টাইপিস্ট

টাইপিস্ট
ইশতিয়াক আহমেদ

ফরিদ সাহেব টাইপিষ্ট। আধা ভাঙা একটা রাইটার আছে তার।
অনেক কষ্ট করে সংসার চালান তিনি। কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত তার কাজ কমে যাচ্ছে। কিন্তু তারপরও খুব কষ্ট করে ছেলেদের পড়ান। ছেলেরা কষ্টটা টের পায় না। বুঝতেও চায় না হয়তো।
সেও জানতে দেননা তার কষ্ট। হেঁটে কাজে যান। হেঁটে বাড়ি আসেন। নিজে না খেয়ে থাকেন। দুপুরে সবচেয়ে ভালো খাবার যা খান তা হচ্ছে রুটি কলা।
তার বড় ছেলে এক মেয়েকে ভালোবাসে।
সে প্রতিনিয়ত টাকা পয়সা ওড়ায়। মায়ের কাছ থেকে চায়। বাবার সাথে রাগারাগি করে। কারন সে তার বান্ধবীকে নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরতে যেতে হয়। খেতে যেতে হয়।
ফরিদ সাহেব সবকিছু ঠিক রাখতে হিমশিম খেয়ে যান। একসময় এসে বুঝতে পারেন তার এই টাকায় চলছে না। এক বন্ধুর কাছে জানতে চান কী করা যায়?
বন্ধু নানান রকম বুদ্ধি দেয়। টিউশনি করতে, ফেক্সিলোডের দোকান দিতে। কিছুই হয় না।
অবশেষে একজন বুদ্ধি দেয়, মোটরসাইকেল চালান। এখন এটা দিয়ে আয় করা যায়।
ফরিদ সাহেব বললেন, আমি চালাতে পারি। ড্রাইভিং লাইসেন্সও করিয়েছিলাম। কিন্তু আমার তো বাইক নাই।
লোকটা বলে আমি যোগাড় করে দেবো।
তার বিষয়টা ভালো লাগে। সে আগে চালাতো। সে পারবে। এটা মজার কাজ।
ফরিদ সাহেব নিজের কাজের রুটিন বদলালেন। দিনে টাইপ করেন, বিকেল থেকে রাত অবধি বাইক চালানন। যাত্রী আনা নেওয়া করেন অ্যাপসের মাধ্যমে।
এভাবে চলতে থাকে। বাসায় বলেন, টাইপিংয়ের কাজ বেশি তাই আসতে রাত হয়।
একদিন এক যাত্রী কল দিলো। তিনি বাসায় চলে যাবার জন্য অ্যাপস বন্ধ করছিলেন। কিন্তু তিনি যেদিকে যাবেন সেদিকের পেসেঞ্জার দেখে রাইড অ্যাকসেপ্ট করলেন। যাত্রীর লোকেশন অনুযায়ি গিয়ে তিনি যেনো আকাশ থেকে পড়লেন। তিনি হেলমেট খুলতে চাননি। কিন্তু কিছু করারও নেই। কথা বলতে হবে। তিনি হেলমেট খুললেন। সামনে তার ছেলে। তার যাত্রী। সেই কল দিয়েছিলো।
ছেলে তাকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ল। তিনি শক্ত হয়ে বাইকের উপর বসে রইলেন।
ছেলে নিজের ভুল বুঝতে পারে। সামনে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে। কান্নায় ভেঙে পড়ে বাবা তুমি আমার জন্য এতো কষ্ট করো। আর আমি কী করি। আমাকে মাফ করে দাও।
ফরিদ সাহেব কিছু বলতে পারছেন না। তিনি মনে মনে টাইপ করছেন, কারো উপর আমার কোনও রাগ নেই। জীবন আমাকে রাগ করতে শেখায়নি।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “টাইপিস্ট

  1. খুব ভালো লাগলো। শিক্ষণীয় বার্তা বহনকারি গল্প।

Leave a Reply to soumitra Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *