micro-story-potaka

পতাকা
মহুয়া সমাদ্দার


–এ মা, মা আজ আমায় পতাকা কিনি দিতিই হবে কিন্তু।

–ওসব তুই কিনি কি করবি রিন্টু? ওগুলান তো বড়নোকদের জিনিস আচে রে!

–আমাদের দিদিমুণিটা বুলেচে মা। কাল সকালে বাড়িতে পতাকা তুলি তাপ্পরে ইশকুল যেতি হবে।

–বাড়ি! –ছেলের কথায় একটু থতমত খেল রূপা। ফুটপাথে প্লাস্টিক টাঙিয়ে থাকে ওরা। তাকে কি বাড়ি বলা সত্যিই উচিত!

–পতাকাতেই স্বাদীনতা থাকে রে মা। পতাকাটা না ওড়ালি স্বাদীন হতি পারবোক লাই আমরা।

–পতাকাতেই স্বাদীনতা থাকে! –বড় অবাক হচ্ছে রূপা। হবেও বা। সে তো আর দিদিমুণিদের মতো পড়াশোনা জানে না!

সাত বছরের রিন্টু যদিও এসব কিছুই বুঝবে না। আজ দুতিন দিন ধরেই রিন্টু একটা পতাকার জন্যে হেঁদিয়ে মরছে। দুপুরে কাজ সেরে ফেরার পথে একটা দোকানে ঢুকেওছিল রূপা। কিন্তু দাম দেখে পালিয়ে এসেছে। একটা পাতলা কাপড়ের টুকরোর কত্ত দাম! সত্তর আশির নিচে নেই একটাও। কিন্তু এখন রিন্টু যা শুরু করেছে একটা যা হোক কিছু কিনে দিতেই হবে ওকে।

–এই পতাকাটা লিবো মা। –রিন্টুর কথা শুনে তাকালো রূপা। একটা গার্ডার দিয়ে কঞ্চির গায়ে গোটানো আছে সেটা।

–দাম কত গো দাদু? –রূপার কিছু বলার আগে রিন্টুই প্রশ্ন করে বসল।

দোকানী একবার রিন্টু আর একবার রূপার দিকে চাইল। দুজনের পরনের ছেঁড়া কাপড়ের দিকে দেখে ওদের অবস্থা মাপতে চাইল বোধহয়। তারপর বলল –তা দে দিকি গোটা চল্লিশ টাকা।

–চল্লিশ টাকা! –রূপা অস্ফুটে বলল। তারপরেই দোকানীকে উদ্দেশ্য করে বলল – কুড়িটা টাকা নিলি হবে না গো!

দোকানী আবারও কী যেন একটু ভেবে বলল – এক্ষুনি দোকান বন্ধ করবো। আচ্ছা তাই দে। ছেলেটার যখন এত শখ হয়েছে, লিয়ে যা।

রিন্টুর চোখে মুখে অদ্ভুত একটা আলোর ঝলকানি। কী ভীষণ খুশি হয়েছে সে! উত্তেজনায় টগবগ করে ফুটছে। তাদের ছাউনিতে এসেই খুলে ধরলো পতাকাটা। সঙ্গে সঙ্গে লোডশেডিং হয়ে গেল। এক্ষুনি নরেন ফিরে আসবে ঘরে। দ্রুত হাতে স্টোভ জ্বালিয়ে সেদ্ধ ভাত বসিয়ে দিল রূপা। নরেন গাড়ি চালায়। আগে রোজই মদ খেয়ে ফিরত। অন্য সব স্বামীদের মতো খিস্তি দেওয়া, গায়ে হাত তোলা সবটাই করতো। ইদানীং যে লোকের গাড়ি চালায়, তার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মেয়েদের সম্মান করা শুরু করেছে। খিস্তি খেউরি, গায়ে হাত তোলা এসব বন্ধ করেছে। আগে তো বহুদিন অশান্তির কারণে রান্না করেও ভাত মুখে তুলতে পারেনি রূপা।

–মা, দ্যাখ স্বাদীনতা ফুটো হয়ে গেছে!

–স্বাদীনতা ফুটো হয়ে গেছে! –স্বাদীনতা কী কোনও জিনিস যে তা ফুটো হতে পারে! – মনে মনে চমকালেও মুখে তা প্রকাশ না করেই বলল – ধুর বোকা! তা আবার হয় কখনও!

–হয়েচে মা। এই দ্যাখ।

রূপা পেছন ঘুরতেই স্টোভের আলোতে দেখতে পেল পতাকার মধ্যে একটা ফুটো। সিগারেটের ছ্যাঁকা লেগে হয়েছে বোধহয়। ফুটোর দিকে চোখ ফেলতেই চমকে উঠল রূপা। ওপারে একটা অন্ধকার ভারতবর্ষ দেখতে পাচ্ছে কেন!



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *