অনুভা নাথ
-কলকাতা স্পোর্টিং এর হয়ে খেলছিলাম আমি। ডিফেন্সে খেলে ওদের আক্রমণ আটকে দিলাম।
-তারপর?
শৌর্য চোখ দুটো গোল গোল করে অঞ্জনের দিকে তাকিয়ে রইল। ক্লাসের বাকি ছাত্ররাও তখন রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছে,অঞ্জন কী বলবে…
-ওদের একজনের একটা লম্বা গোল কিক থেকে বল ধরে পাস খেলতে খেলতে ম্যাচের দ্বিতীয় গোলটা আমি করে দিলাম।
সারা ক্লাস জুড়ে হাততালির তীব্র আওয়াজে অঞ্জন নিজের শেষের কথাগুলো আর শুনতে পেল না।
আজ এই ঘন বর্ষার দিনে স্কুলে অধিকাংশ টিচাররাই অনুপস্থিত। তাই ক্লাস সামলানোর দায়িত্ব পড়েছে অঞ্জনের। সে বেশির ভাগ সময় সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে থাকে। ইলেভেন টুয়েলভের ছেলেদের কাছে অঞ্জনদা ছাড়া ল্যাবই অচল। হেডস্যার মাঝে মাঝে আক্ষেপ করে বলেন
-কোথায় তোর আজ দেশের হয়ে ফুটবল খেলার কথা, আর কোথায় তুই আমাদের এই মফস্বলি স্কুলে ল্যাবে পড়ে রয়েছিস।
উত্তরে অঞ্জন কিছু বলে না। শুকনো হাসে।
যদিও স্কুলের হিসাবে তাকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী বলে দেখানো রয়েছে।
সেই অঞ্জনের ওপর আজকের দায়িত্ব পড়েছে ক্লাস ফাইভের ছেলেদের কোনক্রমে শেষ পিরিয়ডে আটকে রাখার। হেডস্যারের নির্দেশ, একটাও ক্লাস যেন ফাঁকা না যায়।
-আচ্ছা, অঞ্জনদা তুমি যে বার তোমাদের টিমকে ট্রফি জেতালে সেই বার হেতমপুরে খুব হই হই হয়েছিল?
অঞ্জনের চোখদুটো এই বর্ষার মৃদু আলোতেও যেন আনন্দে চকচক করে উঠল। সে হাসতে হাসতে বলল
-সে আর বলতে? টিমের ছেলেরা আমাকে কোলে তুলে সারা শহর ঘুরিয়েছিল।
ছাত্রদের মধ্যে থেকে একজন চেঁচিয়ে বলে ওঠে
-অঞ্জনদা, তারপর তুমি ডিসট্রিক্ট লেভেল পার করে স্টেট খেলতে গেলে?
অঞ্জনের মুখটা যেন নিভে যাওয়া মোমবাতির মতোই আচমকা কালো হয়ে গেল। ঠিক তখনই ছুটির ঘন্টা পড়ল। ছেলেরা হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে ক্লাস ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ফাঁকা ক্লাস রুমে অঞ্জন খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তারপর হাঁটুর নিচে লাগানো কৃত্রিম পা দুটো টেনে এগিয়ে চলল। হেডস্যারের ঘরে হাজিরা খাতায় সই করার সময় স্যার ওর দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন
-ছেলেগুলো সবে স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তুই প্রতি বছর নতুন ছেলেদের কাছে গিয়ে এই একই গল্প কেন করিস? তুই তো দারুণ খেলতিস। তোর মাতাল বাবার মারের ভয়ে সেদিন যদি ওভাবে রেললাইন পার করতে গিয়ে পা দুটো কাটা না পড়ত তবে তো আজ তুই এই স্কুলের গর্ব হতিস রে…
অঞ্জন করুণ হেসে উত্তর দিল
-স্যার, নিয়তিকে তো বদলাতে পারব না। তবুও ছেলেগুলোকে আমার পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করে সেইসব দিনগুলোকে এই মনের মধ্যে তাজা রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করি মাত্র। আমি জানি, আর কিছুদিন পরই ওরা সবাই আমার ঘটনাটা জানতে পারবে।
তবু যেন সেই চিরকালের করুণার দৃষ্টি পাওয়ার আগে আমি ওদের কাছ থেকে একটু গর্ব, একটু সমীহ চুরি করে নিই।
তারপর একটু থেমে অঞ্জন আবার বলে উঠল
-বলুন স্যার,এটুকুও কি আমার প্রাপ্য নয়?
হেডস্যার এরপর আর কিছু বলতে পারলেন না। একসময় অঞ্জন তার কৃত্রিম পা দুটো নিয়ে ধীরে ধীরে ওঁর ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। হেডস্যার ঘরের ভিতর থেকে দুটি ছেলের কথোপকথন শুনতে পেলেন, ছেলেদুটি তখন উচ্ছ্বসিত গলায় বলে চলেছে
-দেখিস, অঞ্জনদার মতো আমিও দারুণ খেলব। তারপর একদিন ফুটবলে স্টেটকে রিপ্রেজেন্ট করব।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
খুব সুন্দর
দুর্দান্ত লাগলো। মনকে নাড়া দিয়ে গেল।
বাহ! খুব ভাল লাগলো৷
Inspiring story that blends sports and indomitable spirit.
অনেক ধন্যবাদ❤️🌻
Nice story.
🥰❤️
লেখনশৈলী অপূর্ব,গল্পটিতে যেমন না পাওয়ার বেদনা আছে তেমনই আছে নতুন আশার আলো।
খুব সুন্দর লিখেছ।
ধন্যবাদ ভাই।🧚♂️
সুন্দর লেখণী
ধন্যবাদ🌻
খুব ভালো লাগলো।মনকেমন করা।
Very nice
অসম্ভব ভালো একটি অনুগল্প উপহার দিলেন লেখিকা অনুভা। তার কলমকে কুর্নিশ।
এ সময়ের অন্যতম প্রতিশ্রুতিমান কলম অনুভা নাথের। এই গল্পে লেখিকা আবার সেটা প্রমাণ করলেন। এরকম আরো গল্প চাই লেখিকার কলম থেকে।
ধন্যবাদ সুগতদা। 🥰🌻