micro-story-mrityuheen-mrityu

মৃত্যুহীন মৃত্যু
রবীন বসু


পাশাপাশি শুয়েছিল দু’জন। এর নিঃশ্বাস ওর গায়ে। ওর নিঃশ্বাস এর। মাঝখানে ছিল অদ্ভুত স্তব্ধতা। এ স্তব্ধতা আজকের নয়। বিয়ের পর থেকে। প্রায় সাতাশ বছর। এক তীব্র দূরতিক্রম্য ব্যবধান তাদের মাঝে। শুকনো নদী। জল নেই অথচ বালুময়। সব সময় কিরকির করছে। সম্পর্ক এমন হয়?

অ পাশ ফিরে দেয়ালের দিকে মুখ করে। তাই দেখে আ-ও মুখ ফেরায়। এখন আর কারও নিঃশ্বাস কারও গায়ে পড়ছে না। পিঠ পিঠকে দেখছে।

বিয়ের ঠিক সাতদিনের মাথায় এক রবিবার আ-এর পুরনো বইপত্তর গোছাতে গিয়ে অ একটা চিঠি পায়। চিঠিটা বাথরুমে বসে পড়ে জানতে পারে জনৈক ক-এর সঙ্গে আ-র একটা প্রেমের সম্পর্ক আছে। সম্পর্ক বেশ গাঢ়। শারীরিক। ওরা একই অফিসে চাকরি করে। অ- এর সঙ্গে আ- এরও প্রেমের সম্পর্ক। সাত বছর প্রেম করে আ-এর আগ্রহেই বিয়ে। তাহলে এই ক এল কোথা থেকে? চিঠি পড়ে এও জানল, ক, আ বিহনে খুবই মুষড়ে পড়েছে। তার দিন কাটছে না। রাত ভারি পাথর। আ কথা দিয়েছিল, অ-কে বিয়ের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স দেবে। তারপর ক-কে বিয়ে করবে। সে কথা স্মরণ করে দিতেই এই চিঠি।

মাথা ঠিক মত কাজ করছিল না। বাথরুম থেকে বেরিয়ে অ জামার বুকপকেটে চিঠিটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। আর বোশেখের আগুনঝরা রোদ উপেক্ষা করে সে পথে পথে ঘুরল। ময়দানের ঘাসে বসে থাকল অনেকক্ষণ। শেষে বাবুঘাটে গঙ্গার পাড়ে বসে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করল। রাত গভীর হলে মৃত মায়ের গলা শুনতে পেল, “বাপ্ অ, বাড়ি যা। খাবি না! ছিঃ! ওসব ভাবতে নেই বাপ্ আমার!”

চোখ ভরা জল নিয়ে সে উঠে দাঁড়াল। দু’জন পুলিশ এগিয়ে এল। “এখানে কী? এত রাতে। ধান্দা আছে কিছু?”

ভূতগ্রস্ত অ সে কথা কানে তুলল না। পুলিশ দু’জন পাগল ভেবে অন্যদিকে সরে গেল। সেদিন সারাটা পথ হেঁটেই বাড়ি ফিরেছিল। ভোর রাতে আ-র মুখোমুখি।

“হ্যাঁ, ক-এর সঙ্গে সম্পর্ক আছে আমার। এক সঙ্গে কাজ করতে করতে ভালোবেসে ফেলেছি। সত্যি বলতে কী, ওর সঙ্গ আমার বেশি ভালো লাগে। ওকে আমি বেশি ভালোবাসি।”

“তাহলে আমি? আমি কে?”

“তুমিও আছো। কেন দ্রৌপদীর পাঁচজন স্বামী ছিল না !”

“আমরা কিন্তু মহাভারতের যুগে নেই। আমি তা পারব না।”

“না পারলে আমার কিচ্ছু করার নেই। তবে ক-কে আমি কোনদিন বিয়ে করব না। শেষের কবিতা কোট করে বলি, ‘সে রইল দিঘি; সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে’।” আ থামে।

“আমি অমিত নই। আমার দুটো ডানা নেই।”

সেই থেকে ডানাহীন হয়ে অ বদ্ধ হয়ে আছে ঘরে। কিংবা বলা যায় বিছানায়। পাশাপাশি। আবার পিঠোপিঠি। মাঝখানে মধ্যবিত্ত সংকোচ। লোক লজ্জার পাহাড়। মৃত্যুহীন মৃত্যু নিয়ে অ বেঁচে যাচ্ছে ক্রমাগত…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “micro-story-mrityuheen-mrityu

  1. আন্তরিক ধন্যবাদ আর অভিনন্দন জানাই সম্পাদক মণ্ডলীকে।

  2. এককথায় বলতে পারি — উপস্থাপন-গুণে পরিচিত প্লট ভিত্তি করে অনবদ্য অণুগল্প আপনার রবীন বসু মহাশয়। গল্পের নামটিও অপূর্ব!

Leave a Reply to Robin Basu Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *