micro-story-praroddho

প্রারদ্ধ
অর্পিতা বোস


আজ একটু বেশি টাকার জন‍্য দিনেরবেলাও ঘরে খদ্দের এনেছিল মুনিয়া।

না হলে বচ্ছরকার প্রথমদিন এসব পাপ করে না। ছেলেকে নিয়ে পুজো দিতে যায়।

টাকাটা ছেলের হাতে দিয়ে বাবলুর সাথে চড়কের মেলা দেখতে পাঠায়।

একটা বিড়ি ধরিয়ে ছেলের ফেরার অপেক্ষা করে।

মনটা খিঁচড়ে আছে গতকাল ছেলেকে চড়টা মারার পর থেকেই।

— কাল চড়কের মেলা দেখতে নিয়ে যাবি মা?

‘চড়কের মেলা’ শব্দটা কানে যেতেই হাতের পাঁচটা আঙুল বসিয়ে দিয়েছিল কচি গালে।

হতচকিত ছেলে কাঁদতেও ভুলে গেছিল কয়েক মুহূর্ত। তারপর চিৎকার করে কেঁদে উঠলে ঘোর কেটেছিল যেন মুনিয়ারও। ছেলেকে জড়িয়ে নিজেও কেঁদেছিল। আজ টাকাটা হাতে দিয়ে মেলায় যেতে বললে একগাল হেসে ছেলে জিজ্ঞেস করল,

— তুই যাবি না মা?

কোনোমতে চোখের জল আটকে তাকে বাবলুর সাথে যেতে বলে।

আজ কতবছর হয়ে গেছে মুনিয়ার চোখে জল আসে না। শেষ কেঁদেছিল এখানে এসে যেদিন প্রথম শিবুবাবু তার কৌমার্য ভেঙেছিল।

বিড়ির ধোঁয়ার সাথে আবছা একটা ছবি ফিরে আসে।

গ্রামে দাওয়াতে খেলে বেড়ানো কিশোরী ময়না। আগের রাতে বলাই কাকা এসেছেন। পেটপুরে খেয়েছে পুরো পরিবার। সবাইকে অবাক করে মা মাছের মাথা আর পেটিসহ দুইপিস মাছ দিয়েছে খেতে ওকে। খুব খুশি ময়না। বলাই কাকার সাথে আজ চড়কের মেলা দেখতে যাবে।

নতুন জামা পরে চড়কের মেলা দেখতে যাবার সময় ভাইবোনদেরও মেলায় নিয়ে যেতে চেয়েছিল ময়না। কিন্তু বলাইকাকা বলেছিল যে মেলায় বেশি লোক ঢুকতে দেয় না।

কিশোরী ময়না মেলা দেখার স্বপ্ন নিয়ে বলাই কাকার সাথে বেরিয়ে এই বেশ‍্যাপাড়ায় এসে পৌঁছেছিল।

তারপর..

ময়না থেকে মুনিয়া হয়ে যাওয়ার ইতিহাসটা আর মনে করতে চায় না।

মেলা-ফেরত ছেলেটা জিলিপি এনে মুখে গুঁজে দিলে চোখের জল বাঁধ ভাঙে মুনিয়ার।

একটুদূরে দাঁড়িয়ে বাবলু দালাল মনে মনে হিসেব কষছে। হালখাতায় আবার নিয়ে যেতে হবে মুনিয়ার ছেলেকে। ছেলেপাচারকারী এই চক্রটার ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। বেশ মোটা টাকার রফা হয়েছে…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *