micro-story-pratirodh

প্রতিরোধ
নাসরীন মুস্তাফা


স্কুলের সবচেয়ে বয়সী গাছটা কেটে ফেলা হল। স্কুল কমিটির সভাপতির হুকুম বলে কথা। গাছটার খবর শুনে প্রাণতোষ মাস্টার চেঁচিয়ে আকাশ নামিয়ে ফেলেন প্রায়। একাত্তরে এই গাছের ডালে ঝুঁলিয়ে গুলি করে মারা হয়েছিল কাশেমের দলকে। মুক্তিযোদ্ধা কাশেম আর ওর দলের কয়েকজন প্রাণতোষ মাস্টারের ছাত্র ছিল তো।

প্রাণতোষ মাস্টারের চেঁচামেচি শুনে কেউ গা করেনি। কেনোই বা করবে? ছেলেপুলেদের কাছে হাবড়া বুড়ো শরীরটার নানা ক্যাচাল গা সওয়া হয়ে গেছে। শ’ পেরুনো বয়সের মানুষ, তার আবার শরীর! সেই শরীরের আবার থাকা!

প্রাণতোষ মাস্টারের নাত বউটা বলছিল, গোড়ালির গোল হাড্ডিতে, হাঁটুর বাটিতে সেই কবে থেকে নাকি ব্যথা। প্রাণতোষ মাস্টার ব্যথার সাথে বাঁচতে শিখে গেছে, তাই দেখো না যমেরও অরুচি কেমন! এখনো মরনের সময় হয়নি।

এ কী মৃত্যু নয়? চাঁদনি রাতে প্রাণতোষ মাস্টার দেখে, হাঁটুর বাটি থেকে ঝুরি নামতে থাকে, গোড়ালি থেকে শেকড়। কী সুন্দর গাছ হয়ে ওঠার কসরত! এ যদি মৃত্যু তবে, আপত্তি নেই মাস্টারের। আর তাই স্কুলের ঠিক মাঝখানে দুই হাত মেলে দাঁড়িয়ে গেল মাস্টার।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানের জন্য মঞ্চ বানানো হবে, স্কুল কমিটির সভাপতি ভাষণ দেবেন সেখানে। উটকো প্রাণতোষ ঠিক সেইখানেই দাঁড়িয়ে গেল, দুই হাতে এসে বসে পাখির ঝাঁক, যারা গান গায় সবুজ আনন্দে। গাছটা হ্যাচকা টানেও ওঠে না, নড়ে না এক চুলও। মাটির গভীরে পোক্ত হয়ে যাওয়া শেকড় আটকে রাখে তাকে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “micro-story-pratirodh

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *