বড় গাছটার স্বাস্থ্যবান ডাল পেয়ে যেতে সেখানেই ধারাল ছুরির পোঁচ বসলো।খুব জ্বলছিল কাটা ডালটার। হঠাৎ নরম মাটির ছোঁয়া পেয়ে কাটা অংশের যন্ত্রনা কিছুটা কমে। তখন টের পায়, মায়ের শরীর থেকে আলাদা হয়েও আলগা হতে হয়নি ওকে।টের পায় মা গাছটাও। কেঁদে বলে, বাছা! মায়ের শরীর থেকেই খাবার নিস্। তুই আমার কাছেই থাকিস্। দিনে দিনে তোর ডালে ফুল হবে, ফল হবে। সব ডাল আমার সাথে সাথে আকাশে ছুটছে। তুইও থাক্ বাছা দলে।ডালটার কাটা অংশের সাথে মাটি জড়িয়ে কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখা ছিল। রসালো মাটি মউ মউ স্বাদ ডাকে ডালটাকে। মায়ের শরীর থেকে যে রস ও পেত, তা আর সব ডালদের সাথে ভাগাভাগি করে পেতে হয়। মউ মউ স্বাদ জানিয়ে যায়, এ তোমার একলার মাটি। নাও, টেনে নাও রস, যত খুশি তত।ডালটা টের পায়, লোভ খুব চুলকাচ্ছে কাটা জায়গায়। চুলকানি বাড়ে। বাড়ে আর বাড়ে। মায়ের সাথে আকাশ দেখবে কবে তার ঠিক আছে? ডালটা লোভ করে এক টুকরো নিজস্ব মাটির। তখন সেই ডাল মাটি থেকে রস শুঁষে নেয়। আরো বেশি, আরো বেশি রস চাইতে চাইতে ডালটার শেকড় গজায়।মনের ভেতরে খুশির তুফান। নিজস্ব মাটিকে আঁকড়ে ধরে ডালটার নিজস্ব শেকড়। আর তাই ডালটাকে গাছ ভেবে যখন একেবারে আলগা হতে হয়, তখন বড় গাছটা কাঁদলেও ডালটা কাঁদেনি। নিজেকে গাছ হিসেবে দেখে বড্ড খুশি হয়েছিল। মনে মনে বলেছিল, আর সব ডালদের দেখিয়ে দেব এবার। শেখাব কীভাবে বড় হতে হয়।নিজস্ব মাটিতে ভর দিয়ে ডালটা গাছ হয়ে ধাই ধাই করে বড় হবে, ডালপালা সমেত আকাশে ছুটবে, খুব বড় আশাটাও এঁটে যায় দুশ বাই বারো ইঞ্চি মাপের টবটায়। কিছু দিন পর ফুলের মরসুম এলে টবের গাছেও ফুল আসে। মা গাছটার দিয়ে দেওয়া পরিপক্কতা কাজে লাগে। কিছু দিন পর এই ডালেই ফুল থেকে ফল হয় বেশ। বড় গাছটার ফল পাড়তে মই লাগলেও টবের গাছের ফল টুপটাপ পাড়া যায়।টবের গাছের কানে বাজে বড় গাছটার ডালদের হা হা হাসি। ওরা আকাশের গান গায়। টবের গাছটা লোভের মাটিতে দুঃখ ছড়িয়ে আর বাড়বে না ঠিক করে।ঠিক তাই। আর বাড়েনি সে। তবে তাতে ক্ষতি কি? বনসাইও যে ভালো দামে বিকোয় আজকাল।ফুল আর ফলসমেত গাছটা টবে বসে অপেক্ষা করে ক্রেতার। কেউ একজন ওকে কিনবে নিশ্চয়ই।
অণুগল্প “লোভ” পড়লাম। বেশ ভালো লাগল! এই ফরম্যাটে পাঠকগণের মনছোঁয়া খুবই কঠিন। গল্পকার-কে তার প্লটের অভিনবত্বের জন্যে ধন্যবাদ