সমব্যথী
প্রতীক কুমার মুখার্জী
রাত ১১:৩০
অন্যান্য বাইকগুলো ‘অর্ডার’ সংগ্রহ করে ব্যস্তভাবে চলে যেতে, ফাঁকা আউটলেটের সামনের রেলিঙে বসেই বিল, আউটস্ট্যান্ডিং পেমেন্টের উপর অস্থিরভাবে চোখ বোলাচ্ছিল সোমু। তার অর্ডারটায় বেশ দেরী হচ্ছে। একটা আনকমন ‘থাই’ ডিশ আছে। কলকাতার শহরে, এবং ডেলিভারী জবের নিরিখে কিছুই এমন রাত নয়, কিন্তু তার যে বাড়ি ফিরে অনেক কাজ!
রাত ১১:৫০
অর্ডারি খাবারটা হাতে পেয়ে বাইকে স্টার্ট দিতে না দিতেই ফোন বেজে উঠল! রুক্ষ, কর্কশ মহিলাকণ্ঠের অনভ্যস্ত হিন্দিভাষণ, ‘কহা পে হ্যায় আপ? ডেলিভারী মে ইতনা দের!’ তাঁকে শান্ত করে, শুনশান রাস্তা ধরে বাইক উল্কাগতিতে ছুটলো কসবার দিকে। সিগন্যালে দাঁড়াতেই দ্বিতীয়বার ফোন। কাস্টমার নয়, নার্সিংহোম থেকে এলো সেটা। ‘আইটিইউ বেড নং ১০৬ এর বাড়ির লোক? একটা রেয়ার ওষুধ আনতে হবে, এমারজেন্সী।’ অনন্যোপায় সোমু গন্তব্য পরিবর্তনে বাধ্য হলো।
রাত ১২:৩০
বিধিব্যবস্থা সেরে বাইক কসবার কাছাকাছি। অন্তত সাতবার ফোন এসে গেছে। রীতিমত গালিগালাজ শুরু হয়েছে ওদিক থেকে। নেভিগেশন দেখে ঘিঞ্জি এলাকায় বাড়িটা খুঁজে, সিঁড়ি দিয়ে প্রাণপণে ছুটে উঠতে গিয়ে পড়েও গেলো সোমু। বেকায়দায় পা মচকানোর অসহ্য ব্যথা সামলে কোনমতে ডোরবেল বাজালো। সুন্দরী বাঙালী মহিলার গনগনে মুখের দিকে তাকিয়ে ক্যারীব্যাগটা বাড়াতেই, অভূতপূর্ব ঘটনার অবতারণা!
রাত ১২:৩৫
তার জামার আস্তিন খামচে, সুসজ্জিত বেডরুমে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলেন তিনি! যেখানে এসির শীতলস্পর্শে দুধসাদা বিছানায় শায়িত এক ধবধবে ফরসা বৃদ্ধা। “মায়ের ক্যান্সার হয়েছিল! অপারেশন হয়েছে সদ্য! ক্যান্সার কি জিনিস জানা আছে? কতদিন পরে একটু থাই খাবার খেতে চেয়েছেন উনি! সময়ের দাম নেই, সামান্য দায়িত্ব নেই! বিদায় হও এখুনি, অপদার্থ কোথাকার!” পাশ কাটাবার সময়ে, মহিলার মৃদু ধাক্কাতে বিধ্বস্ত সোমুর স্লিংব্যাগটা কাঁধ থেকে খসে পড়তে, রাজ্যের কাগজপত্র চকচকে মার্বেলের মেঝেতে ছত্রখান হয়ে পড়লো। সাথে মাটি ছুঁলো কিছু লবণাক্ত জলের ফোঁটাও। তার বয়সী একটি মেয়ে এসে কাগজগুলি কাঁপা কাঁপা হাতে গুছিয়ে তুলে তার দিকে বাড়িয়ে ধরেছে।
রাত ১২:৪২
ডাইনিং টেবিল থেকে খাবারটা প্লেটে বেড়ে নিয়ে ফেরার পথে, মেয়ের হাতে কাগজের তাড়াটার দিকে নজর যেতেই ভদ্রমহিলা স্থানু হয়ে গেলেন। ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের অভ্রান্ত লোগো সম্বলিত লেটারহেডের নীচে জ্বলজ্বল করছে ডায়াগনোসিস–ক্রনিক লিম্ফসিটিক লিউকেমিয়া!
অসাধারণ,খুব ভালো লিখেছ ভাই, ছোট্ট পরিসরে, অন্যভাবে