দিলারা হাফিজ
প্রিয় মাতা ও ভগ্নীগণ, আহা, এই সখিজনমের কথা কিভাবে বোঝাই, আপনারা সকলেই
জানেন, আপনাদের মতো আমারও অসমতল বুকে একজোড়া উদাসীন পর্বত আছে দেখতে রোদের
স্তনের মতো ঠিক, তবে বয়সের কারণে সেই আরণ্যক দীপ্তি আর যে অবশিষ্ট নেই, তা আপনারাও
ভালো জানেন— এক্ষেত্রেও জলের মতো সমতা আমাদের, উনিশও নয়, বিশও নয়। তবে, কখন
কিভাবে সে বিধুমুখি আপনার/ আমার শরীরে নিজের দখল বুঝে নিয়েছে, কেমন করে বলি? নতুন এক
অচেনা বাঁশির সুরে আমাকে সে চঞ্চল করেছিলো অঞ্চলের বিমুগ্ধ নেশায়, নারীর নহবত হঠাৎ বেজে
উঠেছিলো অতুলনীয় এক বীণায়, শস্যের সীমানা মাড়িয়ে আকাশ এসে থপ করে হাত ধরেছিলো
আমার, সেই থেকে উতলা… আমরা প্রত্যেকে আজো বুকে হাত রেখে, সেই আখ্যান কীর্তন অনায়াসে
বলে দিতে পারি শীতলপাটির নকশা বুনতে বুনতে; মহুয়া-মদিনা আর ইয়াসমিনের মধ্যে খুব বেশি
তফাৎ নেই, সকলি বালিকা-প্রপঞ্চ, ইউরেনিয়ামের শক্তধাতুর মতো যখন সে ফুঁড়ে উঠছে আমারই
ত্বকের অন্ধকার ভেদ করে—- উদয়ের সেই অনুরাগে স্তনযুগলের যখন পবিত্র শিশুকাল, তখনও কত
বুড়োখোকা কিংবা কৌতুহলী তরুণ বৃন্দাবন কৌশলে অপবিত্র হাতে ছুঁয়েছে তার উদ্গমন, তা আমার
চেয়েও আপনারা কম কিছু জানেন না। আত্মীয় নামের বিশ্বস্ত ধর্ষক যারা অনায়াসে পরিবারের মধ্যে
আলো-বাতাসের মতো খেলে যায় দুরন্ত তাদের কপট অভিনয়গুণে চাপা পড়ে যেতো সেসব জীবন-
সংশয়ী অপরাধ; — তবু ভয়ে-ভীতিতে মাটির মূর্তি যেন, গোপন থাবার সেই নাম সাহস করিনি মায়ের
কাছে বলতেও। কেবলি মনে হতো, একথা জানালে, বাড়ন্ত সবুজ তৃণের মতো আমাকেই দুষবে, সভ্যতার
আলো নিভিয়ে দিলে আমাকেই ভাববে অসভ্য; নিম-তুতের মতো তাই নিজেরাই নিজের বিষ শোষণ
করে চেপে গেছি সবার অলক্ষে, তাই নয় কি? এসব আবর্জনার মতো উত্তেজনা শেষে সত্যি যখন
আপনারা পৌঁছে গেছেন, বাসর ঘরের চরণতলে—- তখন দেখলেন দুগ্ধপানরত এক প্রবল পুরুষ
কীভাবে আপনাকে জাগিয়ে তুলছে স্তনের বোঁটায় ঠোঁট রেখে, যেন মাতৃস্তন্য-পানে বিভোর বালক, তার
বীর্যজ্ঞান নিয়ে একদিন আপনি গর্ভবতী হলেন আত্মনিবেদনে— নিজের পুরুষটিকে পিতৃত্বের বন্ধনে
বেঁধে আত্মিক-স্বপ্নের জয় পতাকা উড়িয়ে দিলেন পরস্পরের অস্তিত্বের মূলে; নিজের ভালোবাসাকে
ভালোবেসে তারই প্রতিভাষ্য ভাসালেন জরায়ূজলে,কম তো নয়, সুদীর্ঘ নয়মাস আপনার অস্থি-মজ্জা-
রক্তের লবণ শুষে নিয়ে যুথবদ্ধ-স্তন স্ফীতকায় হতে হতে চমৎকার শিশুখাদ্যের দুই গোডাউন যেন—-
আপনিও মেনে নিলেন শরীরের এইসব কীর্তিনাশা রূপান্তর ২৮০ দিন পরে আত্মজের মুখপানে চেয়ে
স্তন্যদানের সেই প্রহেলিকা মুহূর্ত যেন লজ্জা-ভয়-আনন্দের শিহরণ উজিয়ে বিপুল বৈভবে ডেকে
উঠেছিলো মা, তৃষ্ণার ভিন্ন এক মাতৃরসায়ণে অভিষিক্ত আপনার দৃষ্টি, অনবদ্য এক পরিচয়ে
অলৌকিক সুখের বন্যা বয়ে গেলো আপনার শরীর-মনজুড়ে,আপনি এবার মা, সৃষ্টিকর্তার নিকট
প্রতিবেশী, উল্লসিত হলো নারীজন্মের পুষ্পার্ঘ্য। স্তনের বোঁটা চেপে ধরে শিশুর মুখে তুলে দিলেন
শালদুধ, যে দুধে আপনার শিশু বুদ্ধিগুণে মানবিক হবে— এই সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে দূর থেকে
বহুদূর.. আহা, এবার আপনি মাতা ও দয়িতা, দুই কক্ষে সমান যাতায়াতে দশভূজা আর হৃদয়ে দ্রৌপদী
সন্তানের পিতাও যে দুগ্ধপানরত অপর সন্তান… অলৌকিক এই আনন্দ লাভের অহম বিধাতা যাকে দেয়
নিঃসন্দেহে অসমতল বুকে তার বেদনাও অপার!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন