শুভ্রা রায়
তখন সূর্য ছিল মধ্য গগনে। অর্ণবের যখন ঘুম ভাঙ্গল সূর্যের তির্যক আলো জানালার মোটা পর্দা ভেদ করে হোটেলের ঘরে প্রবেশ করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে। অর্ণব আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে বসে, মাথাটা প্রচন্ড ভার ভার লাগছে। কালকের হুইস্কির পরিমাপ একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। চোখের পাতায় তখনও জড়তা কাটেনি। কপাল ধরে বসে থাকে মিনিট পাঁচেক, হটাৎ খেয়াল হলো –‘ আরে মেয়েটা চলে গেছে! সেই টাকা পেলে কে আর থাকে ‘ ….. তাচ্ছিল্যের হাসি বেরিয়ে আসে।
অর্ণব বিছানা থেকে নেমে এসে প্যান্টটা পরে ব্যালকনির দরজার ক্যাচলক খোলে। একরাশ গরম হাওয়া এসির ঠান্ডা ঘরে আছড়ে পড়ে। অর্ণব ব্যালকনির রেলিং ধরে দাঁড়ায়, সূর্যের তির্যক আলোকে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না। দরজা খুলে রেখে জলের বোতল নিতে ঘরে ঢোকে। বোতল নিতে গিয়ে চোখ পড়ে যায় টেবিলের উপর –’ একি! পাঁচ হাজার টাকার নোটের দুটো বাণ্ডিল তো পড়ে আছে! টেবিলে এটা কিসের খাম? ‘
অর্ণব খামটি হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ায়। খোলা খামের ভিতর একটি চিঠি…….
অর্ণব ,
“ওয়েল কাম টু আওয়ার ন্যাশানাল এডস কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন। হ্যাঁ অর্ণব আজ থেকে তুমি আমাদের সোসাইটির মেম্বার হলে। অবাক হচ্ছো নাকি? আমি এই সোসাইটির পুরোনো মেম্বার। তাই তোমাকে ওয়েলকাম জানানো আমার দায়িত্ব বর্তায়। কলকাতা এয়ারপোর্ট থেকে আমি তোমার পিছু নিই। আমি এবার তোমায় আমার পরিচয় দিই তাহলে। তোমার অলিভাকে মনে আছে ? আরে অলিভা যে তোমায় দেড় বছর আগে ফাস্ট মার্চ শান্তিনগর বাসস্টান্ডে বলেছিল সে প্রেগন্যান্ট। অলিভা তোমাকে বিয়ে করতে বলাতে তুমি রাস্তার মধ্যেই সপাটে চড় কষিয়ে বলেছিলে — ‘ তোমার মতো মেয়েকে বাড়ির বৌ করবো ভাবলে কি করে?’
অথচ তারও আট মাস আগে ঐ শান্তিনগর বাসস্টান্ডেই তুমি অলিভার পিছু নিয়ে অলিভাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ছিলে, মনে পরেছে তোমার? মেয়েটা তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো। সরল মনে বিশ্বাস করে ফেলেছিল তোমায়। সে তো আর জানতো না তুমি জামাকাপড় বদলানোর মতো বান্ধবী বদলাও। সাড়ে পাঁচমাস হয়ে গেছে অ্যাবোরশান অসম্ভব বলে বোকা মেয়েটা অভিমান করে চলে গেল। সেই ছোটবেলায় রোড অ্যাক্সিডেন্টের সময় হসপিটালে রক্ত নেবার পর থেকে আমি অলিভার স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে ছিলাম। আমার মতো এডস এর পেসেণ্টের কোনদিনও সংসার সন্তান হবে না। ভেবেছিলাম অলিভার সন্তান হলে আমি মানুষ করবো। কিন্তু তুমি হতে দিলে না। আমি অলিভার দিদি অর্কিড, ফোর্থ স্টেজ অফ এডস, হিসেব বুঝে নিলাম।”
অর্ণব চিঠি পড়ে স্তব্ধ , মুহুর্তের মধ্যে তার মুখমন্ডল রক্তশূন্য ফ্যাকাসে হয়ে যায় , গলা শুকিয়ে আসে । শুধু নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের দ্রুত ওঠানামা অনুভূত হয় নিস্তব্ধ ঘরে । কাল অর্ণব অফিস টুর থেকে ফেরার সময় দিল্লী এয়ারপোর্টেই ঠিক করে নেয় কলকাতায় নেমে নিউটাউনের ফ্ল্যাটে ফিরে যাবে না । এয়ারপোর্টের কাছে কোন হোটেলে রিল্যাক্স করবে একরাত । এরকম সে আগেও করেছে । বাবা অন্তরা কেউ জানে না অর্ণব দিল্লী থেকে ফিরছে । হোটেলের রুমে ফ্রেস হয়ে রাত আটটায় নেমে আসে গ্রাউন্ড ফ্লোরের বারে । সেখানে হুইস্কির সাথে স্বল্পবসনা অর্কিডের আবেদন বাড়তি পাওনা ছিল । ডান্স বার থেকে অর্কিডকে নিয়ে সারারাত্রি হোটেলরুমে ছিল । অর্কিডের উন্মুক্ত শরীরের উন্মাদনা সুখের হাতছানি দিয়েছিল , উন্মাদনার চরম সুখ উপভোগ করতে করতে কখন যে ক্লান্তির কাছে পরাস্ত হয়ে চোখ বুজে এসেছিল খেয়াল ছিল না । ওফ ! আর ভাবতে পারছেনা অর্ণব । চিন্তায় বেসামাল অর্ণব ছয় তলার ব্যালকনির নিচু রেলিং -এর ধারে , এগোলেও শেষ পিছলেও শেষ ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
Darunnnnnn
আন্তরিক ধন্যবাদ 🌹
অনবদ্য
আন্তরিক ধন্যবাদ 😊