শেয়ালের দুঃসাহসিকতা
রূপান্তর: মোস্তাফিজুল হক

সম্পাদক ও ইংরেজি সংকলক: অ্যান্ড্রু ল্যাং, স্কটল্যান্ড
মূল গল্প: ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ অ্যা জেকেল’ (আফ্রিকান রূপকথা)
কোনো এক সময় এমন একটা দেশ ছিল, যে দেশ বহুরকম বন্য প্রাণীতে ঠাসা ছিল। এককালে সে দেশের এক বনে এক খেঁকশেয়াল ও সজারু বাস করত। এরা একে-অপরের প্রতি বিদ্বেষী হলেও দু’য়ে মিলে দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিল। তাই প্রায়শই এদেরকে একসাথেই চলতে দেখা যেত।
একদিন বিকেলে তারা একসাথে রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছিল, খেঁকশেয়াল চিৎকার করে বলল:
‘এই তো একটা ঠাসা ভুট্টার গোলা! চলো, আমরা কিছু খেয়ে নিই।’
‘এসো, তবে তাই হোক’- জবাবে সজারু বলল।
ওরা গোলাবাড়িতে ঢুকেও গেল। এরপর যতটুকু খাওয়া যায় খেয়ে নিলো।
শেয়াল জুতা পরেছিল। যাতে কোনও শব্দ না হয়, তাই সে জুতো হাতে নিয়ে উঁচু রাস্তায় উঠে এল। কিছুটা পথ পাড়ি দিতেই তাদের সাথে এক চিতাবাঘের দেখা হয়ে গেল। বাঘটা তাদের থামিয়ে বিনয়ের সাথে সালাম দিয়ে বলল:
‘আগবাড়িয়ে কথা বলায় আমাকে ক্ষমা করবে। তোমার জুতোর প্রশংসা না করে উপায় নেই। যদি আপত্তি না করো, এগুলো কে তৈরি করেছে, তা জানতে পারি কি?’
শেয়াল জবাবে বলল, ‘হ্যাঁ, আমারও ধারণা এগুলো সত্যিই সুন্দর। তা এগুলো আমি নিজেই তৈরি করেছি।’
‘তুমি কি আমাকে এরকম একজোড়া জুতো বানিয়ে দিতে পারবে?’ চিতা অধীর আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইল।
শেয়াল বলল, ‘আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করব। তবে আপনি অবশ্যই আমাকে একটি গাভি মেরে দেবেন। ওটার মাংস খেয়ে চামড়া ছাড়িয়ে জুতো তৈরির কাজে নিয়ে যাব। এরপর আপনার জন্য জুতো তৈরি করব।’
চিতাবাঘ ফুলতে লাগল। একঝাঁক গোরুর পাল থেকে সে একটাকে আলাদা করে রাখল। সুযোগ বুঝে ওটাকে তখনই হত্যা করল। তারপর চিৎকার দিয়ে শেয়াল ও সজারুকে শিকারের স্থানে হাজির করল। শেয়াল ও সজারু দ্রুতই মরা গাভির চামড়া ছাড়িয়ে শুকিয়ে নিলো। এতে করে ওদের একটা মহাভোজও হয়ে গেল। রাত না হতেই তারা ভালো একটা ঘুমও দিয়ে নিলো।
পরদিন ভোরে শেয়াল আগেভাগে উঠে জুতোর কাজ শুরু করল। চিতাবাঘ বসে থেকে সানন্দে তা দেখতে থাকল। অবশেষে কাজ ফুরলো আর শেয়াল গা টানা দিয়ে দাঁড়াল। তারপর সে বলল, ‘এবার এগুলো রোদে শুকোতে দিন। কয়েক ঘণ্টা পর এগুলো ব্যবহার উপযোগী হবে। তবে আগেই পরার চেষ্টা করবেন না। এতে খুব অস্বস্তি বোধ করবেন। সূর্য এখনো মাথার উপর খাড়াই রয়েছে, তাই আমাদের অবশ্যই কাজ চালিয়ে যেতে হবে।’
চিতাবাঘটা যখন যে যা-ই বলত, তা-ই বিশ্বাস করত। তাই শেয়ালটা যা বলল, ঠিক তেমনটাই করল সে। দুই ঘণ্টা পর সে তার থাবায় জুতো এঁটে নিলো। সে তার সামনের থাবা প্রসারিত করল আর গর্বের সাথে অবাক হয়ে তাকাল। তবে সে যখন হাঁটার চেষ্টা করছিল, তা ছিল আর এক গল্প। জুতো জোড়া এতটা শক্ত ও দৃঢ় ছিল যে, তার প্রতিটা পদক্ষেপই তাকে অস্থির করে তুলছিল। শেষ পর্যন্ত চিতাবাঘটা সেখানেই থেমে রইল, আর সে সত্যি সত্যিই কাঁদতে লাগল।
খানিক পরে ছোটো ছোটো তিতিরেরা অসহায় চিতার কান্না শুনে কী ঘটেছে, তা জানতে এগিয়ে এল। চিতাটা কখনও ওদেরকে রেখে রাতের খাবার খেত না। তাই তিতিরগুলোও তার সাথে সবসময় বেশ ভালোই বন্ধুসুলভ সম্পর্ক রাখত।
‘আপনার ব্যথা লাগছে, বুঝি?’ একটা তিতির পাখি বলল। ওরা চারপাশে ওড়াউড়ি করে বলল, ‘আমরা কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?’
‘ওহ, এটা শেয়ালের কীর্তি! সে এই জুতো তৈরি করে দিয়েছে। এটা এতটাই দৃঢ় আর আঁটসাঁট যে, এতে আমার পায়ে চোট লাগছে। ফলে আমি পা ফেলতে পারছি না।’
‘ধৈর্য ধরে শুয়ে থাকুন। আমরা জুতো নরম করব’- ছোট্ট তিতির পাখিটা বলল।
তিতির তার ভাইদেরকে ডেকে নিয়ে অদূরে ঝরনার কাছে চলে গেল। এরপর তারা তাদের ঠোঁটে করে জল এনে জুতোর উপরে ঢালল। শক্ত চামড়া নরম না হওয়া পর্যন্ত তারা জল ঢালল। এতে বাঘ তার পা ফসকাতে সক্ষম হলো।
‘ওহ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ’ বলেই বাঘ আনন্দে কেঁদে ফেলল।
‘আমি আজ নিজেকে সৃষ্টির ভিন্ন কিছু অনুভব করছি। এবার আমি সেই শেয়ালের খোঁজে যাব। আমি আমার ঋণ পরিশোধ করব’- বলেই বাঘটা বনের গভীরে ঢুকে গেল।
শেয়ালটা ছিল খুবই চতুর। তাই সে আগপাছ আর উপরে-নিচে খেয়াল রেখে চলত। সুতরাং কীভাবে ওটার খোঁজে এগিয়ে যাবে, চিতার পক্ষে সে উপায় খুঁজে বের করাও অনেকটাই জটিল। শেষ পর্যন্ত শত্রু যখন তার নজরে এল, সে মুহূর্তে শেয়ালও তার জমকে দেখতে পেল। চিতাবাঘ জোরে একটা গর্জন করল, আর তা সামনে ছড়িয়ে পড়তেই চতুর শেয়াল খুব দ্রুত ঘন জঙ্গলে ঢুকে গেল। শেষ পর্যন্ত চিতা আর তাকে খুঁজে পেল না।
চিতাবাঘ নিজের ব্যর্থতায় খুবই বিরক্ত হলো। সে আগের চেয়েও বেশি রেগে গেল। কী করা উচিত তা ভেবে সে খানিকটা সময় শুয়ে রইল। চিতা যখন এসব নিয়ে ভাবছিল, তখন এক বুড়ো লোক তার নজরে এল।
‘আহ্! বাবা, বলুন তো খেঁকশেয়ালটা আমার সাথে যা করেছে, আমি তার ঋণ কীভাবে শোধ করতে পারি’ বলেই সে আর দেরি না করে বুড়োকে পুরো ঘটনা জানাল।
‘আমার পরামর্শ গ্রহণ করলে একটা বুদ্ধি দিই,’ বলেই বুড়ো বলে চললেন: ‘তুমি একটা গোরু মেরে বনের সমস্ত শেয়ালকে ভোজের নিমন্ত্রণ করবে। ভোজ চলাকালে খেয়াল করবে আর দেখবে যে, বেশিরভাগ শেয়াল ওদের খাবারের দিকে নজর রাখছে। এদের মধ্যে কেউ যদি তোমার দিকে নজর দেয়, তবে বুঝে নেবে ওটাই সেই বিশ্বাসঘাতক।’
চিতার শিষ্টাচার সর্বদাই উত্তম। তাই বুড়োকে ধন্যবাদ জানাল। চিতা বুড়োর পরামর্শ অনুযায়ী গোরু মেরে শেয়ালদের ভোজে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানাল। আমন্ত্রণ পেয়ে সমস্ত শেয়াল হুমড়ি খেয়ে পড়ল। ভোজে অংশ নিতে সেই পাজি শেয়ালটাও এল। কিন্তু চিতা কেবল একবারই তাকে দেখতে পেয়েছিল। তাই ওটাকে বাকিদের থেকে আলাদা করতে পারল না।
যাহোক, সকল শেয়াল ঝড়ে ভূপাতিত একটা গাছের ডালপালায় জায়গা নিয়ে মৃত গাভীর চারপাশে বসে গেল। সবাই তাদের খাবার খেতে শুরু করল। প্রত্যেক শেয়াল তার নিজ নিজ মাংসের টুকরোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখল। তবে তাদের ভেতরে কেবল একটা শেয়ালকেই অস্বস্তিকর দেখাচ্ছিল, আর থেকে থেকে নিমন্ত্রণকারীর দিকে তাকাচ্ছিল। চিতা এটা লক্ষ্য করল এবং হঠাৎ করে অপরাধীর কাছে চেপে লেজ টেনে ধরল। কিন্তু আবারও সেই চটপটে শেয়ালটা ছুরি দিয়ে সে তার লেজটাকে কেটে জঙ্গলে চলে গেল। তারপর দলের বাকিরাও চলে গেল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে চিতা দেখতে পেল, সে নিজে ছাড়া আশেপাশে আর কেউ নেই।
ফলাফল কী ঘটল, তার খবর জানতে আবারও বুড়ো এলেন। চিতা বুড়োকে দেখেই বলল ‘এখন আমি কী করতে পারি?’
বুড়ো বললেন, ‘সত্যিই এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। তবে আমি জানি, তুমি তাকে কোথায় পাবে। এখান থেকে প্রায় দু’মাইল দূরে একটি তরমুজের বাগান আছে। শেয়ালেরা তরমুজ খেতে খুব পছন্দ করে। আমি নিশ্চিত যে, ওটা তরমুজ খাবে বলে সেখানেই গিয়েছে। সেখানে যদি কোনো লেজহীন শেয়াল দেখতে পাও, তবে ধরে নেবে ওটাই তোমার খুঁজে চলা সেই শেয়াল।’
চিতাবাঘ বুড়োকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার নিজ গন্তব্যে রওনা হলো।
শেয়ালও ঠিকই অনুমান করেছিল যে, বুড়ো ওর শত্রুকে কী পরামর্শ দিতে পারে। তাই তার সাথীরা যখন অকুণ্ঠচিত্তে বাগানের রোদ ঝলমল কোণে বসে সবচেয়ে পাকা তরমুজ খাচ্ছিল, তখন সে পেছনে ঘাপটি মেরে সবার লেজ বেঁধে চলছিল। তার কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে কানে ডাল ভাঙার শব্দ এল। অমনি সে চিৎকার দিয়ে বলল: ‘তাড়াতাড়ি! তাড়াতাড়ি পালাও! বাগানের কর্তা এসেছেন!’
সমস্ত শেয়াল উঠে গিয়ে লেজহীন শেয়ালের কথায় দৌড়ে পালাল। তবে লেজগুলোকে ফেলে রেখেই যেতে হলো ওদের। এখন আর চিতা কীভাবে চিনতে পারবে যে, কোনটা তার শত্রু?
চিতা বুড়োকে দুঃখের সাথে বলল, ‘ওদের কারোরই লেজ নেই। আমি ওদেরকে শিকারের নিশানায় রেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। ওদেরকে একা পেলেই আটকে রেখে রাতের খাবার সেরে নেব।’
সজারু এতসব অদম্য অভিযানের কোনোটিতেই অংশ নিতে পারেনি। তবে সকল বিপদ কেটে গেলে সে তার শেয়াল বন্ধুর খোঁজে বের হলো। ভাগ্যক্রমে সজারু শেয়ালকে তার বাড়িতেই পেয়ে গেল।
শেয়াল সানন্দে বলল, ‘ওহ, তুমি! লেজ হারানোর আগে তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল। আমাদের সবাই লেজ হারিয়ে ফেলেছে; তবে এটা কোনো ব্যাপার না! আমার খিদে পেয়েছে। ওই যে, ওই ওইখানে রাখাল বসে আছে- চলো, তার কাছে গিয়ে তাকে একটা মেষ বিক্রি করতে বলি।’
সজারু বলল, ‘হ্যাঁ, এটা উত্তম পরিকল্পনা।’ তারপর সজারু ছোট্ট পায়ে থপথপ করে শেয়ালের দেখানো পথ ধরে দ্রুত হাঁটতে শুরু করল। রাখালের কাছে পৌঁছেই শেয়াল ওর সামনের পা থেকে থলেটার গিঁট খুলে মেষের দরদাম করতে লাগল।
রাখাল বলল, ‘শুধু আজকের দিনটা অপেক্ষা করতে হবে ভাই। আগামীকাল আমি তোমাকে সবচেয়ে বড়ো মেষটাই দেবো- যা আগে কখনও দেখনি। আর ওটা কি না সবসময় পালের বাকিদের থেকে কিছুটা দূরে গিয়ে ভোজ সারে- তাই ওটাকে ধরতে আমার বেশখানিকটা সময় লাগবে।’
জবাবে শেয়াল বলল ‘আচ্ছা, যদিও বেশ ক্লান্ত, তবুও মনে হয় অপেক্ষাই করতে হবে।’ তারপর দুই বন্ধু চমৎকার একটা শুকনো গুহার খোঁজে বের হলো- যেন ওদের রাতটা আরামদায়ক করে তুলতে পারে।
শেয়াল ও সজারু চলে যাবার পর মেষপালক একটা মেষকে মেরে ওটার চামড়া ছুলে পোষা ডালকুত্তার দেহে শক্ত করে বাঁধল। তারপর গলায় একটা দড়ি বাঁধল। এরপর ডালকুত্তা ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে শুয়ে গেল।
সূর্য তখনও ততটা আলো ছড়ায়নি। চতুর রাখালের মেষরূপী ছদ্মবেশী ডালকুত্তাটা শেয়াল ও সজারুকে খুব বেশি আকর্ষণ করতে থাকল। ওরাও রাখালকে ডেকে বলল, ‘এই যে, উঠুন, মেষটা দিন। সমস্ত রাত উপোষ থেকে আমাদের খুব খিদে পেয়েছে।’
রাখাল হাইতুলে চোখ কচলে তাকাল। তারপর বলল, ‘ওই যে গাছের সাথে বাঁধা আছে; যাও, ওটাকে নিয়ে যাও।’
রাখালের কথামতো ওরা গাছের কাছে চলে গেল। তারপর দড়ির বাঁধন খুলে ওরা যে গুহায় রাত কাটিয়েছে, ডালকুত্তাকে টেনে টেনে সেখানেই নিয়ে গেল। গুহায় পৌঁছে শেয়াল সজারুকে বলল, ‘মেরে ফেলার আগে আমাকে দেখতে দাও- ওটা তৈলাক্ত বা কাহিল কি না।’
শেয়াল ওটার কিছুটা পেছনে গিয়ে দাঁড়াল, যাতে করে সে আরও ভালো করে পশুটাকে পরীক্ষা করতে পারে। একবার তাকিয়ে আরেকবার মাথা ঘুরিয়ে এক বা দুই মিনিট দেখে গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে বলল:
‘যথেষ্ট নাদুসনুদুস; একদম খাসা একটা মেষ।’
সজারুটা কখনো কখনো কারোর কল্পনার চেয়েও বেশি বুদ্ধির পরিচয় দিত। তাই ওটা বলল:
‘বন্ধু আমার, তুমি বাজে বকছ। ওটা ভেড়ার চামড়া। ওটার নিচে একটা থাবা উঁকি দিচ্ছে।’
‘না, ওটা ভেড়া’- শেয়াল আবারও তা-ই বলল। ওর এরকম বলার কারণ হলো, শেয়াল তার নিজের চেয়ে আর কাউকে বেশি চালাক ভাবতে পছন্দ করে না।
সজারু বলল, ‘আমি ওটাকে দেখে নেবার সময় তুমি দড়িটাকে ধরো।’
ভীষণ অনিচ্ছাসত্ত্বেও শেয়াল দড়ি ধরল। সজারু ডালকুত্তার চারপাশে ধীর পায়ে হাঁটল। থাবা ও লেজ দেখে বেশ ভালো করেই চিনতে পারল যে, ওটা ডালকুত্তা- যা কি না ভেড়া নয়, তবুও রাখাল ভেড়া বলেই বিক্রি করেছে। কী ঘটবে তা বুঝিয়ে বলার মতো নয় বলে সজারু নিজেকে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্ত রাখার সংকল্প করল।
‘ওহ! হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছ। তবে আমি আগে পিপাসা না মিটিয়ে কখনও নাস্তা খেতে পারি না। শালবন ঘেঁষে বয়ে চলা ঝরনার জল দিয়ে আগে তিয়াস মেটাব, তারপর নাস্তার প্রস্তুতি নেব।
সজারু যতটা সম্ভব দ্রুতগতিতে ছুটে চলল। শেয়াল বলল, ‘বেশিক্ষণ থেকো না।’ তারপর সে সজারুর অপেক্ষায় একখণ্ড পাথরের পাশে শুয়ে রইল।
ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় কেটে গেল। ঝরণাধারা থেকে সজারুর ফিরে আসার কোনও নাম নেই। তারপর আরও সময় পার হয়ে গেল, তবুও সজারুর ফেরার কোনও নমুনা দেখা যায় না। বাস্তবতা হলো, সজারু গাছের ছায়ায় উঁচু ঘাসের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে।
দীর্ঘ কালক্ষেপণে শেয়াল অনুমান করল যে, কোনও কারণে তার বন্ধুটি পালিয়ে গেছে। তাহলে আর বন্ধুর সাথে নাস্তা করার অপেক্ষায় থাকা উচিত নয় বলে মনে মনে দৃঢ় পণ করল। শেষে সে বেঁধে রাখা ডালকুত্তার কাছাকাছি চলে গেল।
শেয়াল ডালকুত্তার দড়ির গিঁট খুলে দিয়ে ওটার পিঠে ওপর ঝাপিয়ে পড়ে মরণ কামড় বসাল। তবে সে বেশ মৃদু কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল এবং এরকম আওয়াজ কখনও কোনো মেষের গলা দিয়ে বের হয় না।
শেয়াল বিদ্যুৎ তরঙ্গের মতো ঝাঁকুনি দিয়ে দড়িটা ফেলে দিয়ে সমতল মাঠে দুর্বার গতিতে ছুটে চলল। পা লম্বাটে হলেও ডালকুত্তার পা আরও লম্বাটে। ফলে কুত্তাটা শিগ্গির শিকারকে বাগেও নিয়ে এল। শেয়াল লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও সামর্থ্যে মোটেও মিল নেই। ফলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই নাস্তানাবুদ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। এরপর ডালকুত্তা শান্ত ভঙ্গিতে মেষপালকের কাছে ফিরে গেল।
******************
বাংলা রূপান্তর: মোস্তাফিজুল হক
সম্পাদক ও ইংরেজি সংকলক: অ্যান্ড্রু ল্যাং, স্কটল্যান্ড
মূল গল্প: ‘দ্য অ্যাডভেঞ্চারস অফ অ্যা জেকেল’ (আফ্রিকান রূপকথা)
বই পরিচিতি: ‘দ্য অরেঞ্জ ফেয়ারি বুক’
৩৩টি গল্পের ১৬ নং গল্প, পৃষ্ঠা: ১৬০-১৬৬
প্রকাশক: লংম্যান্স, গ্রিন অ্যান্ড কোম্পানি
লন্ডন, যুক্তরাজ্য। প্রকাশকাল: ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন