না জানি কোন গোপন-কথা গুঞ্জরিছে তোমার মনে। যে-কথাটি হয়নি বলা এ-জীবনে, ভেবেছিলাম সেই কথাটিই বলবে আজি আমার সনে। যে-কথাটি হয়নি বলা সঙ্গোপনে, ভেবেছিলাম সেই কথাটিই বলবে আমার কানে-কানে। তুমি বলবে আমায় মুঠোফোনে। ভরা নদীর বানের মতো, কবিগুরুর গানের মতো তুমি সেই কথাটি বলবে আমায় সুরে সুরে, গানে-গানে। আমি ভেবেছিলাম প্রণয়বাণী আকাশ থেকে ধরে আনি তুমি পৌঁছাবে আজ আমার প্রাণে।
বীজ থেকে চারা তোলার জন্য সবুজ ভগ্নির আগ্রহ চাই — কেশর সম্পর্কে ধারণার জন্য সোনালী ভ্রাতার উৎসাহ প্রয়োজন — মাতার বিষয়গুলো অতি প্রাচীন এবং পিতা তার স্পর্ধার অগোচরেই হীরকখনির অভ্যন্তরে… বর্ণনা মেনে পোড়ামাটি তার হিস্যা চেয়েছিলো সমন উল্টিয়ে দিয়ে সমতা চেয়েছিলো বন্টন বিসর্জনের মুখে অর্জনের ঢাল তুলতেই সীমানার চৌকিদার সম্মুখে দাঁড়ায় — খাদের কিনারেই যে ক্ষুধা! ফল থেকে বীজ করার জন্য ক্রাচে ভর দিয়ে যে তদারকি করে সে পরমায়ুর লোভ দিয়েছিলো, আর পরমায়ুতো আয়ুরই এক সংস্করণ জয় ও পরাজয়ের মধ্যবর্তী মৌলিক প্রশ্রয়! সবুজ কিংবা সোনালী যা–ই হোক তারও একটি মানে থাকা প্রয়োজন — কালো নিয়ে কোনো সমস্যা নেই তবে লালের মানে তো আফ্রিকা হতেই পারে!
যাকে ইচ্ছে কোতল করো যে দলে খুশি যাও আমাকে খোলা বারান্দায় একা থাকতে দাও। নদীর পাশে কে পড়ে আছে কারা ছেড়েছে ঘর… সকলে সব ভুলে যাবেই কয়েকদিন পর। শুকনো লাশ, রক্তহিম ওরা আসলে কে? বলতে নেই, সেটা বুঝেছি প্রচুর মার খেয়ে। বিদ্যুতের দৃশ্য দেখে বৃষ্টি চমকাল পাখি উড়ছে ; সামনে গাছ যে আসে সেই ভালো। কাস্তে নাকি ত্রিশূল নাকি গোপন তাস হাতে মারতে পারে সবাই ভেবে ঘুম আসেনি রাতে। স্লোগান তোলো, মঞ্চে ওঠো যে দলে খুশি যাও আমাকে কোনও বারান্দায় একা থাকতে দাও।
অনেকদিন পর মানুষের মতো সহজ অথবা জটিল হয়েছি আরবে, আমাকে ঘিরে এক জনবিরল সাম্রাজ্য, এক বুনো ইতিহাস ছিল সেদিন। চারদিকে অজস্র খসখসে বালি, আর প্রতিটি বালির গায়ে লেগে আছে গুঁড়োগুঁড়ো মনখারাপ; তার নিচে পুড়ে যাওয়া প্রশ্নচিহ্নে প্রতিদিন অসংখ্য মাথায় হিংস্রতা নামে। তখন ক্ষয়ে যাওয়া আকাঙ্খার মতো বয়ে চলেছি আমি, আব্রাহাম, আইস্যাক এবং জ্যাকবের ঈশ্বর ইয়াওয়ের বসতি থেকে প্রকাশ্যে তৈরি করেছি অন্য এক প্যাগান ঈশ্বরের প্রাসাদ। এখন গনিমতের পৃথিবী ভোগ করার সময় মারুফার কথা, তামান্নার কথা, কবিতার কথা বুঝতে পারি আমি। এদিকে তাকাও, দেখো, আমার দু’হাতে কত মৃত্যুর সৌন্দর্য লেখা।
চায়ের দেশের লোক গো আমি চায়ের দেশের লোক, হাওর-বাঁওড় জলের মানুষ গানে ভরা বুক। সবুজ কুঁড়ির দেশ গো আমার সবুজ কুঁড়ির দেশ, তোমায় রেখে তোমায় ভুলে কেমনে থাকি বেশ! তোমার কথা তোমার হাসি তোমার মনুর ঢেউ, জগৎ ঘুরে অনেক খুঁজে দেয়নি তো আর কেউ। বাইকা বিলে জলের পাখি জলের ভাসা নাও, কানাই ফুলে রোদের হাসি আর কি কোথাও পাও? শীতল পাটির দেশ গো আমার শীতল পাটির দেশ, তোমায় ছাড়া দূর বিজনে আউলাইন মাথার কেশ।
শরীর জানি না, ভেবেছ? ভেবেছ, কয়েকটি মুদ্রা- শ্বাসাঘাত এসবেই বাঁশি বেজে ওঠে, সুরে? ভেবেছ, কুসুমবনের বাতাস এলে, উদযাপন হয় সমস্ত? ভেবেছ, অবনত হওয়াই নিয়তি আমার? সাঁতার শিখেছি, জেনে রেখ। জেনে রেখ, শরীর মহাকাশ জানে। এ এক মুগ্ধবিদ্যা। শরীর, হংসধ্বনি বুনে দিতে পারে চামড়ার নীচে স্পর্শে স্পর্শে ভেবেছ, বুঝি না অসমাপ্ত রেখে উঠে যাওয়া? স্নানের দিন, মনে হয় পুরুষ সুখের কিছু নয় ! তাই ঠিকানা নিই নি আর সব সেরে ঘুমিয়েছি অকাতর শরীর মেটানো সহজ পিপাসার জল হওয়া, এখন কঠিনতর মনে হয়!
প্রেমিক তো কাপাস তুলো। হাওয়ায় ওড়ে… , সুযোগ পেলেই বসে প‘ড়ে কদমের ডালে। বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা পাকিয়ে পাকিয়ে টুপ্ টুপ্ ফেলে দেয় যুবতী যমুনার জলে আমাদের খিটখিটে সনাতনদাও নাকি কোনোকালে একদিন কদম–পাড়ায় বাঁশির ওস্তাদ ছিল, আজকাল বাজারের ব্যাগে যাবতীয় সবজির নীচে জ্যান্ত মাছ, যেতে যেতে গাছের পাতার ফাঁকের আয়নাতে দ্যাখে লালটুকটুকে পায়ের আঙুলে গেঁথে থাকা তীব্র বিষাদের তীর প্রেমিক তো কাপাস তুলো। হাওয়ায় ওড়ে…. প্রতিটি প্রেমিকের ভেতরে পাতা চোরাবালি দিয়ে ডুবে যায় এ পৃথিবীর এক ছেঁড়াখোঁড়া লোক
আমাদের সামনের রাস্তা দিয়ে এইমাত্র চলে গেল সাতখানা কাফনের কাপড়। ষ্ট্রেট শীতলক্ষ্যার দিকে। জল তাদের ঠেলে দিলো কিনারায়। তারও আগে আর একখানা কাফনের কাপড়, বয়সে কিশোর, …তরুণ হতে না হতেই আমাদের এই ভয়ংকর কাফন নগরীর এগলি ওগলি ঘুরে অবশেষে শীতলক্ষ্যার ব্রিজের ওপর থমকে দাঁড়ালো। ও আরো কিছু কাফনের কাপড় সহসা এখানে ওখানে উঁকি দিয়ে নিমেষে উধাও। মাঠে ঘাটে, গঞ্জে হাটে, রাত-বিরেতে কিংবা দিনের আলোয় এমন জাদুর খেলা দেখে দেখে এখন অভ্যস্ত নগরীর চোখ। এই যে দূরের ভাই ,আমরা আপনাকেও চাই আমাদের এই কাফন নগরীর জাদুদৃশ্যে আপনাকে স্বাগত জানাই।
১ সন্ত-সময়ের চালচিত্রে ছেয়ে আছে চতুর্দিক, আমি দেখে চলেছি একের পর এক শয়তানের বায়োপিক। ২ অন্তর্গত খরায় আছি ধু ধু অন্ধকার পরিণাম, এসো তবে এসো আজ ‘তুমি’ সুদূরের মেঘমশাল। ৩ অকূল আমার উপায় করবে যারা নিজেরাই তারা ছিন্নভিন্ন দিগ্বিদিক। পরমের মোক্ষ হয়ে বয়ে চলে শুধু এক রোদনের হ্রদ।
শালিক তাড়াতে গিয়ে উঠোনভর্তি ধানে আকণ্ঠ তলিয়ে গেছি রোজ তাই দেখি টেনে তুলছে দুপুরের ঢালে অগোছালো রোদ ছোট্ট পুকুরে কাঁধে ছুঁয়ে ঢেউ, কচুরিপানায় ছোট মাছেদের ব্যাকুল সাঁতার গরু চড়াতে গিয়ে ঘাসফুলের আদরে পালানে লুটিয়ে পড়েছি আর আমাকে মাতাল করেছে রসের হাঁড়িতে গর্ভবতী খেজুরের প্রকাণ্ড গাছ পলো নিয়ে কাঁধে পাড়ার লোকেদের হৈহুল্লোড়, হাঁক তোমাকে লিখতে গিয়ে সংসারের আয়ব্যয় এটাসেটা চাহিদা ভুলে লিখেছি এই পাতাঝরা আর মেহগনি ফলের বঙ্কিম ভঙ্গিমা তোমাকে শোনাতে গিয়ে গেয়েছি এই বাংলা আমার জীবনানন্দ… বাংলা আমার অনেক দামে কেনা
তোমার উত্তোলিত হাতখানা বলে দেয় আমরা এখন কতো সুখে আছি ! এ দেশ সোনার হবে, স্বাধীন হবে; তার জন্য- রক্ ত চাই রক্ত দিলাম, টেনে হিঁচড়ে সম্ভ্রমও কেড়ে নিলো জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করলো গ্রামের পর গ্রাম। তারপর- স্বাধীনতা পেলাম ঠিকই… অর্ধশতকের মোহনায় যখন দেশ যখন উন্নয়নের খৈ ফুটছে চারিদিকে শনৈঃ শনৈ যখন এগিয়ে যাচ্ছ পায়ে পায়ে হে আমার দেশ ! তখন কেন বাজে এতো করুন বাঁশি? তখন কেন কেউ থাকতে চায় না তোমার কোলে? দেশ ছেড়ে পালায় ছাত্র যুবক নারী শিশু? নানা ছল ছুতায় কেবল পালাতে চায় সকলেই? কোল ছেড়ে পালায় তারুণ্যের তারকাগুলো? তোমার সোনা মানিকগুলো, চুম্বক শক্তিগুলো…? বড়লোকের সন্তানতো একজনও ধরে রাখতে পারোনি তোমার ওম অঞ্চলে ! তারাতো আগে থেকেই এ দেশে থাকে না, খায় না, পড়ে না রোগ সারাতে চলে যায় বিদেশে- বিদেশেই নেয় জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ! তোমার জীর্ণদশায় সবাই নাক সিটকায়.. .. ভূমধ্য সাগরের ঠান্ডা নোনাজলে উত্থিত হাতে তোমার সন্তান চার আঙুল দেখিয়ে কি জানিয়ে দেয় চার মূল নীতি আর এখানে বেঁচে নেই ? এখানে নিরাপদ বাঁচার ঠাই নাই? এখানে সুখের আবাস কিংবা বেঁচে থাকার পরিবেশ নাই .. ..? গণতন্ত্র সমাজতন্ত্র ধর্মনিরপেক্ষতা জাতীয়তাবাদ নির্বাসিত কিংবা পলায়নরত আজ ? এ দেশের কোটি কোটি যুবকের মতো .. হে দেশ ! ভূমধ্যসাগরে যুবকের উত্তলিত হাত তুমি তাকাও, ইটা কি মুষ্টিবদ্ধ মিছিলের হাত ? দাবী আদায়ের ? না- খেয়ে পরে নিরাপদ বেঁচে থাকার ?