Micro Story – Nimphool নিমফুল কাজী লাবণ্য -আচ্ছা নেড়ু! কই হারালো ক দেহি? ক’না। চুপ করে থাহিস না, ক’। ধ্যাততেরি! তুই না, কিচ্চু কতি পারিস না, তোর কুনো কিচ্ছু মনে থাহে না! আমার তো সব মনে থাহে, সব ক’তি পারি। ওই যে একদিন, দুইদিন কয়দিন সবাই মিল্লা সারারাত ধইরা আমার উপর রেলগাড়ি চালাইলো আর আমার প্যাটে কি য্যান একটা ঢুইকা গেল। সেডিই আস্তি আস্তি বিরাট হয়ি গেল! এই আমাগো কমলাপুর ইষ্টিশনের মতন বিরাট। হ্যাঁরে হ্যাঁ, এইডার নাম কমলাপুর ইষ্টিশন। এক বচ্ছর, দুই বচ্ছর, কয় বচ্ছর ধরি বড় হছিলো কতি পারবি! হিসাব জানিস! কর, কর হিসাব কর। এইযে আমি হিসাব করছি শোন- দুই না হলিও আড়াই বচ্ছর লাগিছিল। বুচ্ছিস! তেখন খুব খিদা পাইত রে, খালি খাতি ইচ্ছি কইরতো। মনে কইত, ট্রেন গুলারে ধরি ধরি চাবাই চাবাই খাইয়ে ফেলি। এ্যা? ওকি! ওদিক কই যাস? কাছে আয়, আরো কাছে আয়, হ, গলাডা জইড়ে ধর দিকি, তাইলে পরে আর খালি খালি লাগবেনা নি। জানিস, সেসময় প্যাডের মইদ্যে খালি লড়াচড়া কইত্ত। ওরে বাপরে! কী ডরাইতাম! আবার আমার খুব মজাও লাইগত রে হিহিহি…একদিন মালকা খালা কইছিল- কি কইছিল ক’দেহি- -কইছিল, আমার নাহি একটা সোন্দর বাচ্চা হইব হিহিহি, আমারে নাহি মা কইয়া ডাকব। কইব, মা ভাত দেও। তা সেই বাচ্চাটা কই গেল! কিডা নিইয়ি গেল! কই কেউ তো আমারে মা কইয়া ডাহে না! ভাতও চায় না! ভাত! ভাত কই! ভাত খাতি মন চায় রে,হারে ভাত নাই-রে! ভাত নাই! আইচ্চা না থাউক, বিরানী খামু… ওই যে একদিন প্যাডের খুব বেদনা হইলো আমি খুব চিক্কর দিয়া কাঁদলাম তখন কারা যেন হাসপাতালে লইয়া গেছিল, তারপর… তারপর…যে কি ঘটি গেল! বুজলি নেড়ু… অহন, প্যাডটা খালি কলসির লাহান ঠনঠন লাগেরে। বুকটা, য্যান এক্কেরে নিধুয়া রেললাইন হই গ্যাছে। কনে জানি হারাই গ্যাছে আমার সোনার মোহর। আহ! তুই বড্ড নড়িস, এত নড়লে চটের ফাঁক দিয়া বেহুদা বাতাস ঢোকে, শীত লাগে। কম্বলডা তো কে য্যান নিয়ি গেছে…যাউকগা… আমার নেড়ু ময়না, আমার কাউয়া পকি, নড়েনা নড়েনা… ও নেড়ু! বাপ আমার শোন তোরে একখান কতা কই। আরে কাছে আয়… হ্যাঁ হ্যাঁ আরো কাছে আয় কানে কানে কই- এমন সময় আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে, হুইসেল বাজিয়ে একটা ট্রেন ঢোকে ষ্টেশনে। দানবীয় যান্ত্রিক শব্দ থেমে গেলেও মানুষের গমগম থামেনা। দূরের অন্ধ ফকিরের মিহিন সুরে বিদীর্ণ হয় গমগমানী। শীতের বাতাসে আবার ভেসে আসে কথারা… -শোন, তোর তো চাইরডা ছাবাল, একটা আমারে দিয়িদে না! আমারে মা কইয়ে ডাকপে, আমি ভাত খাওয়ামু। দেবানি! তুই যে আমার নেড়ু ময়না, দিয়ি দে, ঠিকাছে! কি! কি কইলি! অ, দুইডা তোর দুইডা আমার। ওরে আমার কাউয়া পকি! তুই কী ভালোরে! কী ভালো! জানিতো তুই যে আমার নেড়ু… এই বলে নেড়ুর একটা ফুটফুটে ছানা টেনে নিয়ে সদ্য দুধ আসা টনটনে বুকে চেপে ধরে। ক’দিন ধরে ফোঁটা ফোঁটা তরলে গায়ের জামা কাপড় ভিজে আঁশটে গন্ধ ছড়াচ্ছিল। দুধের নহরের উৎস খুঁজে পেতে ছানাটির দেরি হয়না, পেয়ে চুকচুক টানতে থাকে। আর, একজন চিরন্তন মা মাতৃত্বের অনাস্বাদিত আবেশে দুহাতে বাচ্চাটিকে জড়িয়ে নিয়ে দুচোখ বুজে দুলতে দুলতে এক আদিমতম গুনগুনানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। অণু গল্প এর সকল সংস্করণ পড়তে এখানে ক্লিক করুন অক্টোবর,২০১৯ এর অণু গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন জানুয়ারী,২০২০ এর অণু গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন এপ্রিল,২০২০ এর অণু গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন জুলাই,২০২০ এর অণু গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন