তনুজা চক্রবর্তী
হাতাদের সন্তানের নাম চামচে। জন্মের পর থেকেই তারা ঘরে বাইরে সর্বত্র মানুষের ভোজন সঙ্গী। অর্থাত এই দুনিয়ায় তাদের কাজের কোনো অভাব নেই। হাতাদেরও প্রচুর কাজ, বলতে গেলে নাওয়া খাওয়ার সময় মেলা ভার। তারপরেও কিঞ্চিত অবসরে সন্তানদের নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। তাদের প্রতিটা পদক্ষেপের ওপর থাকে কড়া নজর ।
যা দিনকাল পড়েছে চোখ সরালেই কিছুনা কিছু অনর্থ ঘটিয়ে ছাড়বে। বিশেষ করে যেগুলো বার কাম হোটেল-রেস্টুরেন্টে কাজে বহাল। কাস্টমারদের একবার নেশা চড়লেই হল, চামচেদের তখন প্লেট ছেড়ে ডুবিয়ে ছাড়ে দামি স্কচের গ্লাসে। পরের ছেলে পরমানন্দ, যত উচ্ছ্বন্নে যায় ততই আনন্দ।
চামচেদের যখনই কেউ তিন আঙুল দিয়ে আটকে প্লেট থেকে তার বুকের ওপর খাবার চাপিয়ে মুখে পুরে দেয়, তখন বড় কষ্ট হয় হাতাদের। আবার যখন বুকের ভার হালকা করে সে প্লেটের ওপর নেমে আসে, স্বস্তি পায়। সবটাই যে খারাপ, তা কিন্তু নয়। লোভনীয় আমিষ-নিরামিষ পদের স্বাদ পেতে হলে এটুকু কষ্ট সবাইকেই করতে হয়।
কাজের জায়গাতে এমন ওঠানামা চলতেই থাকে। হাতাদের তাই এসব ছোটখাট ব্যাপার মানিয়ে নিতে খুব একটা কষ্ট হয় না। কিন্তু কেউ কেউ যখন ‘ইয়াম্মি টেস্ট’ বলে খাবারের সঙ্গে চামচেদের মুখের ভেতর ঢুকিয়ে দুই ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে, তখন পেটে মোচড় দিয়ে ওঠে। এইবুঝি ধুকপুকানি বন্ধ হয়ে গেল।
এভাবেই বিচিত্র ঘটনার মধ্যে দিয়ে কেটে যাচ্ছিল হাতা পরিবারের একটার পর একটা দিন। চামচেরাও বিন্দাস ছিল তাদের ভালোমন্দ মেশানো কর্মময় জীবন নিয়ে।
তারপরেও জগতে সুখটা অসুখে রূপান্তরিত হতে খুব বেশি সময় লাগে না। রোজ গরম সুপ, ঝোলের বাটি, ডালের বাটিতে তাদের চুবিয়ে, নয়তো সরাসরি আগুনের ওপর চাপিয়ে বুকে ক্রিম ঢেলে গরম করে আশ মেটেনি মানুষের। এভাবে পোড়ানোর মত অমার্জনীয় অপরাধ করার পরেও বুকের ওপর লালচে স্পট তৈরি হলে বাতিল ঘোষণা করেছে তাদের। এতদূর অবধি অনেক সহ্য করেছে চামচেরা, আর নয়।
এখন শারীরিক অত্যাচারকে ছাপিয়ে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মত চেপে বসেছে মানসিক যন্ত্রণা। তারা দিন-রাত দু-চোখের পাতা এক করতে পারছে না। নরক যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে তাদের। কিছু না করেও বাইরে মুখ দেখাতে পারছে না কেবল চামচে নামটার জন্য।
মনমরা সন্তানদের মুখের দিকে তাকালেই আজকাল বড্ড বেশি কষ্ট হয় হাতাদের। যুগ যুগ ধরে স্তাবকের দল নির্দ্বিধায় প্রভুর প্রতি অতি ভক্তি দেখিয়ে এসেছে, তবে সেখানে একটা মাত্রাজ্ঞান ছিল, আজকাল সেসবের কোনো বালাই নেই! যে যেভাবে পারছে, সপরিবারে চামচেগিরি করে চলেছে! শেষমেশ তার সব দাগ এসে লাগছে চামচেদের গায়ে। কি কুক্ষণে যে চামচে নামটা রেখেছিল, সেটা নিয়েই উঠতে বসতে কথা শুনতে হচ্ছে তাদের।
চরিপাশে কান পাতা দায়! চামচেদের নিয়ে নাকি চরম খিল্লিতে মজেছে আকাশ-বাতাস। মুখে মুখে ঘুরছে—
পা চাটা চামচে
দেখলেই ছুটে আসে
দেবে বলে খামচে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
দারুন হয়েছে গল্পটা