micro-story-mukhosh

মুখোশ
অনুভা নাথ

 

রূপাঞ্জনার জামার ভিডিওতে মোক্ষম টাইমটা হল দশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড, জিনিয়ার গয়নার ভিডিওয় তো টাইম শেষের দিকে ওই শেষ চল্লিশ সেকেন্ড। মলয়বাবুর কলম একটু থেমে গেল। জিনিয়ার ভিডিওটা কি এই লিস্টে রাখবেন? একটু ইতস্তত করলেন তিনি। গত কয়েকদিন ধরেই মেয়েটার ভিডিও দেখছেন। জামাকাপড় ঠিক জুতের পরছে না। মলয়বাবু আড়চোখে পাশে শুয়ে থাকা স্ত্রীর দিকে তাকালেন। নাহ ঘুমোচ্ছে। ওঁর স্ত্রী মিতার এই এক দারুণ স্বভাব। অতিরিক্ত কৌতূহল কখনই দেখান না। এই যে, মলয়বাবু মাঝে মাঝেই অনলাইনে কিছু না কিছু কিনে মিতাকে গিফট করেন। মিতা এই বিষয়ে ওঁকে কখনও কিছু জিজ্ঞেস করেন না!

 

মলয়বাবু আবার লিস্টে মনোনিবেশ করলেন। জিনিয়ার নামটা কেটে দিলেন। সে জায়গায় একটা নতুন নাম লিখলেন, তনু…। তিনি চট করে আয়নার দিকে তাকালেন। তাঁর চোখদুটো লোভে চকচক করে উঠল। মেয়েটার যেমন নাম তেমনই ফাটাফাটি ভিডিও। একেবারে যাকে বলে ডবকা। অনলাইনে শাড়ি বিক্রির ভিডিওয় মোক্ষম সময়ে শাড়ির আঁচল কায়দা করে কখন ফেলে দিতে হবে সেটা তনু যেন শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে! মলয়বাবু তো এই কয়েকদিনে তনু মেয়েটার ভিডিও বারবার দেখেছেন। কাঞ্জিভরমের সেটটা বাইরের চেয়ে অন্তত পাঁচশো টাকা বেশি দামে বেচেছে। তবুও মেয়েটার কী ক্রেজ়! নিজে পরেছে একটা টকটকে লাল কাঞ্জিভরম, সঙ্গে পাতলা নেটের ব্লাউজ। শাড়ির বান্ডিল তুলতে গিয়ে আঁচল ফস করে নেমে গেল নিচে। আর তনুর শাড়ি বিক্রি বেড়ে গেল চড়চড় করে! মলয়বাবু কাগজে লিখলেন, তনুর ভিডিওয় সেই শাড়ি নেমে যাওয়ার টাইম হল তিন মিনিট বারো সেকেন্ড! অনলাইন ভিডিও স্ক্রল করে ঠিক এই সময়গুলোতে মেয়েগুলো বিভিন্ন ভঙ্গিতে শরীর উন্মুক্ত করেছে। পুরো ভিডিও দেখার দরকার নেই। ঠিক ওই টাইমে দেখলেই হবে। কেউ গলার হার দেখাতে গিয়ে বুক পিঠ খোলা ব্লাউজ পরেছে তো কেউ পায়ে মোজার দৈর্ঘ্য কম, লেগ বিউটি বেশি দেখিয়েছে!

 

মলয়বাবু সতর্ক হলেন। ভিডিওর টাইমিং লেখা কাগজটা অফিসের ব্যাগে লুকিয়ে রাখতে হবে। তাছাড়া আগামীকাল আবার অফিসের বড়কর্তাদের সঙ্গে মিটিং আছে ওঁর। নারী কল্যাণ দপ্তরে কাজ করার হ্যাপা আছে বেশ। উনি কাগজ গুটিয়ে শুয়ে পড়লেন।

 

“মেয়েটির বাড়ির লোক ওর সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করেছে দিনের পর দিন। মেরেছেও। আমি নিজে একাধিকবার ওকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। এই কেসটিতে ওর বাড়ির লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি রইল।” মলয়বাবু নোটটা এতদূর পর্যন্ত লিখে মনে মনে ভাবতে বসলেন, ওঁর এখনও সব পরিষ্কার মনে আছে। এই মেয়েটার পিঠে আঘাতের চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে পিঠের দিকটা অনেকটা উন্মুক্ত হয়েছিল। মলয়বাবুর ইচ্ছে হচ্ছিল মেয়েটার টানা বেতের মতো হিলহিলে পিঠ ছুঁয়ে দেখার। তবে তিনি তাঁর ইচ্ছেয় রাশ টেনেছিলেন। সঙ্গে আরও দুজন কোলিগ ছিল, তাঁদেরকে দেখিয়ে শিউরে ওঠার ভান করে মলয়বাবু বলেছিলেন “ উফ কী বাজে ভাবে মেরেছে! এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না আর। আ… আমি কেবিনের বাইরে যাচ্ছি।” নিজের অভিনয়ের তারিফ করতে করতে উনি অফিসের সিটে বসেই মুচকি হাসলেন। উনি তো সবটাই মনে মনে রেখেছেন। বাইরের সমাজে উনি একজন শিক্ষিত, ভদ্রলোক। ভেতরে ভেতরে এটুকু সুখ, তৃপ্তিতে বোধকরি কোনও দোষ হয় না। মলয়বাবুর মনে পড়ে গেল, স্ত্রী মিতাকে জন্মদিনে একটা দামী শাড়ি সঙ্গে নেকলেস দেবেন বলেছেন। উনি ঠিক করলেন, বাড়ি গিয়ে আবারও একবার ভিডিওগুলো দেখবেন, যে মেয়েগুলোর ভিডিও দেখে বেশি মজা পাবেন, শাড়ি, নেকলেস কিনবেন তাদের থেকেই। সেই সুযোগে জিনিস দেখার অছিলায় মেয়েগুলোর সঙ্গে ভিডিও কলে কথাও হয়ে যাবে! এক্কেবারে সোনায় সোহাগা… । আরে, তিনি তো এসব মনে মনে করেন। সমাজের চোখে উনি নিপাট ভদ্রলোক। এই যে মনে এক আবার জনে আর এক। এই খেলাটায় দারুণ মজা…। দারুণ! দারুণ! মলয়বাবু পা নাচাতে নাচাতে কথাটা ভাবলেন, ওঁর মুখে খেলে গেল ক্রুর হাসি।

 



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “micro-story-mukhosh

  1. ধন্যবাদ মানসী ম্যাম। সঙ্গে থাকবেন।🙏

Leave a Reply to Anuva Nath Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *