অমিয় অমৃত্যু

অমিয় অমৃত্যু
রওশন ঝুনু

অন্ধকারের ছায়ার মতো কে যেনো দাঁড়িয়ে থাকে
সারক্ষণ সামনে, পেছনে, চারপাশে!
কি অসম্ভব চেনারূপ, চেনা মগ্নতা তৃষিত
তবুও চমকে উঠি অচেনা অবাক আভরণে!
বুকের ভেতর বয়ে উঠি অন্য এক তপ্ত শীতল বিদ্যুৎ;
জমাট স্তব্ধতা গলে গড়িয়েই, মুহূর্তে শুকিয়ে উঠি
বরফের জল, বরফ শরীরে…

থেমে আছি ফল্গুধারা, প্রবাহের প্রতিশ্রুত আদি থেকে!
সুদীর্ঘ অতিত হতে, অনন্তের যাত্রা পথে যেতে যেতে,
হাতের মুঠোর মধ্যে, থেতো জোনাকীর মতোন জীবন
যদি মৃত্যুর পরও জ্বলতেই থাকে, তাতেই বা কতোটা সময়
বেঁধে রাখা যায় সময়ের ফ্রেমে!
কতো সে পুরোনো ঘুণপোকা প্রেমে কেটে গেছে প্রার্থীত প্রহর,
জীবনের অনিবার্য সুর, সুখো-স্বপ্নজাল!
তবু এই নিরন্তর নিঃসঙ্গের চারপাশে, ছায়া তবে কার!
কার ভালোবাসার মতো কিনার, নদীকে ডাকে জলের ভাষায়!
তারই সুগন্ধ বুকে নিয়ে শূন্যমাঠে,
চিরকাল তাই একাকী নিঃশব্দে হাঁটে
কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের অপরাধ, ভুল পিপাসার পাপ!

এই যে স্বপ্ন, একপেশে একা সে আমার,
এই স্বপ্নভঙ্গ, সে-ও আমারই!
এই শূন্যতা, হাহাকারও একলা আমার
এই বীজ বপনের দুঃখ, ফসলের দুঃখ
এই অ-সুখের দুঃখ, বেদনা ব্যর্থতা,
যতো পরাজয়, গ্লানি সবই আমার
একান্ত সম্পদ আমার নিজস্বতা…

পরিতৃপ্তি যদি কোনোদিন আসে, তারও কারণ হবো আমি!
যদিও মানুষের জীবনে পরিতৃপ্তি আসে নাই কোনোদিন, জানি
যদি না-ই আসে, সে-ও হবে না আমারই দোষে…!

পথের শরীর পায়ে দ’লে, যে পথিক চলে যায় বহুদূরে,
তারই পা থেকে খ’সে পড়া ধুলিকণা, পড়ে থাকে ধুলারই ভীড়ে!
তার দায়ভার কিছুতেই পথিকের নয়, সে তো আমি জানি
তবু কোনো দুই চোখ পথিকের পথোপানে খুব চেয়ে রয়!

আমার অচোখ, অসীমানা জুড়ে, ঘুরে,
ফিরে আসে ফের! ফিরে এসে থেকে যায়
অধরা স্বাপ্নিক সেই ছায়া!
সে কি সত্যিই কোনো তুমি! নাকি আমারই মায়া!

যে তোমাকে চেয়েছি যেভাবে, গভীর নম্রতায়
যে নিবিড় স্পর্শ ও স্পর্ধায়,
তার কিছুই কি তোমার মতো সে!
সে কি অবিকল আমারই মতো নয়!
আমারই বিকল বাকলে গড়া, স্বপ্ন আমারই!

তবু এই যে অন্ধকারের নিজস্ব আলোর ভেতর থেকে
অন্য এক অস্তিত্বের ছায়া এসে, টোকা দেয় হৃদয়ে আমার;
চির বিরহ যে সুরে বেজে ওঠে হৃদপিণ্ডকড়া
সেকি আক্ঙ্ক্ষা-কাঙাল পুনঃ শূন্যতার
বৃত্তবিনির্মাতা আপন বিমূর্ত্তি নয়!

চিরচেনা বেশে অচেনার ছদ্মবেশ, ক্লান্ত করেছে আমাকে!
যে তোমাকে চেয়েছি সুদীর্ঘ সাধে, সেই তুমিই বা কে,
তা-ই কি জেনেছি কখনো! জানিনি তা!
নিজেকেই তো জানিনি; জানি না কী চাই, কেনো চাই!
তবুও চেয়েছি, তবুও তা চাই…
শুধু জানি, যতোসব বুনেছি ভুলের বীজ,
বীজ থেকে পরিপক্ক ফসলে ভরেছি বৃত্তগোলা!

এই মায়া, আকুলতা, এই হৃদস্পন্দন, গভীর ক্রন্দন,
এই আরাধনা, সূক্ষ্ম বৃশ্চিক দংশন হয়ে নীল করে আমাকে…
তবু এই অতি যত্নে, ধীর মৃত্যুর ভেতর থেকে উঠে এসে
ফেনায়িত মুখ, চোখ মেলে তাকানোর অবশেষ শক্তিটুকু দিয়ে
নির্লিপ্ত নরম চেয়ে দেখি, সে-ই ছায়া
যার মুখে লেগে আছে পৃথিবীর তাবৎ মায়া, সব ভালোবাসা…
নিশ্চিত অমৃত্যু জেনে আমি তবু
কি ভীষণ ভালোবাসি, এই ভুল বিষ!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *