমায় প্রবল অপমান করেছিলো,আজ তার সঙ্গে বসেই সাজিয়ে নিচ্ছি আমার রণতরীকে।আমার শরীরের প্রতিটি ঠান্ডা রক্তবিন্দু,প্রতিটি ভালোবাসা,প্রত্যেকটা প্রেম,শান্তি,স্বস্তি,স্বজন–আমার যুদ্ধ ওঁদের সঙ্গে,আমার যুদ্ধ,নিজের সঙ্গেও।আমি এখন বরফ পাহাড়ের একদম উঁচুতে বসে রয়েছি,গভীর মেঘে ঢাকা চারপাশ,এখানে ঘুম নেই,খাদ্য নেই,আনন্দ নেই,আত্মীয় নেই–তবুও এখন আমি উঁচুতে,দেখো তোমাদের থেকে অনেক অনেক উঁচুতে।আমার চোখ ঝলসে যাচ্ছে সূর্য্যের বেগুনি রশ্মিতে।আমি জানি এরপর একদিন তুষার ঝড় আসবে বাজ পাখির ডানায় ভর দিয়ে।ফাল্গুনী পূর্ণিমা রাতে,যখন চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চারপাশ,আমিও ভেসে পড়বো বাজপাখির ডানায় চড়ে,তুষার ঝড়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।চারদিকে বেজে উঠবে শঙ্খনাদ।আমি মিলিয়ে যাবো ছায়াপথের রহস্যময়তায়– আর তারপর,আবার একটা জাহাজ রওনা দেবে মাঝ সমুদ্রে।