micro-story-indhan

ইন্ধন
তন্ময় সরকার


গণ্ড গাঁ থেকে শহরে এসে নামী কলেজে গণিতে অনার্স নিয়ে ভর্তি হয়েছি। আছি বন্ধুর মামাবাড়িতে পেয়িং গেস্ট হয়ে। সুখেই আছি। সেভেনের দুটো যমজ ছেলেমেয়েকে অঙ্ক-বিজ্ঞান পড়াই। মামি প্রতি রবিবার পাঠার মাংস খাওয়ান।

কিন্তু এই সুখ বেশিদিন সইল না। অতঃপর ঘরে-বাইরে জোড়া উপদ্রবে অস্থির হয়ে উঠলাম। একদিকে কলেজে ডাকসাইটে ছাত্রনেতার কুনজরে পড়ে গেলাম। কলেজে সে আমায় নিত্য উত্যক্ত করতে লাগল। অন্যদিকে বাসার ক্ষুদ্র প্রকষ্ঠে বিরক্ত করে তুলল মিনি। মামির পোষা বিড়াল।

মিনি বিশেষ ক্ষতি কিছু করে না, কিন্তু বড্ড গায়ে-গায়ে জড়ায়। আমার অসহ্য লাগে। বাস্তবে পশুপাখি আমার দু’চক্ষের বিষ, আমি ওদের জাতশত্রু। সেই আমি-ই কিনা পড়েছি মিনির পাল্লায়! এত তাড়াই, স্কেলের আঘাতে শিরদাঁড়া জখম করে দিই, তাও পিছন ছাড়ে না। দেখলেই রাগে শরীর রিরি করে। একদিন সবে ভেক্টর অ্যানালাইসিসে ডুব দিয়েছি, কানের কাছে মিউমিউ করে উঠল। মেজাজ ধরে রাখতে পারলাম না। দরজার হাক দিয়ে মিনির মাথায় সজোরে একখানা বাড়ি কষালাম। মিনি লুটিয়ে পড়ল। ভাবলাম বুঝি মরেই গিয়েছে।

কলেজ-ক্যান্টিনে বসে আছি, একটা ছেলে এসে বলল, “পটলদা তোকে সংসদ-ঘরে ডাকছে।” সংসদ-রুমে ঢুকে দেখি ছাত্রনেতা সিংহাসনে বসে আছে। আমি ঢুকতেই নেতা বলল, “প্যান্ট-জামা খুলে ফ্যাল।” ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। দেরি করছি দেখে নেতা গগনভেদী ধমক দিয়ে উঠল। আর দেরি করার সাহস হল না। তরতর করে খুলে ফেললাম সব। হাফ-জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে আছি। নেতা বলল, “ড্যান্স শুরু কর।” নেতার সাগরেদ হোম-থিয়েটারে গান চালিয়ে দিল— ‘ওলে ওওওওও…’।

ছেলেবেলায় গ্রামে দেখেছি আহত বিড়ালের শুশ্রূষা। মাথায় জল ছিটিয়ে ধামা দিয়ে ঢেকে রাখত মা-কাকিমারা। কিন্তু এখানে ধামা কোথায় পাব? হাতের কাছে বড় গামলা পেলাম। মিনির মাথায় সামান্য জল ঢেলে সেই গামলা দিয়ে ঢেকে রাখলাম।

ড্যান্স শুরু করতে পারলাম না কিছুতেই। চিরকাল নাচে আমি অপটু, উপরন্তু এমন এম্‌ব্যারাসিং সিচুয়েশন। কেঁদে ফেললাম ভেউভেউ করে। নেতা সিংহাসন ছেড়ে উঠে এল। তারপর আমার গালে সপাটে থাপ্পড় কষাল। ত্রিভূবন ঘুরে গেল। চোখে অন্ধকার।

কিছুক্ষণ পরে গামলা তুলে বিস্মিত হলাম। মিনি উঠে বসেছে। কিন্তু বিস্ময়ের তখনও বাকি ছিল। দেখি এক অদ্ভুত স্থির দৃষ্টিতে মিনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চাহনিটা সহ্য হচ্ছিল না কিছুতেই। আবার হাক নিয়ে তেড়ে গেলাম। কিন্তু মিনি এক পা-ও নড়ল না। সেভাবেই তাকিয়ে থাকল। ঘাবড়ে গেলাম ভীষণ। মিনির ভয়-ডর সব গেল কোথায়! এ কী! এবার মিনি এক-পা, দু’-পা করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে! গা-হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। ভয় পেয়ে গেলাম খুব। আরও একবার হাক উঁচিয়ে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোনও কাজ হল না। মিনি এগিয়েই আসছে… আমি আতঙ্কে পিছিয়ে যাচ্ছি… এক-পা, দু’-পা…

একটু ধাতস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। নেতা বলল, “কী হল! ড্যান্স শুরু কর।” আমি স্থির দৃষ্টিতে নেতার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। নেতা বলল, “কী রে… ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন? মারবি নাকি?” হাত উঁচিয়ে তেড়ে এল, “দেব নাকি আর-একখানা থাবড়া!” আমি এক চুলও হেললাম না। সেভাবেই একদৃষ্টে নেতার দিকে চেয়ে থাকলাম। নেতা যেন ভড়কে গেল। অতঃপর আমি এক-পা, দু’-পা করে নেতার দিকে এগোতে লাগলাম। নেতা বুঝি ভয় পেয়ে গেছে এবার। “এই, ক-কী হচ্ছে কী…” নেতা এক-পা, দু’-পা করে পিছু হটতে শুরু করল।



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *